Friday, May 16, 2008

সিলভিয়া প−াথ এর একটি সাক্ষাৎকার, পিটার অর-এর সাথে [১৯৬২]

সিলভিয়া প−াথ এর একটি সাক্ষাৎকার, পিটার অর-এর সাথে [১৯৬২]

[সিলভিয়া প−াথের জন্ম বোস্টনে। ১৯৩২ সালে। তিনি জার্মান ও অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত। গ্রাজুয়েশন করেছিলেন
Massachusettsএর স্মিথ কলেজ থেকে, ১৯৫৬ তে। আর ১৯৫৭ তে ইংল্যান্ডে, কেম্রবীজে ফুলব্রাইট স্কলারশীপ নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি স্মিথ কলেজে লেকচারার হিসাবে যোগ দেন। ১৯৬০ এ ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন স্থায়ীভাবে থাকার জন্য। এবং ১৯৬৩ তে মারা যান। তার দুই ছেলেমেয়ে ছিল।
তার প্রথম কবিতার বই
The Colossus বের হয় ১৯৬১ তে। তার উপন্যাস The Bell jar ১৯৬৩ এর জানুয়ারীতে ছদ্মনামে বের হয়। তার শেষদিকের কবিতা Ariel প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ তে।]

অর: সিলভিয়া, কোন বিষয়টা তোমাকে কবিতা লিখতে শুরু করিয়েছে?

প−াথ: আমি জানি না কী আমাকে শুরু করিয়েছে, আমি আসলে এটা লিখতে শুরু করি যখন আমি খুব ছোট। আমার মনে হয়, নার্সারি রাইমসগুলি আমি খুব পছন্দ করতাম আর মনে হয় ভাবতাম যে, আমিও হয়ত এরকম লিখতে পারি। আমি প্রথম কবিতা লিখি, যেটা প্রথম ছাপা হয় তখন আমার বয়স সাড়ে আট বছর। সেটা দি বোস্টন ট্রাভেলার -এ বের হয়েছিল আর তারপর থেকেই আমার মনে হয়, আমি একটু প্রফেশনাল।

অর: তুমি কোন জিনিসগুলি নিয়ে লিখতে, যখন তুমি শুরু করেছিলে?

প−াথ: প্রকৃতি, আমার মনে পড়ে: পাখি, মোমাছি, বসন্ত, ঝর্ণা - এইসব বিষয়গুলি, যা অনিঃশেষ উপহার একজন মানুষের প্রতি, যার নিজস্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই লিখবার জন্য। আমার মনে পড়ে, বসন্তের শুরু হওয়া, মাথার ওপরে তারাগুলি, প্রথম তুষারপাত আরও অনেককিছু যা একটা শিশুর কাছে, একজন নবীন কবির কাছে উপহারের মত।

অর: এখন, এতগুলি বছর পার হয়ে, তুমি কি বলতে পার, এখানে এমন কোন বিষয় কি আছে, যা তোমাকে কবি হিসাবে আর্কষণ করে, এমন কোন জিনিস যা নিয়ে তুমি লিখতে পছন্দ করবে?

প−াথ: হয়ত এটা একটা আমেরিকান বিষয়: আমি খুব উত্তেজিত বোধ করি, যখন আমি অনুভব করি যে, এটা নতুন কোন কিছু যা তৈরী হয়েছে, বলা যায়, জড়নবৎঃ খড়বিষষ এর খরভব ঝঃঁফরবং, এটা প্রচন্ড নতুন একটা জিনিস, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, খুবই ব্যক্তিগত, আবেগ কাতর অভিজ্ঞতা, যা আমার মনে হয়, অনেকটাই ট্যাবু। উদাহারণ হিসাবে বলা যায়, রবার্ট লওয়েল এর মানসিক হাসপাতালে তার অভিজ্ঞতা বিষয়ে কবিতাগুলি আমাকে আগ্রহী করে। এই অদ্ভুত, ব্যক্তিগত আর ট্যাবু বিষয়গুলি, আমার মনে হয়, সাম্প্রতিক আমেরিকান কবিতায় এক্সপে−ার হচ্ছে। আমি বিশেষভাবে চিন্তা করি, মহিলা কবি অহহ ঝবীঃড়হ এর কথা, যে মা হিসাবে তার অভিজ্ঞতাগুলির কথা লিখেছে, মা হিসাবে যার একটা নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়েছিল, যা খুবই আবেগ কাতর এবং একজন তরুণীর অনুভূতি । আর তার কবিতাগুলি চমৎকারভাবে μাফটম্যানসশীপের কবিতা এবং যদিও তাদের একধরণের আবেগ আর মানসিক গভীরতা আছে যা আমার মনে হয়, অনেকটাই নতুন, অনেকটাই উত্তেজনার।

অর: এখন তুমি, একজন কবি হিসাবে, একজন মানুষ হিসাবে যার এক পা আটলান্টিকের এক দিকে আর অন্য পা অন্যদিকে - যদি আমি এইভাবে দেখি, একজন আমেরিকান হিসাবে...

প−াথ: এটা হয়ত একটা বিব্রতকর অবস্থান, কিন্তু আমি এটা স্বীকার করব!

অর: ... কোন দিকে তোমার অবস্থানটা বেশি যাবে, যদি আমি রূপক অর্থেও বলতে চাই?

প−াথ: আচ্ছা, আমি যদি ভাষার কথা বলি, তাহলে আমি আমেরিকান, আমি ভীত যে, আমার উচ্চারণ আমেরিকান, আমার কথা বলার ধরণ আমেরিকানদের মত, আমি একজন পুরানো ধরণের আমেরিকান। এটা সম্ভবত একটা কারণ যে জন্য এখন আমি ইংল্যান্ডে এবং সবসময় ইংল্যান্ডে থাকব। যতদূর পর্যন্ত আমার আগ্রহ যায়, আমি ৫০ বছর পেছনে আছি, আমি অবশ্যই বলব যে যেসব কবি আমাকে আগ্রহী করে তাদের অধিকাংশই আমেরিকান। খুব কম সমসাময়িক ইংরেজ কবিই আছেন যাদের কবিতা আমি পছন্দ করি।

অর: এটা কি ইঙ্গিত করে যে, বর্তমান সময়ের ইংরেজ কবিরা আমেরিকানদের চাইতে পিছিয়ে?

প−াথ: না, আমার মনে হয় এটা একটু জটিল, যদি আমি এটা বলেও থাকি। ব্রিটিশ সমালোচক অষাধৎবু একটা প্রবন্ধ ছিল: ইংল্যান্ডে ভদ্রতার বিপত্তি সর্ম্পকে তার যুক্তিগুলি খুবই মানানসই, খুবই সত্যি। আমি অবশ্যই বলব যে, আমি খুব ভদ্র নই আর আমি এটা মনে করি যে, ভদ্রতার একটা ভয়ানক জিনিস আছে - পরিচ্ছন্নতা, চমৎকার কমনীয়তা, যা ইংল্যান্ডের সর্বত্র এতবেশি দেখা যায় যে, সম্ভবতঃ এটা অনেকবেশি ভয়ানক বাস্তবে যা দেখায়, তার চাইতে।

অর: কিন্তু তুমি কি এটাও মনে কর না যে, ইংলিশ কবিদের যে কাজ তা তাদের ওপর চাপানো একটা ভারের ভিতর দিয়ে করতে হচ্ছে, যাকে মোটা দাগে ‘ইংশিল লিটারেচার’ বলা হচ্ছে?

