Thursday, March 13, 2008

দর্শন এবং রাজনীতি।অ্যালান বাদিউ।

দর্শন এবং রাজনীতি
অ্যালান বাদিউ
জুলাই/অগাস্ট, ১৯৯৯

প্লেটো থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত, একটা শব্দ আছে যা রাজনীতি সর্ম্পকে দার্শনিকদের সংশ্লিষ্টতাকে সংক্ষেপে বলতে পারে। এই শব্দটা হচ্ছে “ন্যায়বিচার” (Justice)। রাজনীতির প্রতি দার্শনিকের প্রশ্নটা এইরকম: একটা ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশন কী সম্ভব? এমন একটা ওরিয়েন্টেশন যা চিন্তার প্রতি ন্যায় বিচার করবে? আমরা যা দিয়ে শুরু করতে পারি, তা হচ্ছে: অবিচার পরিষ্কার, ন্যায়বিচার অস্পষ্ট। যার প্রতি অবিচার হয়, সে অবিশ্যম্ভাবীভাবে তার প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু কে এই ন্যায়বিচারকে যাচাই করবে? এখানে অবিচারের একটা প্রভাব আছে, আছে একটা যন্ত্রণা, একটা বিদ্রোহ। কিন্তু আবার, কোনকিছুই নাই যা ন্যায়বিচারকে নির্দেশ করে, যাকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বা একটা হৃদয়াবেগের মাধ্যমে প্রদর্শন করা সম্ভব।

তাহলে কি আমরা এই বলেই ক্ষান্ত দেবো যে, ন্যায়বিচার শুধুমাত্র অবিচারের অনুপস্থিতি? এটা কি একটা দ্বৈত অস্বীকৃতির একটা শূণ্য নিরপেক্ষতা? আমি তা মনে করি না। আমি এটাও মনে করি না যে, অবিচারকে উপলদ্ধি করা, অভিজ্ঞতা নেয়া বা সাবজেক্টিভভাবে দেখা সম্ভব; বা ন্যায়বিচার বুদ্ধিগ্রাহ্য, বা যুক্তিপূর্ণ বা অবজেক্টিভ একটা ব্যাপার। অবিচার ন্যায়বিচারের তাৎক্ষণিক কোন বিশৃঙ্খলা নয় যেখানে ন্যায়বিচার হচ্ছে আর্দশ একটা অবস্থা।

‘ন্যায়বিচার’ হচ্ছে দর্শনের একটা শব্দ, যদি অন্তঃত আমরা লিগ্যাল অর্থগুলিকে একপাশে সরিয়ে রাখি (আমরা অবশ্যই তা করছি), যা সম্পূর্ণভাবে পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। কিন্তু দর্শনের এই শব্দটা শর্তের ভিতর আছে। এটা রাজনৈতিক শর্তাধীন। কারণ দর্শন জানে সে এই সত্যগুলিকে পৃথিবীতে রিয়েলাইজ করতে অক্ষম যেখানে এটা যাচাই করা হয়। এমনকি প্লেটোও জানতেন, ন্যায়বিচার থাকার জন্য, এটা ধরে নিয়েছিলেন যে, দার্শনিক রাজা হবেন, কিন্তু এই ধরনের রাজা হওয়ার ব্যাপারটা দর্শনের উপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর, যা অসম্ভবপর থেকে যায়। আমরা তাকেই “ন্যায়বিচার” বলবো যার দ্বারা একটা দর্শন একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভিতর সত্যের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে।

বিশাল প্রায়োগিক রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশনের এই সত্যকে নিয়ে কিছুই করার নাই, যেমনটা আমরা জানি। তারা ক্ষমতা এবং মতামতগুলির একটা বীভৎস মিকশ্চারকে সংগঠিত করে। যে সাবজেক্টিটিভিটি তাদেরকে প্রাণবন্ত করে তা হচ্ছে গোষ্ঠী আর লবি, নির্বাচনী নিহিলিজম এবং কমিউনিটিগুলির অন্ধ সংঘর্ষ। দর্শনের এইসব নিয়ে কিছু বলার নাই, কারণ দর্শন শুধুমাত্র চিন্তা (thought) নিয়ে ভাবে, যখন এইসব ওরিয়েন্টেশনগুলি পরিষ্কারভাবে অ-চিন্তা (non-thoughts) হিসাবে প্রতিভাত হয়। তাদের কাছে সেই সাবজেক্টিভ উপাদানেরই গুরুত্ব আছে যাতে তাদের স্বার্থ আছে।

