Monday, February 18, 2008

বদ্রিয়াঁকে ভুলে যাওয়া



বদ্রিয়াঁকে ভুলে যাওয়া
সিলভেরি লটরিঙ্গার/ জঁ বদ্রিয়াঁ
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .


সিলভেরি: নিটশে যেমনটা বলেছেন, দার্শনিক অবশ্যই ক্রিয়ার অর্থোদ্ধার করবেন। তিনি অবশ্যই সমাজের ভিতর একে অপরের সাথে বিবাদমান শক্তিগুলির সক্রিয়ভাবে মূল্যায়ন করবেন। অন্যদিকে, আপনি ঘোষণা করেছেন “সামাজিকতার শেষ (the end of social)” বলে। আপনি হাইপোথাইজ করছেন একটা জটিল বাস্তবতা একটা বিমূর্তায়নের ভিতর, শুধুমাত্র বিমূর্তায়নটাকে তাৎক্ষণিকভাবে অ-বাস্তবতায় পাঠিয়ে দেয়ার জন্যে। কিন্তু আপনি যদি সামাজিকটাকে ধরে নেন শূণ্যীকরণ এর একটা শূণ্য রূপ, তাহলে তত্ত্বের জন্য কি ভূমিকা আর থাকে?

বদ্রিয়াঁ: যদি সামাজিক কখনো বিরাজ করে, এটা সমাজের একটা প্রতিনিধিত্ব করে না বা কোন সদর্থক অর্থেও না; বরং থাকে বিষয়গুলির বাস্তবতার প্রতি একটা মোকাবিলা হিসাবে, একটা বিষাক্ত মিথ হিসাবে। জর্জ বাতালি এইভাবেই সমাজবিদ্যাকে দেখেছিলেন: সামাজিকতার একটা প্রকৃতি এবং সমাজের প্রতি একটা মোকাবিলা হিসাবে।

সিলভেরি: কিন্তু সামাজিক যদি এতোটাই ওজনহীন হবে, তাহলে মিথ কি আক্রমণ করে? আর কি কারণে করে?

বদ্রিয়াঁ: আমি স্বীকার করি যে, তত্ত্বের প্রশ্ন আমাকে বিরক্ত করে। আজকে তত্ত্ব কোথায়? এটা কি সম্পূর্ণভাবে সেটেলাইজড (satellized)? তত্ত্ব কি ঘুরপাক খাচ্ছে সেই এলাকাগুলিতে যার বাস্তব ঘটনাগুলি নিয়ে কিছুই করার নাই? বিশ্লেষণ কি?

যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি বিবেচনা করছেন যে, বাস্তব দুনিয়া বলে একটা ব্যাপার আছে, তত্ত্বের একটা জায়গা আছে, তর্কের খাতিরে বলা যাক একটা দ্বান্দ্বিকতামূলক সর্ম্পক; তাহলে তত্ত্ব এবং বাস্তবতা কোন একটা জায়গাতে এসে বিনিময় করা সম্ভব এবং এটাই হচ্ছে পরিচয়। এক্ষেত্রে, তাদের মধ্যে এখনো একটা যোগের জায়গা থাকে: আপনি দুনিয়াটাকে রূপান্তরিত করতে পারেন, আর তত্ত্ব দুনিয়াকে রূপান্তরিত করে . . .

আর এটা কখনোই আমার অবস্থান না। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে, এটা কখনোই আমার অবস্থান ছিল না। কিন্তু আমি এটাকে সূত্রবদ্ধ করতে সফল হইনি। আমার মতে, তত্ত্ব হচ্ছে পুরোপুরিভাবে বাস্তবের প্রতি একটা মোকাবিলা, মোকাবিলা দুনিয়াটার প্রতি টিকে থাকার জন্যে; প্রায়ই, এর অতিরিক্ত, ঈশ্বরের টিকে থাকার প্রতি একটা মোকাবিলা। ধর্ম, প্রথমদিকে, তার খারেজি পর্বে, সবসময় ছিল একটা অস্বীকৃতি - অনেক সময় ছিল একটা হিংস্র কিছু - বাস্তব দুনিয়ার প্রতি, আর এটাই তাকে শক্তি দিয়েছিল। পরবর্তীতে, ধর্ম হয়ে উঠেছে মীমাংসার একটা প্রক্রিয়া, একটা আনন্দ বা বাস্তবতার মূলসূত্রের চাইতে। ভালো কথা, এটা তত্ত্বের ক্ষেত্রেও সত্যি: একটা তত্ত্ব চেষ্টা করতে পারে তার নিজের সাথে বাস্তবের মীমাংসা করার জন্য। আর তারপর এখানে একটা মূলসূত্র আছে সক্রিয় বিরোধিতার, একটা সম্পূর্ণ অমিমাংসিতার, অনেকটা সাদা-কালো সক্রিয় বিরোধিতা। আপনি মোকাবিলার একটা অবস্থান বজায় রাখেন, যা অ-বাস্তবতার চাইতে ভিন্ন কিছু।