প−াথ: হ্যাঁ, এর চাইতে বেশি আমি একমত হতে পারি না। আমি জানি যখন আমি কেম্রবীজে ছিলাম, তখন আমার সাথে কি হয়েছিল। একজন তরুণী আসত আমার কাছে আর বলত ‘কি করে তুমি সাহস কর লেখালেখি করার, আর তা ছাপানোর, একটা লেখা ছাপানো হলে যে সমালোচনা, ভয়ানক সমালোচনা করা হয়, তারপরও?’ আর সমালোচনাটা কখনই ঐ কবিতাটার সমালোচনা না। আমার মনে পড়ে একবার আমি অবাক হয়েছিলাম, যখন কেউ একজন আমাকে সমালোচনা করল জন ডানের মত শুরু করার জন্য কিস্তু জন ডানের মত শেষ না করতে পারার জন্য, আর প্রথমবারের মত ঐ মুহূর্তে সমস্ত ইংরেজী সাহিত্যের ভার আমি আমার ওপর অনুভব করলাম। আমি মনে করি, যে সম্পূর্ণ গুরুত্ব দেয়া হয় ইংল্যান্ডে, এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, বাস্তব সমালোচনার ওপর (কিন্তু ঐতিহাসিক সমালোচনার ওপর এতটা না, এটা জেনে যে, কোন সমযে এটা লেখা হচ্ছে) তা অনেকটা অবশ করে দেয়ার মত। আমেরিকাতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আমরা কী পড়ি? - টি.এস. এলিয়ট, ডিলান টমাস, ইয়েটস; এখান থেকেই আমরা শুরু করি। শেকসপীয়র থাকেন বেকগ্রাউন্ডে।

আমি নিশ্চিত নই আমি এর সাথে একমত হব কিনা, কিন্তু আমি মনে করি এতসব কারণে একজন নতুন কবি’র পক্ষে, যে কবিতা লিখছে, আমেরিকাতে তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া এতটা ভীতিকর না যতটা ইংল্যান্ডে।

অর: সিলভিয়া, তুমি বলছ যে, তুমি নিজেকে একজন আমেরিকান মনে কর, কিন্তু যখন তুমি ‘ফধফফু’র মত একটা কবিতা পড় যা বলে উধপযধঁ, অঁংপযরিঃু আর সবরহ কধসঢ়ভ এর কথা; আমার এমন একটা ধারণা আছে যে, এই ধরণের কবিতা একজন সত্যিকারের আমেরিকান লিখতে পারে না, কারণ এটা খুব বেশি কিছু বোঝায় না, এই নামগুলি হয়ত আটলান্টিকের ঐপারে খুব বেশি কিছু বলে না, তাই কি?

প−াথ: আচ্ছা, এখন তুমি আমাকে একজন সাধারণ আমেরিকান ধরে নিয়ে বলছ। ঠিক করে বলতে গেলে, আমার পূর্বপুরুষ, আমি বলতে পারি, জার্মান আর অস্ট্রিয়ান। একদিক দিয়ে দেখতে গেলে আমি প্রথম প্রজন্মের আমেরিকান, আর অন্যদিক দিয়ে দেখতে গেলে আমি দ্বিতীয় প্রজন্মের আমেরিকান আর তাই কনসানট্রেশন ক্যাম্পগুলি ও অনান্য ক্ষেত্রে আমার আগ্রহ অনন্যভাবে তীব্র। আর তারপর আবার আমি নিজেকে রাজনৈতিকভাবেও দেখি, যা আমি মনে করি এখান থেকেও একটা অংশ এসেছে।

অর: আর একজন কবি হিসাবে, তোমার কি ইতিহাস সর্ম্পকে মহৎ ও তীক্ষ্ম ধারণা আছে?

প−াথ: আমি ইতিহাসবিদ নই, কিন্তু ইদানিং ইতিহাসের প্রতি মুগ্ধতা আরো বাড়ছে আর এখন আমি নিজেকে দেখছি আরো বেশি ইতিহাস সর্ম্পকে পড়তে। বর্তমানে আমি নেপোলিয়ন বিষয়ে খুবই আগ্রহী : আমি খুবই আগ্রহী লড়াই আর যুদ্ধ সর্ম্পকে; এধষষরঢ়ড়ষ আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর এইরকম বিষয়ে; আর আমার মনে হচ্ছে, এই বয়সে আমি অনেকবেশি ইতিহাস সচেতন। আমার প্রথম বিশে - আমি কখনই এরকম ছিলাম না।

অর: তোমার কবিতাগুলি’র কি বইয়ের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসার প্রবণতা থাকে, তোমার নিজস্ব জীবনের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসার চাইতে?

প−াথ: না, না, আমি এটাকে এইভাবে কখনই বলব না। আমি মনে করি, আমার কবিতাগুলি তাৎক্ষণিকভাবে বেরিয়ে আসে উপলদ্ধি আর আবেগের অভিজ্ঞতাগুলি থেকে, যা আমার আছে; কিন্তু আমি অবশ্যই বলব যে, এইসব কান্না আমি সহানুভূতির সাথে হৃদয় থেকে বের করতে পারি না, সুই অথবা ছুরি অথবা এমন একটা কিছু ছাড়া। আমি বিশ্বাস করি, একজনের অবশ্যই ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন অভিজ্ঞতাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার, সেটা যত ভয়াবহই হোক না কেন, পাগল হওয়ার মত বা অত্যাচারিত হওয়ার মত - এরকম অভিজ্ঞতা আর এইসব অভিজ্ঞতাকে একজনের পরিচালিত করা প্রয়োজন সুগঠিত এবং বুদ্ধিমত্তার ছোট আকৃতিতে, আমার মনে হয় সেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটা খুবই জরুরী, কিন্তু এটা অবশ্যই কোন বদ্ধ-বাক্স বা নিজেকে আযনায় দেখার নার্সিসিজম-এর মত কোনো ব্যাপার না। আমি বিশ্বাস করি, এটা অবশ্যই প্রাসঙ্গিক হতে হবে, বৃহত্তর অর্থগুলির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হতে হবে, বড় বিষয়গুলি, যেমন ঐরৎড়ংযরসধ বা উধপযধঁ বা এইরকম কোনো কিছুর ক্ষেত্রে।

অর: আর তাই, এই আদি, আবেগী প্রতিμিয়ার পিছনে নিশ্চয় কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক শৃঙ্খলা থাকবে।

প−াথ: এটা খুব গভীরভাবে অনুভব করি, একাডেমিক হবার কারণে, পিএইচডি ডিগ্রী’র জন্য থেকে যাবার আমন্ত্রণের প্রলোভনের জন্যে, একজন প্রফেসর হওয়ার কারণে- এইসব কিছুর জন্যে, আমার একটা দিক অবশ্যই সব ডিসিপি−নকে শ্রদ্ধা করে, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা অনঢ় হয়ে ওঠে।

অর: যেসব লেখকরা তোমাকে প্রভাবিত করেছে, তাদের সর্ম্পকে তুমি কি বলবে? কে তোমার কাছে অনেক বেশি অর্থপূর্ণ?

প−াথ: এমন খুব অল্প কজনই আছেন। তাদের সত্যিকারভাবে খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। যখন আমি কলেজে ছিলাম আধুনিকদের দ্বারা হতবিহ্বল আর অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম, ডিলান টমাস, ইয়েটস, অডেন দ্বারা, এমনকি একটা সময়ে আমি অডেনের জন্য সম্পূর্ণভাবে পাগল ছিলাম আর আমি যা লিখতাম তা ছিল মারাত্কভাবে অডেনীয়। এখন আমি আবার পিছনের দিকে ফিরে গেছি, উদাহরণস্বরুপ, আমি বে−ক-এর দিকে দেখছি। আর তারপর, এটা খুব উদ্ধত্যের সাথে বলা যায় যে, কেউ একজন শেকসপীয়র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে যেমন: একজন শেকসপীয়র পড়ল আর এটা তা-ই।

অর: সিলভিয়া, কেউ খেয়াল করবে যে, তোমার কবিতা পড়তে গেলে এবং শুনতে গেলে দুই রকমের শোনায়, যা খুবই দ্রুত আর স্পষ্টভাবেই মনে হয়; যার একটা সহজবোধ্যতা (আর আমার মনে হয় এই দুইটা রকমেরই একটার আরেকটার সাথে সর্ম্পক আছে) তাদের সহজবোধ্যতা আর তারা যে প্রভাব ফেলে পড়া হলে। তো, তুমি কি সচেতনভাবে তোমার কবিতাকে গড়ে তোল একই সাথে স্বচ্ছ এবং বাস্তবিক করে, যখন তাদের শব্দ করে পড়া হয়?