কয়েকটি রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশনগুলির, ইতিহাস জুড়ে দেখা যায়, সত্যের সাথে একটা সর্ম্পক ছিল বা থাকবে। একটা সত্য যা যৌথতার মতো একটা ব্যাপার। এখানে দুর্লভ কিছু প্রচেষ্টা আছে, অনেক সময় সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তা শুধুমাত্র একবার দর্শনের শর্তের অধীনে থাকে যা দর্শন চিন্তা করতে পারে। এইসব রাজনৈতিক ক্রমগুলি অনন্যরকমের, তারা কোন গন্তব্য নির্ণয় করে না, তারা কোন স্মারক ইতিহাসও নির্মাণ করে না। যদিও দর্শন তাদেরকে আলাদা একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে দেখতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যটা হচ্ছে যে, এই ওরিয়েন্টেশনগুলি চায় মানুষজন শুধুমাত্র তাদের শুধুমাত্র কড়া জেনেরিক (generic) মানবতা নিয়ে জড়িত হোক। তাদের কর্মের (action) মূলনীতিগুলির মাধ্যমে তারা স্বার্থের নির্দিষ্টতার প্রতি কোন অগ্রাধিকার দেয় না। এইসব রাজনৈতিক ওরিয়েন্টশনগুলি প্রবর্তিত করে একটা প্রতিনিধিত্বশীল সম্মিলিত চারিত্রের যা তার এজেন্টদেরকে সর্বোচ্চ (strictest) সমতার নির্দেশ করে।

এই ‘সমতা’ (equality) কী বোঝায়? সমতা বোঝায় যে, এই রাজনৈতিক অভিনেতা প্রতিনিধিত্ব করেন তার নির্দিষ্ট মানবিক চারিত্রের একমাত্র চিহ্ন হিসাবে। স্বার্থ (Interest) একটা নির্দিষ্টভাবে মানবিক চারিত্র নয়। প্রতিটি জীবন্ত সত্তারই তাদের স্বার্থগুলি রক্ষার জন্য একটি অপরিহার্যতা আছে। এই নির্দিষ্ট মানবিক চারিত্র হচ্ছে হচ্ছে সংক্ষেপে, চিন্তা এবং চিন্তার বাইরে কোন কিছু না যা একটা সত্যের পথকে দখল করে এবং মানুষকে পাহাড়ের পাশ দিয়ে নিয়ে যায়।

এইভাবে একটা রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশন দর্শনের অনুবর্তী হওয়ার যোগত্যা পায় ন্যায়বিচারের ধারণার ভিতর, একটা ওরিয়েন্টেশন যার অনন্য সাধারণ স্বতঃসিদ্ধতা হচ্ছে যে: মানুষ চিন্তা করে, মানুষ সত্যের যোগ্য। সেইন্ট-জাস্ট (Saint-Just) সত্যের চরিত্রের এইরকম কড়াকড়ি সমতাবাদী স্বীকৃতির কথা ভেবেছিলেন যখন ১৭৯৪ সালের এপ্রিলে, কনভেশন এর আগে তাকে সংজ্ঞায়িত করছিলেন: ‘আমাদের একটি সার্বজনীন চেতনা গড়ে উঠুক, যেখানে সকল হৃদয় ভালো আর মন্দের অনুভূতির প্রতি সমান হবে এবং এই চেতনার প্রবণতা জনগনকে নিয়ে যাক একটি সাধারণ ভালোর দিকে।’ আর পুরোপুরি একটা ভিন্ন রাজনৈতিক ক্রমের ভিতর, চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় আমরা একই নীতি খুঁজে পাই, উদহারণস্বরূপ ১৯৬৬ সালের ৮ই অগাষ্ট ১৬ দফা সিদ্ধান্তে: ‘জনগণকে নিজেদেরকে শিক্ষিত হয়ে উঠতে দিন এই মহান বিপ্লবী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে, তাদেরকে নিজেদেরকে ঠিক করতে দিন এর মধ্যে আলাদা করার কোনটা ন্যায় আর কোনটা তা না।”

সূত্র:

www.radicalphilosophy.com