সিলভেরি: তারপরও, এটা কি তা-ই না যা আপনি করেন: কোন স্থিতিকে সীমাবদ্ধতার দিকে ঠেলে দিয়ে অ-বাস্তব করে তোলা

বদ্রিয়াঁ: কিন্তু আমি বাস্তবতার উপর কোন অবস্থানকে ধরে রাখি না। বাস্তব বলে কিছু নাই (
The real doesn't exist)। এটা হচ্ছে তত্ত্বের অনতিক্রম্য একটা সীমাবদ্ধতা। বাস্তবতা বিষয়সমুহের একটা বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান নয়, এটাই হচ্ছে পয়েন্ট যেখানে তত্ত্ব কিছুই করতে পারে না।

এটা আবিশ্যিকভাবে তত্ত্বের ব্যর্থতাকে তৈরি করে না। এই বাস্তব আসলে তত্ত্বীয় স্বপ্ন-সৌধের প্রতি একটা মোকাবিলা। যা-ই হোক, এই পয়েন্টটাতে, তত্ত্ব আর তত্ত্ব থাকে না, এটা নিজেই ঘটনা হয়ে উঠে। এখানে কোন বাস্তবতা নাই যার প্রেক্ষিতে তত্ত্ব হয়ে উঠতে পারবে ভিন্নমতালম্বী বা খারেজি। বরং, বস্তুর বস্তুনিষ্ঠতাকে আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন প্রশ্ন করা। এই বস্তুনিষ্ঠতা (
objectivity) কি? এই তথাকথিত “বাস্তব দুনিয়ায়”, ঘটনাগুলি কি ঘটে না একটা বিচ্যুতির মাধ্যমে, একটা ক্ষেপনাস্ত্রের বাঁকা পথের (trajectory) মতো, একটা বাঁক এ, যা কখনোই বিবর্তনপ্রক্রিয়ার রৈখিক বাঁকের মতো না? সম্ভবত আমাদেরকে প্রবাহমান স্তরগুলির একটা মডেল দাঁড় করাতে হবে, ভূ-কম্পন ঘটিত (seismic) পরিভাষাগুলিতে কথাবলার জন্য, বির্পযয়গুলির তত্ত্বে। এই ভূ-কম্পনই হচ্ছে আমাদের রূপ, এটা হচ্ছে অভিসম্বন্ধিক (referential) এর পিছলানো এবং সরে যাওয়া, অবকাঠামোর শেষটা। এখানে কিছু বাকি নাই শুধুমাত্র বদলের গতিশীলতা ছাড়া যা উদ্রেক করে খুবই শক্তিশালী, টাটকা ঘটনাগুলি। ঘটনাগুলিকে আর বিপ্লব হিসাবে দেখা যায় না, অথবা উপরকাঠামোর পরিণতিগুলি হিসাবে, বরং স্কিডিং এর ভূ-ভগস্থ ফলাফলাগুলি, ভেঙ্গে যাওয়া জায়গাগুলিতে যেখানে ব্যাপারগুলি ঘটে। স্তরগুলির মধ্যে মহাদেশগুলি একসাথে মিলে যায় না, তারা একে অন্যের নিচে এবং উপরে পিছলায়। এখানে রেফারেন্স এর আর প্রক্রিয়া নাই আমাদেরকে বলার জন্য যে, বিষয়গুলির ভূগোলে কি ঘটছে। আমরা শুধুমাত্র একটা জিওসিমেট্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে পারি। হয়তো এটা একটা সমাজ, একটা মানসিকতা, একটা মানদন্ড গঠন করার ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। বিষয়গুলি মুখোমুখি সম্মুখীন হয় না, তারা একে অপরকে ছাড়িয়ে যায়।