প−াথ: এটা এমন একটা কিছু যা আমি আমার প্রথম কবিতাগুলির ক্ষেত্রে করিনি। উদাহারণস্বরুপ আমার প্রথম বই ঞযব ঈড়ষড়ংংঁং, এর কোন কবিতাই এখন আমি শব্দ করে পড়তে পারি না। আমি এগুলিকে শব্দ করে পড়ার মত করে লিখিনি। তারা, সত্যিকারভাবে, খুব ব্যক্তিগতভাবে, আমাকে ক্লান্ত করে। যেগুলি আমি এখন পড়ছি, যেগুলি খুবই নতুন, আমি তাদের সর্ম্পকে বলতে পারি, আমি নিজের কাছে তাদের উচ্চস্বরে বলতে পারি, আর আমি মনে করি যে, এটা আমার নিজের লেখার ক্ষেত্রে একটা অগ্রগতি, আমার কাছে একটা নতুন বিষয়। আর যেটা সহজবোধ্য, সেটা সম্ভবতঃ এমন একটা জায়গা থেকে এসেছে যেখানে আমি তাদেরকে আমার নিজের কাছে বলি, আমি উচ্চস্বরে বলি।

অর: তুমি কি মনে কর, এটা একটা ভালো কবিতার জন্য অত্যাবশকীয় একটা অংশ, যে কবিতাটা আবৃত্তি করা যাবে?

প−াথ: আচ্ছা , আমি এটা এখন অনুভব করি আর মনে করি যে, এটা কবিতা রের্কড করার ক্ষেত্রে একটা অগ্রগতি, পড়ার সময় কবিতাটা আবৃত্তি করতে পারা; কবিদের নিজস্ব রের্কড থাকা আমি মনে করি চমৎকার একটা বিষয়। আমি এটা নিয়ে খুবই উত্তেজিত। একদিক দিয়ে এটা একরকম ফিরে আসা পুরানো কবিদের অবস্থানে, যখন একদল মানুষের মাঝে কবিতা পড়া হত।

অর: অথবা একদল মানুষের মাঝে যখন কবিতা গাওয়া হত?

প−াথ: একদল মানুষের মাঝে গাওয়া হত, ঠিক তাই।

অর: কবিতাকে একটু সময়ের জন্যে সরিয়ে রেখে বলি, আরও অন্য কোন কিছু কি তুমি লেখ বা লিখেছো?

প−াথ: আচ্ছা, আমি সবসময় গদ্যের বিষয়ে আগ্রহী। কিশোর বয়সে আমি ছোট গল্প ছাপিয়েছিলাম। আর সবসময় চাইতাম বড় গল্প লিখতে, আমি চাইতাম একটা উপন্যাস লিখতে। এখন আমি যেটা অর্জন করেছি, আমি বলব একটা পরিণত বয়সে এবং যখন অভিজ্ঞতা হয়েছে, আমি আরো বেশি আগ্রহ বোধ করি গদ্যের বিষয়ে, উপন্যাসের ক্ষেত্রে। আমি অনুভব করি, একটা উপন্যাসে, উদাহারণস্বরূপ, আপনি টুথব্রাশের ভিতর ঢুকতে পারেন এবং এর সব কলকব্জা যা একজন প্রতিদিনকার জীবনে পায় তা দেখাতে পারে আর কবিতার ক্ষেত্রে বিষয়টা অনেক কঠিন। কবিতা, আমি অনুভব করি, একটা নির্মম শৃংখলা, আপনাকে অনেকদূর যেতে হবে, এত দ্রুত, এমন একটা ছোট্র জায়গার মধ্যে যে, আপনি শুধুমাত্র সমস্ত সীমাবদ্ধতাকে অগ্রাহ্য করতে পারেন। আর আমি তাদের হারিয়ে ফেলি! আমি একজন নারী, আমার ছোট খধৎবং আর চবহধঃবং এর মত, একটা তুচ্ছ জিনিসের মত আর আমি দেখি যে, একটা উপন্যাসে আমি জীবনের অনেকটাই পাই, হয়ত এমন তীব্র জীবন নয়, কিস্তু অবশ্যই জীবনের অনেকটুকুই আর তাই এর ফলে আমি উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে অনেক বেশি আগ্রহী।

অর: এটা অনেকটা ডঃ জনসনের মত দৃষ্টিভঙ্গি, তাই না? যেটা তিনি বলেছিলেন ‘এমন কিছু বিষয় আছে, যা কবিতায় অর্ন্তভুক্ত হওয়ার মত আর অন্য অনেককিছুই নয়’?

প−াথ: আচ্ছা, একজন কবি হিসাবে আমি অবশ্যই বলব পুরুষ সমকামী! আমি বলব যে সবকিছুই কবিতার ভিতর আসতে পারে, কিন্তু আমি কখনই পারি না টুথব্রাশগুলিকে একটা কবিতায় আনতে, আমি সত্যিই পারি না!

অর: তুমি কি অন্য লেখক, কবিদের সান্নিধ্যে নিজের বেশিরভাগ সময় কাটাও ?

প−াথ: আমি ডাক্তার, ধাত্রী, আইনজীবি অথবা অন্য যে কাউকেই পছন্দ করি লেখকদের চাইতে। আমি মনে করি লেখক-শিল্পীরা হচ্ছেন সবচেয়ে নার্সিসাস লোক। আমার অবশ্য এটা বলা উচিত না, আমি তাদের অনেককেই পছন্দ করি। এমন কি আমার অনেক বন্ধুরাই লেখক ও শিল্পী। কিন্তু আমি অবশ্যই বলব যে, আমি তাদেরকেই পছন্দ করি, যারা কোনো একটা বাস্তব বিষয়ে দক্ষ এবং আমাকে কিছু শেখাতে পারেন। আমি বলতে চাচ্ছি, আমার ধাত্রী আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে মৌমাছি পালতে হয়। যদিও সে আমার লেখার কিছুই বুঝতে পারে না। আর আমি নিজের ক্ষেত্রে দেখি যে, অনেক কবিদের চাইতে আমি তাকে বেশি পছন্দ করি। আমি আমার বন্ধুদের মধ্যে এমন মানুষদের দেখি যিনি নৌকা সর্ম্পকে সবকিছুই জানেন অথবা একটা খেলার সবকিছুই জানেন অথবা জানেন কীভাবে একজনকে/ একটা শরীর কেটে খুলতে হয় অথবা একটা অঙ্গ কিভাবে কাটতে হয়। এই বাস্তব জ্ঞানের দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করে। একজন কবি হিসাবে যে কেউ একটু হাওয়ায় ভাসে। আমি সবসময় এমন কাউকে পছন্দ করি, যে আমাকে বাস্তব কিছু শেখাতে পারে।

অর: অন্য এমন কোনো কিছু কি আছে কবিতা লেখার বাইরে যা তুমি করতে চাইতে? কারণ এটা অবশ্যই এমন একটা কিছু যা বাস্তব জীবনের অনেক কিছুই নিয়ে নেয়, যদি কেউ সফলতা লাভ করতে পারে। তোমার মনে কি কোনো জমানো আক্ষেপ আছে, এমন কোনো কিছু না করার জন্য?

প−াথ: আমার মনে হয় আমি যদি অন্য কোনো কিছু করতে চাইতাম, তাহলে ডাক্তার হতে চাইতাম। আমার মনে হয়, এটা হয়ত একজন লেখক হওয়ার সবচেয়ে বিপরীত একটা কিছু। আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাই ছিল ডাক্তার। আমি সাদা জালের টুপি পড়ে রাউন্ডে যেতাম, দেখতাম শিশুরা জন্ম নিচ্ছে, শবগুলির ব্যবচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা আমাকে মুগ্ধ করত, কিন্তু আমি নিজেকে কখনই গোছাতে পারিনি, নিজেকে ঐ একটা জায়গায় নিয়ে আসতে পারিনি, য়েখানে আমি সেই সমস্ত কিছু শিখতে পারবো যা একজন ভাল ডাক্তার হতে হলে জানতে হয়। এটা সেই বৈপরীত্য - যে মানুষের অভিজ্ঞতাগুলি নিয়ে সরাসরি কাজ করে, তাকে সারিয়ে তোলে, শারীরিক অবস্থার উনড়বতি করে, সাহায্য করে, এইরকম একটা বিষয়। আমার মনে হয়, আমার যদি কোনো নস্টালজিয়া থাকে, এটা তাই। কিন্তু আমি নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিই যে, আমি অনেক ডাক্তারদের চিনি। আর আমি হয়ত এটাও বলতে পারি যে, একজন ডাক্তার হওয়ার চাইতে, ডাক্তারদের নিয়ে লিখতে পেরে আমি আরো বেশি খুশি।

অর: কিন্তু মূলতঃ এই ব্যাপারটা, কবিতা লেখাটা, তোমার জীবনে নিশ্চয় একটা গভীর পরিতৃপ্তির একটা বিষয়, তাই না?

প−াথ: আহ, পরিতৃপ্তি! আমি মনে করি না এটা ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো। এটা আমার কাছে রুটি-পানির মত অথবা এমন কিছু যা আমার জন্য নিঃশর্তভাবে প্রয়োজনীয়। আমি পরিপূর্ণভাবে তৃপ্তি পাই যখন একটা কবিতা

লিখতে পারি, যখন আমি লিখছি। একটা কবিতা লেখার পর একজন খুব দ্রুত কবি হওয়া থেকে সরে যেতে থাকে; কবিতা লেখার সময় আর বাকি সময়টাতে কবি থাকা মোটেও একই ব্যাপার নয়। কিন্তু আমার মনে হয় একটা কবিতা লেখার আসল অভিজ্ঞতা চমৎকার একটা অনুভূতি।

৩০ অক্টোবর, ১৯৬২

বিচার সম্পর্কে ।ওরহান পামুক।

বিচার সম্পর্কে
[মন্তব্য]
ওরহান পামুক

ইস্তাম্বুলে এই শনিবারে - সিসলিতে, যেই জেলাতে আমি আমার সমস্ত জীবন পার করেছি, তার কোর্টভবনে, যা আমার দাদীমার তিনতলা বাড়িটার উল্টোদিকে, যেখানে তিনি চল্লিশ বছর যাবত একাকী বেঁচে ছিলেন - সেখানে আমি একজন বিচারকের সামনে দাঁড়াবো। আমার অপরাধ হচ্ছে “প্রকাশ্যে তুর্কি আইডেন্টিটিতে কালিমালেপন করা”। প্রসিকিউটর আমাকে তিন বছরের জেল দেয়ার জন্য বলবেন। আমার হয়তো দুশ্চিন্তা হওয়া উচিত এই ভেবে যে, তুর্কি-আমেরিকান সাংবাদিক র্হান্ট ডিন্ক এই একই কোর্টে অভিযুক্ত হয়েছিলেন একই অপরাধে, আর্টিকেল ৩০১ এর একই সংবিধিতে এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল; কিন্তু আমি আশাবাদী। কারণ আমার আইনজীবির মতো, আমিও বিশ্বাস করি আমার বিরুদ্ধে এই কেসটি সংকীর্ণ; আমি মনে করি না শেষ পর্যন্ত আমাকে জেলে যেতে হবে।

যেকোনভাবেই আমি খুবই অস্তিত্ববোধ করছি যে, আমার বিচারটাকে অতিনাটকীয় করা হয়েছে দেখে। আমি শুধুমাত্র সচেতন যে, আমার ইস্তাম্বুলের অনেক বন্ধুরা, যাদের কাছে আমি অনেক সময় উপদেশ চেয়েছি, একই সময়ে তাদেরকেও অনেক কর্কশ ইন্টারোগেশন-এর মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে এবং কোর্টের কেইসগুলিতে অনেক বছর নষ্ট করতে হয়েছে এবং জেল হয়েছে শুধুমাত্র একটা বই-এর কারণে, শুধুমাত্র এই কারণে যে, তারা লিখেছে। এমন একটা দেশে আমি বসবাস করি যা তার পাহাসদের, সেইন্টদের এবং পুলিশঅফিসারদের প্রতিটি সুযোগে সম্মানিত করে কিন্তু তার লেখকদেরকে সম্মান করতে অস্বীকার করে যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা কোর্টে এবং হাজতে কয়েকটা বছর না কাটায়, সেখানে আমি বলতে পারি না যে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম যখন আমাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। আমি বুঝতে পারি যখন আমার বন্ধুরা হাসে আর বলে যে, শেষ পর্যন্ত আমি “একজন সত্যিকারের তার্কিশ লেখক” হতে পেরেছি। কিন্তু যখন আমি যে শব্দগুলি বলেছি যার জন্য আমাকে এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তা থেকে আমি এই ধরনের সম্মানের খোঁজ করিনি।

গত ফেব্র“য়ারীতে, একটা সুইস দৈনিক পত্রিকায় আমার একটা ইন্টারভিউ ছাপা হয়, সেখানে আমি বলেছিলাম যে, “তুরস্কে এক মিলিয়ন আর্মেনিয়ান এবং তিরিশ হাজার কুর্দিদের হত্যা করা হয়েছে”; আমি অভিযোগ করেছিলাম যে, আমার দেশে এইসব নিয়ে আলোচনা না করাটা একটা ট্যাবু। বিশ্বের সিরিয়াস ঐতিহাসিকদের মধ্যে, এটা খুবই সাধারন জ্ঞান যে, একটা বিশাল সংখ্যার অটোমান আমেরিকানদের নির্বাসিত করা হয়েছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটেমান সাম্রাজ্যের বিরোধিতার অভিযোগে এবং তাদের অনেককে গণহত্যা করা হয় পালিয়ে যাওয়ার পথে। তুরস্কের মুখপাত্ররা, যাদের বেশিরভাগ-ই কূটনীতিবিদ, তারা এখনো বলেন যে, এই মৃত্যুর সংখ্যা ছিল অনেক কম, যা গণহত্যা হিসেবে অভিহিত হওয়ার যোগ্য না, কারণ এইটা কোন সুশৃংখল ঘটনা ছিল না, তাছাড়া এই যুদ্ধে আর্মেনীয়রাও প্রচুর মুসলমান হত্যা করেছিল। এই গত সেপ্টেম্বর-এ, যেভাবেই হোক, রাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও, ইস্তাম্বুলের তিনটি প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তভাবে স্কলারদের একটি একাডেমিক কনফারেন্স-এর আয়োজন করে, তার্কিশ অফিসিয়ালদের এই মনোভাব সহ্য না করার ধারার ব্যাপারে। তখন থেকে, গত নব্বই বছরের মধ্যে প্রথম এই বিষয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হয়-আর্টিকেল ৩০১ এর ধারা সত্ত্বেও।

যদি রাষ্ট্র এতদূর পর্যন্ত যেতে চায় যা তার্কিশ জনগণকে জানা থেকে বিরত করে যে, অটোমান আর্মেনীয়দের ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, তা ট্যাবু হওয়ার যোগ্য। আর আমার কথা একটা ট্যাবুতে উন্মাদনা সৃষ্টি করে: অনেকগুলি দৈনিক পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা কর্মসূচী ঘোষণা করে, কয়েকজন ডান-পন্থী (আবশ্যিকভাবে ইসলামিক নয়) কলামিস্ট এত দূর পর্যন্তও বলেন যে, আমাকে চিরতরে “নিস্তব্ধ” করে দেয়া উচিত। উগ্র জাতীয়তাবাদী গ্র“পগুলি আমার প্রতারণাকে মোকাবিলা করার জন্য মিটিং-মিছিলের আয়োজন করে; প্রকাশ্যে আমার বইগুলি পোড়ানো হয়েছিল। আমার উপন্যাস “স্নো”-এর নায়ক কে-এর মতো, আমিও আবিষ্কার করি এটা কিরকম লাগে একজনের একটা সময়ের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলির জন্য নিজের প্রিয় শহর ছেড়ে যেতে। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না এই বির্তকে আরো যোগ করতে, এমনকি এই সর্ম্পকে কিছু শুনতে চাচ্ছিলাম না, একদম প্রথমে আমি চুপচাপ ছিলাম, এক ধরনের অদ্ভুত লজ্জায় সিক্ত হয়েছিলাম, পাবলিক থেকে লুকাচ্ছিলাম, এমনকি আমার নিজের শব্দগুলির কাছ থেকেও। তখন একজন প্রাদেশিক গভর্নর আমার বইগুলি পোড়ানোর আদেশ দিলেন, এবং, ইস্তাম্বুলে আমার ফিরে আসার পর, সিসলি’র পাবলিক প্রসিকিউটর আমার বিরুদ্ধে একটা কেস ঠুঁকে দেন, এবং আমি নিজেকে আবিষ্কার করি আর্ন্তজাতিক কনসার্নের একটা অবজেক্ট হিসাবে।