সবাই দাবি করে যে, “বাস্তব এর ভিতরে আছে”। কিন্তু বাস্তবতার স্বাদ সুস্পষ্ট নয়। বাস্তবে এর ভিতর কিছুই ঘটে না।

সিলভেরি: তাহলে আপনার জন্য, তত্ত্ব হয়ে উঠছে তার নিজস্ব এবং একমাত্র বাস্তবতা।

বদ্রিয়াঁ: একটা নির্দিষ্ট পয়েন্টে আমি অনুমান-অনুভব করি যে, বাস্তব এবং সামাজিক অনুশীলনগুলি বস্তুত আছে সেখানে, যা আমি শুরু করেছিলাম একটা ক্ষেপনাস্ত্রের বন্কিম পথে (
trajectory) যা ক্রমশঃ আরো বিচ্যুত হচ্ছে, হয়ে উঠছে অসদৃশ্য। বাস্তবতার এই জিক-জ্যাক লাইনটাকে ধরার চেষ্ট করাটা ভুল হবে; এটাকে আপনার শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। তারপর বাস্তবতার প্রতি সর্ম্পকের কোন অভিযোগ কোন একটা পক্ষে পড়ে; আমরা সম্পূর্ণভাবে স্বেচ্ছাচারী একটা পরিস্থিতিতে পড়ে যাই, কিন্তু এটা একটা অকাট্য অর্ন্তগত প্রয়োজনীয়তা।

সিলভেরি: আমি বিস্মিত হবো, যদি তত্ত্বের নিজের ভিতরই এক ধরণের আন্ঞলিক “পিছলে যাওয়া” না থাকে। যখন তত্ত্ব তার নিজের যুক্তি অনুসরণ করে, নিজেকে গুছিয়ে নিতে সমর্থ হয়, তখন তার অর্ন্তধান হয়। এর সিদ্ধিই হচ্ছে এর বিলোপসাধনে।

বদ্রিয়াঁ: হ্যাঁ, আমি সত্যিকারভাবেই এটা বিশ্বাস করি। তত্ত্ব (আমি এখানে বলছি আমি কি করেছি) কি উৎপাদন করে, একটা মডেল নয়, বরং একটা ইউটোপিয়ান, একটা ঘটনার রূপক প্রতিনিধিত্ব, এমনকি ঘটনা তার পুরো ক্ষেপনাস্ত্রের বন্কিম পথে (
trajectory) সম্পূর্ণতা পায়? আমি বিশ্বাস করি তত্ত্বের একটা গন্তব্য আছে, একটা বাঁক যা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। আপনি জানেন যে আমি সবসময় ধারণাগুলিকে দৃশ্যমান করি এবং তারপর আমি দ্রুত তাদেরকে অদৃশ্য করি। এটাই হচ্ছে খেলাটা যা সবসময় গঠিত হচ্ছে। কড়াকড়িভাবে বলতে গেলে, কিছুই অবশিষ্ট থাকে না একটা বিহ্ববলতার বোধ ছাড়া। যদি এই খেলাটা না থাকতো তাহলে হয়তো লেখালেখিতে অথবা তত্ত্বীয়করণে কোন আনন্দই থাকতো না।


সিলভেরি: তত্ত্ব, অদৃশ্য হওয়ার আনন্দ হিসাবে . . . এটা কি কিছুটা আত্মঘাতী নয়?

বদ্রিয়াঁ: এটা আত্মঘাতী, তবে একটা ভালো দিক দিয়ে। অদৃশ্য হওয়ার একটা শিল্প আছে, একটা পথ আছে তাকে উপযোজিত করার এবং একটা পবিত্রতার পর্যায়ে তৈরি করার । এটা তাই, যা আমি তত্ত্ব এর ক্ষেত্রে অর্জন করার চেষ্টা করছি।

সিলভেরি: তত্ত্ব উল্টা-বিপর্যয় ঘটায় (
theory implodes) ।

বদ্রিয়াঁ: তত্ত্ব একমাত্র তখনই উল্টা-বিপর্যয় ঘটায় যখন সে তার নিজস্ব অর্থকে আত্মস্থ করে, তারপর সে তার নিজের মুছে যাওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধিলাভ করে। সত্যিকারভাবে, আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে পিছনের দিকে যে অর্থগুলি আমরা তৈরী করছি। একটা শূণ্যতা সৃষ্টি করা সহজ নয়, একটা অন্তঃস্ফুটনের জন্য এককেন্দ্রিক জটলা গঠন করা। আর তাছাড়াও, তার চারপাশে বিপর্যয় থাকে। আমরা কি বাস্তব এর উল্টা-বিপর্যয় ঘটাতে পারি আত্মহনন এর পুরোটা পথ পরিভ্রমণ না করে? অন্যদের সাথে আমাদের সর্ম্পকের ক্ষেত্রে, আমরা ক্রমাগতভাবে অর্ন্তধান এর প্রক্রিয়াটাতে খেলছি, আমাদেরকে দুর্লভ করে তোলার মাধ্যমে না, বরং অন্যদেরকে মোকাবিলা করার মাধ্যমে আমাদেরকে পুনরার্বিভাব করার জন্য। এটাই হচ্ছে “প্রলোভন”: ছড়িয়ে যাওয়ার বা বিজয়ের কোন প্রক্রিয়া নয়, বরং খেলার অন্তঃস্ফুটনের প্রক্রিয়া।

সিলভেরি: আপনি আসলে তত্ত্ব প্রদান করেছেন যেভাবে জুয়ারীরা ক্যাসিনোতে যায়। মনে হচ্ছে আপনি ধারণাগুলি নিয়ে খেলতে গিয়ে দুষ্টামিভরা আনন্দ পান নিজেকে বিন্দুমাত্র জড়িত না করে যে এর ফলশ্র“তিতে আপনি হেরে যেতে পারেন। আপনি ঝাঁপিয়ে পড়েন একটা তত্ত্বীয় বস্তুতে - উদাহারণ হিসাবে ফুকো, একটা ঠান্ডা প্রেমের সাথে, এবং তাকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করেন তার নিজস্ব তৃষ্ঞা থেকে . . .

বদ্রিয়াঁ: অবশ্যই, বাজি ধরার ক্ষেত্রে কিছু আনন্দ থাকতে হবে, যা আসলে নবীত্বের কোন আনন্দ না অথবা আমি মনে করি, পূর্ণধ্বংসেরও না (ধ্বংস এর জন্য ধ্বংস করা)। সংক্ষেপে, একটা ন্যায়ভ্রষ্ট আনন্দ। তত্ত্বকে অবশ্যই খেলতে হবে একটা ভাগ্যের খেলা হিসাবে।

সিলভেরি: জুয়ার যেটা গোপন কথা, আমরা মানি যে, টাকা বলে কিছু নাই (
money doesn't exist)। তত্ত্বের ক্ষেত্রেও কি একই গোপন কথা সত্যের সাথে তার সর্ম্পক বিষয়ে?

বদ্রিয়াঁ: তত্ত্বের গোপন-কথা, অবশ্য যে, সত্য বলে কিছু নাই (
truth doesn't exist)। আপনি যে কোনভাবেই সত্যের মুখোমুখি হতে পারেন না, শুধুমাত্র কিছু উত্তেজনাকর যুক্তি দিয়ে খেলতে পারেন। সত্য গঠন করে একটা জায়গা যা কখনোই দখল করা সম্ভব না। পুরো স্ট্রাটেজীটা এটাকে দখল করা না বরং এর চারপাশে কাজ করা যাতে অন্যরা এতে ধরা পড়ে।

সিলভেরি: যদি তত্ত্ব কোনকিছু দখল করতে না পারে, এটা কি অন্তঃত প্রত্যাশা করতে পারে বা ত্বরান্বিত করতে পারে বিষয়গুলির বিপর্যয়ের রূপটাকে?

বদ্রিয়াঁ: ঘটনাগুলি সবসময় আমাদের আগে চলে, যেমনটা রিলকে বলেছেন, যে কারণে তারা সবসময় অনির্ণেয়। আমরা এটাকে কোনভাবেই এড়াতে পারি না যেহেতু ডিসকোর্স হচ্ছে রূপক (
metaphor) এর এলাকার একটা বিষয়। আমরা দ্ব্যর্থক অজ্ঞাতকে (ambiguous extrapolations) ব্যবহার করার জন্য দায়ী। যখন আমরা একটা সত্যের দাবি করি, তখন আমরা শুধুমাত্র অর্থের প্রভাবগুলিকে একটা বিদ্যমান মডেলের ভিতর চূড়ান্ত দিকে ঠেলে দিই।