আমার নিন্দুকেরা শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত শত্র“তা নিয়ে উৎসাহী ছিলেন না বা তারা শুধুমাত্র আমার প্রতি বৈরিতা দেখাচ্ছিলেন না; আমি এরমধ্যে জানি যে আমার কেইসটা তুরস্কে এবং বাইরের পৃথিবীতে আলোচনাযোগ্য একটা বিষয়। এটা অংশত এই কারণে যে, আমি বিশ্বাস করি একটা দেশের “সম্মান” বির্বণ হয় তার ইতিহাসের কালো অধ্যায়গুলি নিয়ে আলোচনা করাতে না, বরং কোনরকম আলোচনা করতে না দেয়ার অসম্ভাব্যতার মধ্যে। কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, আজকের তুরস্কে অটোমান আর্মেনীয়দের নিয়ে আলোচনা করার নিষিদ্ধকরণটা বাক স্বাধীনতারও একটি নিষিদ্ধকরণ এবং এই দুইটি বিষয় ব্যাখ্যাতীতভাবে যুক্ত। আমার দুর্দশার এই উদ্দেশ্যের মধ্যে বা সাহায্যের সাধারণ ভঙ্গিগুলির মধ্যে আমি আরামেই ছিলাম, আর সেখানে এমন সময়ও ছিল আমি অস্বস্তিবোধ করতাম যখন আমার দেশ এবং বাকি পৃথিবীর মাঝখানে আমি নিজেকে আবিষ্কার করতাম।

সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার ছিল এটা ব্যাখ্যা করা যে, একটি দেশ যা অফিসিয়ালি অঙ্গীকার করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার জন্য, কেন সে তার একজন লেখককে জেলে দিতে চায়, যে ইউরোপে খুব ভালোভাবে পরিচিত, এবং কেন সে এই নাটক করতে বাধ্য করে (হয়তো কর্নারড বলতেন) “পশ্চিমা চোখের ভিতর”। এই প্যারাডক্সটা শুধুমাত্র একটা সরল মূর্খতা, বা ঈর্ষা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না, এবং এটা-ই শুধু একমাত্র প্যারাডক্স না। আমি একটা দেশ সর্ম্পকে কী বোঝাতে চাই যে তুর্কিদেরকে, তার অনান্য পশ্চিমা প্রতিবেশীদের মতো একটি করুণাময় জনগণ হতে জোর করে, যারা গণহত্যার দায়ভার নিতে অক্ষম, যেখানে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক গ্র“পগুলি প্রবলভাবে আমাকে মৃত্যুর হুমকি দিতে থাকে? একটা রাষ্ট্রের এর পিছনে যুক্তিগুলি কী যখন সে অভিযোগ করতে থাকে যে, তার শত্র“রা মিথ্যা রির্পোটগুলি ছড়াচ্ছে অট্যোমান লিগ্যাসি সর্ম্পকে সারা পৃথিবীতে, যখন সে তার একজন থেকে আরেকজন লেখক-এর বিরুদ্ধে মামলা করে, জেলে পোরে, আর এইভাবে একটা ভয়াবহ তুর্কির ইমেজ তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী? যখন আমি ভাবি সেই অধ্যাপকের কথা যাকে রাষ্ট্র বলেছিল তুরস্কের মাইনরিটি সর্ম্পকে তার ধারণা জানানোর জন্য, এবং যে, একটা রির্পোট দিয়েছিল, যা তাদেরকে খুশি করতে ব্যর্থ হয়েছিল, যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, অথবা এই সময়টার মধ্যে, এই খবরটা এবং যখন আমি লেখাটা লিখতে শুরু করি এবং এই বাক্যগুলি আপনারা যখন পড়ছেন, তার মধ্যে পাঁচজনেরও বেশি লেখক এবং সাংবাদিককে আর্টিকেল ৩০১-এর ধারায় চার্জ করা হয়েছে, আমি কল্পনা করতে পারি ফ্লবেয়ার এবং নার্ভেল, অরিয়েন্টালিজম-এর এই দুইজন গডফাদার হয়তো এই ঘটনাগুলিকে বলতেন উদ্ভট হিসাবে, এবং তা সঠিকই করতেন।

এটা বলে যে, যে নাটকটা আমরা দেখছি তা উন্মোচিত করে না, আমি মনে করি, পারম্পর্যহীন এবং অনিশ্চিত নাটক, যা তুরস্কের জন্য বিচিত্র; বরং, এটা একটা নতুন গ্লোবাল প্রেক্ষাপটের একটা প্রকাশ আমরা যেটা মাত্র স্বীকার করতে শুরু করেছি এবং এটা তা যা আমাদের শুরু করা প্রয়োজন, যত আস্তে আস্তে-ই হোক, তাকে এড্রেস করা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ভারত এবং চীন এর বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উত্থান দেখেছি, এবং উভয় দেশেই দেখছি মধ্যবিত্তদের দ্রুত বিস্তার, যদিও আমি মনে করি না, আমরা সত্যিকারভাবে বুঝতে পারবো এই লোকদের যারা এই পরিবর্তনের অংশ, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের দৈনন্দিন জীবন উপন্যাসগুলিতে প্রতিফলিত দেখতে পাবো। আপনি এই নতুন এলিটদেরকে যাই বলেন-এই নতুন অ-পশ্চিমা বুর্জোয়া অথবা সমৃদ্ধ আমলাতন্ত্র-তারা, আমার দেশের পশ্চিমাকৃত এলিটদের মতো, দুইটা পৃথক এবং আপাতদৃষ্টিতে সঙ্গতিহীন কাজের পথ অনুসরণ করতে বাধ্য হবে তাদের নতুন অর্জিত সম্পদ এবং ক্ষমতা বৈধ করার জন্যে। প্রথমত, তারা অবশ্যই তাদের উন্নতিকে তাদের ভাগ্যের ভিতর জাস্টিফাই করবে পশ্চিমের বাগধারা আর দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে; এই ধরনের জ্ঞানের একটা চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে, তারপর তারা তাদের দেশের লোকজনকে শিখানোর জন্য তা হাতে নেবে। যখন লোকজন তাদেরকে তীব্রভাবে ভৎর্সনা করবে ঐতিহ্যকে ইগনোর করার জন্য, তখন তারা একটা মারাত্মক এবং অসহিষ্ণু জাতীয়তাবাদের ঝান্ডা ঘোরাবে। এই বির্তকগুলিকে যাকে ফ্লবেয়ারের মতো একজন বাইরের দর্শক হয়তো উদ্ভট বলবেন, হয়তো এইসব রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রোগ্রামগুলির মধ্যেকার সংঘর্ষগুলি এবং সাংস্কৃতিক উচ্চাকাঙ্খাগুলি, যা তারা ধারণ করে। অন্যদিক দিয়ে, এখানে গ্লোবাল অর্থনীতিতে যোগ দেয়ার তাড়া আছে, অন্যদিক দিয়ে রাগী জাতীয়তাবাদীরা যারা খাঁটি গণতন্ত্র এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে দেখে পশ্চিমা আবিষ্কার হিসাবে।

ভি.এস. নাইপল হচ্ছেন প্রথমদিককার লেখকদের মধ্যে একজন যিনি পোস্ট-কলোনিয়াল যুগের এইসব শেকড়হীন, জিঘাংসু অ-পশ্চিমা শাসক এলিটদের প্রাত্যহিক জীবন বর্ণনা করেছেন। গত মে মাসে, কোরিয়াতে, যখন আমি মহান জাপানি লেখক কেনজাবুরো ওয়ে’র সাথে দেখা করি, আমি শুনেছিলাম যে, তিনিও, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছিলেন, তার দেশের মিলিটারীরা কোরিয়া এবং চীন দখলের সময় যে কুৎসিত অন্যায়গুলি করেছিল, সেইকথা টোকিওতে খোলাখুলিভাবে আলোচনার কথা বলে। চেচেন এবং অনান্য সংখ্যালঘু এবং সিভিল-রাইটস গ্র“পগুলির প্রতি রাশিয়া রাষ্ট্র, ভারতে চিন্তার স্বাধীনতার উপর হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা যে অসহিষ্ণুতা দেখাচ্ছে এবং চীন যে সর্তকভাবে উগ্রিস (টরমযঁৎং) এথনিকদের নিশ্চিহ্ন করছে-এর সবগুলিই একই ধরনের বিরোধিতা দিয়ে বৃদ্ধি লাভ করছে।