সিলভেরি: আপনি নিজেকে সব ধরণের রেফারেন্স স্টিটেম থেকে বিচ্ছিন্ন করেছেন, কিন্তু রেফান্সশিয়ালিটি থেকে নয়। আমি বিশ্বাস করি না যে, আপনি যেটাকে বাস্তবের প্রতি মোকাবিলা বলে বর্ণনা করছেন - তা তত্ত্বের আভ্যন্তরীণ এর প্রতি। আপনি জেনোলজিক্যাল ভক্সিমাটাকে (ফুকো) সমালোচনা করেন নাই, অথবা লিবিনাল অবস্থানটাকে (গিলেজ দেল্যুজ, ফেলিক্স গুট্টেরী), আপনি তাদেরকে উপরের দিকে ছুড়ে ফেলেছেন। আপনি পুরোপুরিভাবে সদ্ব্যবহার করেন যে গতি তাদেরকে প্রাণবন্ত করে, তাদের ধারণাগুলিকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত অ্যাম্লিফাই করেন , তাদেরকে টেনে তোলেন আপনার নিজস্ব বিহ্বলতার ঘুর্ণিতে। আপনি তাদেরকে একটা অন্তহীন ঘূর্নাবর্তে স্থাপন করেন, যা লেভি-ত্রস্ত এর মিথগুলির প্রতি আচরণগুলির মতো, তাদেরকে একটু একটু করে নিজের নিঃশেষিত অবস্থার দিকে আগানো।

বদ্রিয়াঁ: এটা ঠিক আছে। তত্ত্ব শেষ হয়েছে (
exterminated)। এটার আর কোন পরিভাষা নাই। এটা এক ধরণের অর্ন্তধান।

সিলভেরি: তত্ত্বকে তার নিজের সীমাবদ্ধতার দিকে ঠেলে দেয়ার মাধ্যমে আপনি যা করেন তা হচ্ছে এটাকে অতি-বাস্তব করে তোলা। আপনি তত্ত্ব থেকে বের করে নেন যদি তার কোন মর্মবস্তু থাকে, এবং তারপর আপনি তাকে “ভুলে যান” যেমনটা একটা শরীরের ঝুলে থাকাটাকে পিছনে ফেলে যাওয়া। এমনকি আপনি বাস্তবের ভানও করেন না, আপনি ঈশ্বরের উকিল হিসাবে খেলেন, তত্ত্বের শয়তানী প্রতিভা হিসাবে। ফুকোর চাইতেও বেশি ফুকোডিয়ান, আপনি তার মাইক্রোফিজিক্সটাকে বাষ্পীভুত করেন; দেল্যুজ এবং গুট্টেরীর চাইতেও বেশি সিজো, আপনি তাদের পরিবর্তনপরম্পরাগুলির (
fluxes) মধ্যে দুই পা ফাঁক করে দাঁড়ান, তাদেরকে বিশ্রামের কোন জায়গা দিতে অস্বীকার করেন। আপনি অধিবিদ্যক নন, আপনি চান যে মানুষ আপনাকে গ্রহণ করুক একজন মেটা-থিওরেশিয়ান হিসাবে। তত্ত্বের একজন “স্টিমুলেটর” হিসাবে। আশ্চর্য নয় যে, তাত্ত্বিকরা আপনাকে অভিযুক্ত করে একজন উস্কানিদাতা এজেন্ট হিসাবে। আপনি তাত্ত্বিক নন, আপনি বাজে। আপনি তত্ত্বকে উপযোজিত করেন এবং এটাকে অনিশ্চিত করে তোলেন। আপনি এটাকে একটা ঐশ্বরিকতার ভিতর ফেলে দেন যার ভিতর দিয়ে আপনি দুনিয়াকে আপনাকে অনুসরণ করার স্পর্ধা দেখান।

বদ্রিয়াঁ: তত্ত্ব নিজেই একটা অনুকরণ। অন্তঃত যেভাবে আমি এটাকে ব্যবহার করি। অনুকরণ এবং মোকাবিলা, উভয়ই।