যখন আগামীর উপন্যাসিকরা এই নতুন এলিটদের ব্যক্তিগত জীবন বর্ণনা করার প্রস্তুতি নিবে, তখন তাদের কোন সন্দেহ থাকবে না যে, পশ্চিম তাদের রাষ্ট্রের ভিতরে চিন্তার প্রকাশের এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে সমালোচনা করতে পারবে না। কিন্তু এখনকার দিকে ইরাক নিয়ে এবং সি.আই.এ.র বন্দিশালাগুলিতে গোপন রির্পোটগুলি নিয়ে তুরস্কে এবং অনান্য জাতিদের কাছে পশ্চিমের গ্রহণযোগ্যতা এতোটাই ক্ষতিগ্রস্থ যে, আমার মতো লোকের কাছে এটা আরো বেশি কঠিন সত্যিকারের পশ্চিমা গণতন্ত্রকে আমার পৃথিবীর অংশ বলে তৈরী করা।


ছাপা হয়:১৯.১২.২০০৫.
পোস্ট করা হয়: ১২.১২.২০০৫.
টাইম ম্যাগাজিন

(তুর্কি থেকে অনুবাদ করেছেন গধঁৎববহ ঋৎববষু)

ওরহান পামুক তুর্কির ঔপন্যাসিক। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ২০০৬ সালে। তার এই পুরস্কার পাওয়ার কিছুদিন আগে ও পরে তার বিভিন্ন লেখা অনুবাদ করা হয়, বাংলা ভাষায়। লেখাগুলি পড়ে তার সর্ম্পকে আমি আগ্রহী বোধ করি। তার লেখা পড়ার ও তার সর্ম্পকে জানার চেষ্টা করি, ইন্টারনেটে র্সাচ করে।

এখানে যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে সেইটা রাজনৈতিক। তিনি তার দেশের, মানে তুরস্কের একটা পুরানো ঘটনা নিয়া প্রকাশ্যে বলেন, যা তাকে বির্তকিত করে তোলে। সম্ভবত তিনি বলেছিলেন, অটোমান সাম্রাজ্যের সময় যে একটা গণহত্যা হয়েছিল, তাকে স্বীকার করা উচিত এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে সে সর্ম্পকে সত্য কথা জানানো প্রয়োজন। কেননা জাতি হিসাবে যেসব কুর্কীতি আছে তাকে অস্বীকার করে বা ধামাচাপা দিয়ে নিজেদেরই ছোট করা হচ্ছে বলে তার অভিমত। কিন্তু এই নিয়ে কথা বলা সম্ভবত তুরস্কে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ। আর এখানে যে রাজনীতি, তা প্রকৃতগতভাবে একটু জটিল।

ওরহান পামুকের কিন্তু সচেতনভাবেই এটা বলছেন এবং তার এই বক্তব্য আঘাত করছে উগ্র জাতীয়তাবাদীদেরকে এবং খুশি হচ্ছে পশ্চিমা গণতন্ত্রবাদীরা। দেশে তিনি নিগৃহীত হচ্ছেন, মামলা করা হচ্ছে এবং বিদেশে তাকে নিয়ে মাতামাতি করা হচ্ছে, তিনি আর্ন্তজাতিক ব্যক্তিতে পরিণত হচ্ছেন। নোবেলও পেয়ে গেলেন এর ধারাবাহিকতায়। তার এই অবস্থান কিন্তু তথাকথিত পশ্চিম কে একটা রিলিফ দিচ্ছে, এইভাবে যে, গণহত্যা তো শুধুমাত্র ইরাকেই হচ্ছে না, আফগাস্তিানেই হচ্ছে না, অটোম্যানও করেছে এক সময়। এই রাজনীতি সর্ম্পকে ওরহান পামুক অসচেতন নন। তার রাজনৈতিক অবস্থানও এখানে স্পষ্ট।

---------------------------------------------------------------------------------------------------

Friday, May 9, 2008

সত্য, ক্ষমতা, সত্তা: মিশেল ফুকোর সাথে একটি কথোপকথন

সত্য, ক্ষমতা, সত্তা: মিশেল ফুকোর সাথে একটি কথোপকথন

  • আপনি ইউনিভাসিটি অফ ভেরমন্ট-এ কী কাজে এসেছেন?

আমি এখানে এসেছি কয়েকজন মানুষের কাছে আরো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করার জন্য যে, আমি কি ধরনের কাজ করছি, জানার জন্যে তারা কি ধরনের কাজ করছেন এবং তাদের সাথে কিছু স্থায়ী সর্ম্পক স্থাপন করার জন্য। আমি একজন লেখক, একজন দার্শনিক কিংবা চিন্তা জগতের এক মহান ব্যক্তিত্ব নই: আমি একজন শিক্ষক। এখানে সামাজিক কিছু বিষয় আছে যা আমাকে প্রচ- ঝামেলায় ফেলেছে: ১৯৬০ সাল থেকে এটা শুরু হয়েছে, আরো কয়েকজন শিক্ষক আছেন যারা পাবলিক মেন-এ পরিণত হয়েছেন, একই ধরনের বাধ্যবাধকতা নিয়ে। আমি একজন নবী হতে চাই না আর বলতে চাই না যে, “দয়া করে বসুন, আমি যা বলছি তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” আমি এখানে এসেছি আমাদের কমন কাজগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্যে।

  • আপনাকে প্রায়ই অভিহিত করা হয় “দার্শনিক” হিসাবে, কিন্তু আবার “ঐতিহাসিক”, “স্ট্রাকচারালিস্ট” এবং “মার্কসিস্ট” হিসাবেও। কলেজ ডি ফ্রান্সে আপনার চেয়ারের টাইটেল হচ্ছে “চিন্তার পদ্ধতিগুলির ইতিহাসের অধ্যাপক (Professor of the History of Systems of Thought)। এর দ্বারা কী বোঝায়?

আমি মনে করি না যে, এটা জানা খুব জরুরী যে সত্যি সত্যি আমি কে। জীবনে এবং কাজের মধ্যে মানুষের মূল উদ্দেশ্য থাকে এমন একজন হওয়া যা সে প্রথম থেকেই ছিল না। আপনি যদি একটা বই লিখতে চান আর প্রথম থেকেই জানেন যে এর শেষে আপনি কী বলবেন, তাহলে আপনি কি সেটা লেখার সাহস করতে পারবেন? একটা লেখার ক্ষেত্রে বা প্রেমের সর্ম্পকের ক্ষেত্রে যা সত্যি, জীবনের ক্ষেত্রেও তা সত্যি। এই খেলাটা ততদূর পর্যন্তই অর্থপূর্ণ যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তার শেষটা জানতে পারি না। আমার কাজের ক্ষেত্র হচ্ছে, চিন্তার ইতিহাস। মানুষ একটা চিন্তাশীল প্রাণী। সে যা চিন্তা করে তা তার সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও ইতিহাসের সাথে জড়িত এবং কিছু সাধারণ ও সার্বজনীন প্রণালী এবং আনুষ্ঠানিক নির্মিতির সাথেও জড়িত। কিন্তু চিন্তা অবশ্যই সামাজিক সর্ম্পকগুলির বাইরে আলাদা একটা জিনিস। মানুষ সত্যিকারভাবে যেভাবে চিন্তা করে তা যুক্তির সার্বজনীন প্রণালীগুলি দিয়ে পর্যাপ্তভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। সামাজিক ইতিহাস এবং চিন্তার পদ্ধতিগত দিকগুলির মাঝখানে আরেকটা পথ আছে, একটা লাইন আছে-হয়ত খুব সরু-সেই পথটাই হচ্ছে চিন্তার ইতিহাসের পথ।

  • যৌনতার ইতিহাসে আপনি এমন একজন ব্যক্তিত্বের কথা বলেছেন, যে “স্থায়ী নিয়মগুলিকে বিব্রত করে এবং কোন না কোনভাবে অনাগত স্বাধীনতাকে এন্টিসিপেড করতে পারে”। আপনি কি আপনার কাজগুলিকে এই আলোকে দেখেন?