সিলভেরি: আপনি ধারণাগুলিকে ধরে ফেলেন তাদের নিজস্ব ফাঁদে - যার প্রতিটা নিশ্চিতিকে মুছে দেন আনুগত্যের মাধ্যমে। এটাই হচ্ছে “হাস্যরস” এর জায়গা যাকে দেল্যুজ তত্ত্বীয়করণ করেছেন। যদিও আপনি হাস্যরসকে তত্ত্বীয়করণ করেন নাই, আপনি তত্ত্বকে কৌতুককর করে তোলেছেন। আপনি গ্রহণ করেছেন অবোধ্য ঔদ্ধত্যকে যেখানে চাকর তার মনিবকে (তার বুদ্ধিচর্চাকারী মনিবদেরকে) চ্যালেন্ঞ করে, তাকে গুরুত্বপূর্নভাবে নেয়ার জন্য। আপনাকে ধোঁকাবাজ বলাটা বোঝাবে আপনার খেলাতে জড়িয়ে পড়া, কিন্তু আপনার চ্যালেন্ঞকে এড়িয়ে যাওয়া মানে আপনাকে একটা হাত ধার দেয়া। আপনি তাদেরকে “ভুলে যান” যাদেরকে আপনি প্রেতাত্মা বানিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু আপনি নিজেকে কখনো ভুলতে দেন না। এক্ষেত্রে আপনি হচ্ছেন একদম মাধ্যম (
media) এর মতো। কি আপনাকে অনুমতি দেয় এটাকে এত ভালোভাবে বোঝার জন্য, এটাই যে এর ভিতর আপনি নিজেও অর্ন্তভুক্ত। আপনারা উভয়েই একই খেলাটা খেলেন, উভয়েই একই স্ট্রাটেজীটা ব্যবহার করেন। আপনি মাধ্যমটি সর্ম্পকে বলেন না, মাধ্যমটি আপনার ভিতর দিয়ে বলে। যখনই আপনি আপনার তত্ত্বীয় পর্দায় হাজির হন, ইতিহাসের মহান মিথগুলিকে পরিণত করেন একটা সোপ অপেরা অথবা সিরিয়ালগুলিতে, যেমনটা লেভি-তস্ত্র হয়তো বলতেন। আপনি তাদেরকে টিভি “হলোকাস্ট” এর ভাগ্য ভাগ করার জন্য তৈরি করেন, যা আপনি খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন।৩

বদ্রিয়াঁ: আমি ইতিহাসকে অস্বীকার করি না। এটা একটা বিশাল খেলনা।

সিলভেরি: হ্যাঁ, যদি আপনি শিরিষের আঠার মতো পর্দার সাথে লেগে থাকেন, ইমেজগুলি দিয়ে চুষা হয়ে যান বা মুগ্ধ হন ইন্দ্রিয়বিলাসী পরিবর্তনগুলি দিয়ে।

বদ্রিয়াঁ: আমাদের এন্টি-গন্তব্য হচেছ মিডিয়া মহাবিশ্ব। আমি দেখি না কিভাবে এই মানসিক লাফটা দিতে হবে যা সম্ভব করে তোলবে ভগ্নাংশগুলিতে বা নিয়তির মতো এলাকাগুলিতে পৌঁছাতে যেখানে বিষয়গুলি সত্যিকারভাবেই ঘটছে। সম্মিলিতভাবে, আমরা আছি তথ্যের রেডিও-অ্যাকক্টিভ পর্দার পিছনে। এই পর্দার পিছনে চলে যাওয়াটা আর সম্ভব নয়, নিজের ছায়ার উপর লাফিয়ে পড়ার চাইতে।

সিলভেরি: আপনি সেইসব অল্প কয়েকজন চিন্তাবিদদের একজন যে মিডিয়ার গোরগোন (
gorgon) এর মুখোমুখি হয়েছেন এর ভিতরে থেকেই, পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েই। এরপরও, আপনিও আপনার নিজস্ব মোহটাতে থেকে বশীভুত হওয়ার জন্য একটা বৈরিতাকে চান। এর সঙ্গী মিডিয়া হতে পারে না, যেহেতু আপনি নিজেই পর্দার পিছনে আছেন; বাস্তবতাও হতে পারে না, যাকে আপনি অনেক পিছনে ফেলে এসছেন। এই সঙ্গী হচ্ছে তত্ত্ব। প্যারাডক্সের চাষাবাদ করে তত্ত্বের আকস্মিক পরিবর্তন করা, তার ভিশনটাকে তছনছ করা, একটা সন্কট এ তুলে নিয়ে আসা তার নিজের সিরিয়াসনেস এর কার্ডগুলি খেলা বা দেখিয়ে দেয়া - এই যে বিষয়গুলি, আমি বিশ্বাস করি, আপনার আনন্দ, একমাত্র আনন্দ হয়তো বা, অথবা একমাত্র সামাজিকতা (socializable ) . . .