না। বরং অনেকসময় ধরে, লোকজন আমাকে জিজ্ঞাসা করত তাদেরকে বলার জন্য যে কী ঘটবে এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদেরকে একটা কর্মসূচি দেয়ার জন্যে। আমরা খুব ভালো করেই জানি যে, খুব ভালো উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও, এইসব কর্মসূচিগুলি নিপীড়নের জন্য একটা উপায় হিসাবে, একটা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। স্বাধীনতার একজন প্রেমিক হিসাবে রুশোকে ফরাসী বিপ্লবে ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক নিপীড়নের একটা আদর্শ তৈরী করার জন্যে। স্ট্যালিনিজম আর লেনিনিজম দেখলে মার্কস আঁতকে উঠতেন। আমার ভূমিকা হচ্ছে একটা শব্দ আরো জোরালোভাবে বলা-মানুষদেরকে দেখানো যে, তারা যা অনুভব করে তার চাইতে তারা অনেকবেশি স্বাধীন; মানুষ সত্য হিসাবে, প্রমাণ হিসাবে যা গ্রহণ করে, কিছু বিষয়বস্তু যা ইতিহাসের একটা নির্দিষ্ট ক্ষণের মধ্যে গড়ে উঠেছে এবং এইসব তথাকথিত প্রমাণগুলিকে সমালোচনা এবং ধ্বংস করা সম্ভব। মানুষের মনের ভিতরের কোনকিছুকে পরিবর্তন করা-এটাই একজন ইন্টেলেকচুয়ালের কাজ।

  • আপনার লেখাগুলিতে দেখা যায় যে আপনাকে সেই চরিত্রগুলি প্রবলভাবে আর্কষণ করে যারা সমাজের প্রান্তে অবস্থান করে, যেমন: পাগল, কুষ্ঠরোগী, অপরাধী, বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি, হিজড়া, খুনী, অখ্যাত চিন্তাবিদ। এটা কেন?

আমাকে প্রায়ই গাল-মন্দ করা হয়েছে ইতিহাসের মূলধারার চাইতে প্রান্তিক চিন্তাবিদদের নির্বাচন করার জন্যে। আমার উত্তরটা এই ক্ষেত্রে উদ্ধতই হবে : বপ এবং রিকার্ডোর মতো চরিত্রদেরকে অবসকিউর হিসাবে দেখা অসম্ভব।

  • কিন্তু র্নিবান্ধদের (social outcasts) প্রতি আপনার আগ্রহের কারণ কী ?

আমি অবসকিউর চরিত্রগুলি এবং প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে কাজ করি মূলত দুইটা কারণে: পশ্চিম ইউরোপীয় সমাজগুলি যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে বিন্যস্ত করে তা খুব বেশি আলাদা কিছু নয়, যা ভুলে যাওয়া হয়েছে অথবা যা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তারা আমাদের সবচেয়ে পরিচিত ল্যান্ডস্কেপের অংশ এবং আমরা তাদেরকে আর উপলদ্ধি করতে পারি না। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই ছিল খারাপভাবে আলোচিত ব্যক্তি। এটা আমার টার্গেটগুলির মধ্যে একটা যে, মানুষকে দেখানো, এমন অনেক কিছু আছে যা আমাদের ল্যান্ডস্কেপের অংশ-এবং মানুষ যে সার্বজনীন-তা আসলে কয়েকটা খুব সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলাফল। আমার সমস্ত পর্যালোচনা মানুষের সার্বজনীন অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তার ধারণার বিরুদ্ধে। তারা সংস্থাগুলির আবেগায়িত দিকগুলিকে তুলে ধরে এবং তুলে ধরে স্বাধীনতার কোন স্পেস আমরা এখনো উপভোগ করতে পারি এবং কতগুলি পরিবর্তন এখনো সম্ভব।

  • আপনার লেখাগুলি গভীর আবেগের প্রবণতা বহন করে যা পাণ্ডিত্যপূর্ণ পর্যালোচনাগুলিতে পাওয়া যায় না: যেমন ডিসিপ্লিন এবং পানিশ এ গভীর যন্ত্রণা, দি অর্ডার অফ থিন্কস এ অবজ্ঞা এবং আশা, ম্যাডনেস এন্ড সিভিলাইজেশন এ নিষ্ঠুরতা এবং বিষন্নতা।

আমার প্রতিটা কাজই আমার জীবনের অংশ। যে কোন একটা বা অন্য কারণেই হোক এইসব বিষয় দেখার এবং উপলদ্ধি করার সুযোগ আমার হয়েছিল। একটা সহজ উদাহারণ নেয়া যাক, ১৯৫০ সালের দিকে আমি একটা মনোচিকিৎসার হাসপাতালে কাজ করতাম। দর্শন পড়ার পর আমি দেখতে চাচ্ছিলাম যে, পাগলামিটা কী রকম: আমি যুক্তি বোঝার জন্য যথেষ্ঠ পাগল ছিলাম , আর আমি যথেষ্ঠ যৌক্তিক ছিলাম পাগলামি বোঝার জন্য। আমি রোগী থেকে এটেনডেন্টস পর্যন্ত যাবার জন্য স্বাধীন ছিলাম, আমার নির্দিষ্ট কোন ভূমিকা ছিল না। এটা ছিল নিউরোসার্জারির প্রস্ফুটিত হওয়ার সময়, সাইকোফার্মালজি শুরুর সময়, ট্রাডিশন্যাল সংস্থাগুলির বিদায়ের সময়। প্রথমে আমি এটা ধরে নিয়েছিলাম যে, এর প্রয়োজন আছে, কিন্তু এর তিনমাস পরে (আমি এমনিতেই সবকিছু একটু দেরিতে বুঝি), আমি প্রশ্ন করলাম “এই জিনিসগুলির কী দরকার?” এর তিন বছর পর আমি চাকরিটা ছেড়ে দেই এবং প্রচ- ব্যক্তিগত মানসিক অস্বত্বি নিয়ে সুইডেন যাই এবং এইসব প্রাকটিসগুলির ইতিহাস নিয়ে লিখতে শুরু করি (মেডনেস এন্ড সিভিলাইজেশন)। মেডনেস এন্ড সিভিলাইজেশন প্রথম খ- হওয়ার কথা ছিল। আমি প্রথম খ-টা লিখতে চাচ্ছিলাম এবং দ্বিতীয় খন্ডটা লিখতে ঘৃণাবোধ করছিলাম। এটা দেখা হয়েছিল মনোচিকিৎসা-নিকেতন এর একটা বিষয় হিসাবে, কিন্তু এটা ছিল ইতিহাসের একটা বর্ণনা। আপনি কী বিজ্ঞান এবং কপট বিজ্ঞানের পার্থক্যটা জানেন? একটা সত্যিকারের বিজ্ঞান নিজেকে আক্রান্ত মনে না করে তার নিজস্ব ইতিহাসকে বুঝতে পারে এবং গ্রহণ করে। যখন আপনি কোনো মনোচিকিৎসককে বলেন যে, তার মানসিক হাসপাতাল ল্যাজার হাউজ থেকে উৎপত্তি হয়েছে, তখন সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে।

  • আর ডিসিপ্লিন এন্ড পানিশ এর ঘটনাটা কী?