বদ্রিয়াঁ: আমি স্বীকার করছি যে, আমি খুবই উপভোগ করি এই আকস্মিকভাবে পরিবর্র্তনের (
revulsion) খেপানোটাকে। কিন্তু এর পরপরই লোকজন জিজ্ঞাসা করে, “আমরা এটা দিয়ে কী করতে পারি?” সবকিছুর পর এটা নির্ভর করে একটা অসাধারণ চাতুর্যের (deception) উপর। এর থেকে কিছুই পাওয়ার নাই।


১. “দ্য এন্ড অফ দ্য সোশাল” হচ্ছে দ্বিতীয় ভাগ “ইন দ্য শ্যাডো অফ দি সাইলেন্ট মেজরিটিস” (নিউইর্য়ক, সেমিওটেক্সট (ই) ফরেন এজেন্ট সিরিজ, ১৯৮৩)
২. ফরগেট ফুকো (নিউইর্য়ক, সেমিওটেক্সট (ই) ফরেন এজেন্ট সিরিজ, ১৯৮৬)
৩. Simulacres et Simulation (প্যারিস: গ্যারি, ১৯৮১)




বদ্রিয়াঁ ১৯৭৭ সালে একটা বই লিখেন “ফরগেট ফুকো” নামে। জানা যায় যে, লিখাটা তিনি প্রথমে ক্রিটিক পত্রিকাতে পাঠান, যার তখন সম্পাদক ছিলেন, মিশেল ফুকো। ফুকো সেইটা ছাপান নাই এবং লিখাটার কোন প্রতিউত্তরও করেন নাই। এই লিখা ব্রদিয়াঁকে ফ্রান্সে যথেষ্ঠ অ-জনপ্রিয় করে তোলে বলেও ধারণা করা হয়। এই কথা-বার্তাটা সেই রচনার উপর ভিত্তি করেই নেয়া, যা নিছিলেন, তার ইংরেজী অনুবাদক।

Monday, February 4, 2008

আমার গন্তব্য।

কাফকা’র ছোটগল্প

আমার গন্তব্য

আমি আমার ঘোড়াটাকে আস্তাবল থেকে নিয়ে আসার জন্য বললাম। ভৃত্যটা আমাকে বুঝলো না। আমি নিজেই আস্তাবলে গেলাম, আমার ঘোড়াতে জিন চাপালাম এবং চড়ে বসলাম। আমি শুনলাম দূরে তুর্য বেজে উঠলো। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এর কি মানে, কিন্তু সে এটা জানতো না এবং শুনেও নাই। ফটকের সামনে সে আমাকে থামালো আর জিজ্ঞাসা করলো “আপনি কোথায় যাচ্ছেন প্রভু?” আমি উত্তর করলাম “এখান থেকে দূরে, এখান থেকে দূরে, সবসময় এখান থেকে দূরে। শুধুমাত্র এর ভিতর দিয়েই আমি আমার গন্ত্যবে পৌঁছাতে পারবো।” “তাহলে আপনি আপনার গন্তব্য জানেন” সে জিজ্ঞাসা করলো। “হ্যাঁ” আমি বললাম “এরমধ্যেই আমি তা বলেছি, ‘এখান থেকে দূরে’ হচ্ছে আমার গন্তব্য।” “আপনার তো কোন প্রস্তুতি নাই” সে বললো। “আমার কোনকিছুর দরকার নাই” আমি বললাম। “এই যাত্রা এতোটাই দীর্ঘ যে, পথের মধ্যে আমি যদি কিছু না পাই তাহলে আমি মারাই যাবো। সৌভাগ্যক্রমে, এটা একটা সত্যিকারের বিশাল যাত্রা।”


র্জামান থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেনছিলেন Alex Flores.

২৩শে জানুয়ারী, ২০০৮ খ্রীষ্টাব্দ।

(কাফকার গল্পটা পড়তেছিলাম। পড়তে পড়তেই ভাবলাম বাংলায় লিখা ফেলি। )