আমি অবশ্যই স্বীকার করব যে, আমার সাথে জেলখানার বা কয়েদীদের কোনো সরাসরি যোগাযোগ ছিল না, যদিও আমি একটা ফরাসী জেলখানায় সাইকোলজিস্ট হিসাবে কাজ করেছি। আমি যখন তিউনিসিয়ায় ছিলাম, তখন দেখেছি যে, লোকজনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জেলে পোরা হচ্ছে, আর এটা আমাকে প্রভাবিত করেছিল।

  • আপনার লেখাগুলিতে ক্ল্যাসিক্যাল যুগ কেন্দ্রীয় বিষয় হিসাবে এসেছে। আপনি কি ঐ সময়ের স্পষ্টতার জন্য নস্টালজিক বোধ করেন বা রেঁনেসার “দৃষ্টিগ্রাহ্যতা”র জন্য যখন সবকিছুই সংঘবদ্ধ এবং দৃশ্যমান ছিল?

অতীত সময়ের সৌন্দর্যের একটা প্রভাব আছে এবং তা নস্টালজিয়ার কারণে না। আমি খুব ভালো করেই জানি যে, এটা আমাদের নিজেদের আবিষ্কার। কিন্তু এই ধরনের নস্টালজিয়া থাকা ভালো, যতটা ভালো নিজের ছেলেবেলার সাথে সর্ম্পক থাকা যখন আপনার সন্তান আছে। কিছু সময় ধরে এই ধরনের নস্টালজিয়া থাকা ভালো এই শর্তে যে, বর্তমানের সাথে তখন সুচিন্তিত এবং পজিটিভ একটা সর্ম্পক থাকে। কিন্তু নস্টালজিয়া যদি বর্তমানের সাথে আগ্রাসী হওয়ার জন্যে এবং বর্তমানকে উপলব্ধি না করার জন্য হয়, তাহলে তা বাদ দেয়া উচিত।

  • আপনি অবসর সময়ে কী ধরনের বই পড়েন?

যে ধরনের বই আমার সবচেয়ে বেশি আবেগ জাগিয়ে তোলে, তা হচ্ছে: ফকনার, টমাস মান, ম্যালকম লরি’র অ্যান্ডার দ্যা ভলকানো।

  • আপনার চিন্তা-ভাবনার উপর এদের প্রভাবটা কী রকম?

আমি খুব বিস্মিত হয়েছি যখন বার্কলিতে আমার দুইজন বন্ধু আমার সর্ম্পকে লিখেছেন এবং বলেছেন যে, আমার উপর হাইডেগারের প্রভাব আছে
Hubert L. Dreyfus and Paul Rabinow, Michel Foucault: Beyond Structuralism and Hermeneutics (Chicago; University of Chicago Press, 1982)]। অবশ্যই এটা খানিকটা সত্যি, কিন্তু ফ্রান্সে এটা কেউ বুঝতে পারবে না। ১৯৫০ এর দিকে যখন আমি ছাত্র ছিলাম, আমি হুসার্ল, সার্ত্রে, মার্লো-পন্টি পড়েছি। আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে, কারো প্রভাব আপনাকে ছেয়ে ফেলছে তখন আপনি একটা পথ বের করার চেষ্টা করবেন। স্ববিরোধী মনে হলেও এটা যথেষ্ঠ সত্যি যে, হাইডেগারকে বোঝা একজন ফরাসীর জন্যে এতটা কঠিন নয়। যখন প্রতিটা শব্দই একটা বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন তখন হাইডেগারকে বোঝার জন্য আপনি খুব একটা বাজে অবস্থায় থাকবেন না। তার বিয়িং এন্ড টাইম কঠিন; কিন্তু তার সাম্প্রতিক কাজগুলি অনেক বেশি স্পষ্ট। নিটশে-কে আমার একটা বিস্ময়কর প্রকাশ বলে মনে হয়েছে। আমার মনে হয়েছে যে, এ পর্যন্ত আমি যা শিখেছি এটা তার চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা কিছু। আমি তাকে প্রচ- আবেগের সাথে পড়েছি এবং আমার জীবন দিয়ে ভেঙেছি, আমি পাগলাগারদের চাকরিটা ছেড়ে দিই এবং ফ্রান্স ছেড়ে দিই : আমার এমন একটা অনুভূতি ছিল যে, আমি আটকা পড়ে যাচ্ছি। নিটশে-র মাধ্যমেই আমি এইসব কিছুর প্রতি একজন অপরিচিত ব্যক্তিতে পরিণত হতে পেরেছি। আমি এখনো ফ্রান্সের সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তির সাথে এতটা জড়িত নই। আমি যদি আরেকটু কমবয়স্ক হতাম, তাহলে আমি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হতাম।

  • কেন?

আমি এর সম্ভাবনা দেখি। কারণ সেখানে একই ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক জীবন নেই; একজন বিদেশী হিসাবে আপনার জড়িত হওয়ার প্রসঙ্গ আসতো না। সেখানে আমার উপর কোনো চাপ আসতো না। সেখানে অনেক ভালো বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যাদের বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ আছে। তবে অবশ্যই সেখান থেকে আমাকে বের করে দেয়া হতে পারতো এবং সবচেয়ে জঘন্যভাবে।

  • আপনি এটা মনে করছেন কেন যে, আপনাকে তারা বের করে দিত?

আমি খুব গর্বিত এই কারণে যে, কিছু লোক মনে করে আমি ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যখন লোকজন তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করতে শুরু করে আমার মনে হয় সেখানে একটা গ-গোল আছে। তাদের মতামত অনুসারে আমি একজন ক্ষতিকর ব্যক্তি, যেহেতু আমি একজন ছদ্ম-মার্কসবাদী, একজন অযৌক্তিকতাবাদী, একজন নাস্তিবাদী।

  • আপনার দি অর্ডার অফ থিন্কস পড়ে যে কেউ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে যে, সংস্কারের জন্য যে কোনো ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা অসম্ভব, কেননা নতুন আবিষ্কারগুলির এত অর্থ এবং নিহিতার্থ আছে যে, আবিষ্কারকের পক্ষে এই বিষয়গুলি বোঝা সম্ভব নয়। আবার ডিসিপ্লিন এন্ড পানিশ এ আপনি দেখিয়েছেন যে, সংঘবদ্ধ পুলিশের সাহসের চাইতে একটা চেইন গ্যাং-এর সাহসের ক্ষেত্রটাতে হঠাৎ একটা পরিবর্তন আছে, জাঁকজমকপূর্ণ শাস্তির জায়গায় এসেছে নিয়মতান্ত্রিক সংস্থার শাস্তি। কিন্তু আপনি এই জিনিসটাও দেখিয়েছেন যে, একটা সময় যা মনে হয়েছে “সংস্কার”, তা আসলে সমাজের শাস্তি প্রদানের ক্ষমতাটাকে স্বাভাবিক করেছে মাত্র। তো, সচেতন পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব?

আপনি কী করে ভাবেন যে, আমি চিন্তা করি পরিবর্তন অসম্ভব, যেখানে আমি যা বিশ্লেষণ করেছি তা সবসময় রাজনৈতিক কাজকর্মের সাথে জড়িত? ডিসিপ্লিন এন্ড পানশ এ আমার সমস্ত চেষ্টাই হচ্ছে এই প্রশ্নটার উত্তর দেয়া এবং দেখানো যে, একটা নতুন ধরনের চিন্তা তৈরি হচ্ছে। আমরা সবাই হচ্ছি জীবন্ত এবং চিন্তাশীল বিষয়। আমি যার বিপক্ষে বলি, তা হচ্ছে সামাজিক ইতিহাস এবং চিন্তার ইতিহাসের মধ্যে যে ফাঁকটা আছে, তা নিয়ে। সামাজিক ঐতিহাসিকরা বর্র্ণনা করতে চান যে, কীভাবে মানুষ চিন্তা না করে কাজ করে, আর চিন্তার ঐতিহাসিকরা বর্ণনা করতে চান যে, কীভাবে মানুষ কাজ না করে চিন্তা করে। সবাই কাজ করে এবং চিন্তা করে। মানুষ যেভাবে কাজ করে বা প্রতিক্রিয়া জানায় তা তার চিন্তার পদ্ধতির সাথে জড়িত আর তার চিন্তা অবশ্যই একটা ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। যা আমি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি তা একটা জটিল বিষয় যা অল্প সময়ের মধ্যে মানুষকে অপরাধ এবং অপরাধীদেরকে ভিন্ন একটা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে বাধ্য করেছে। আমি দুই ধরনের বই লিখেছি। একটা হচ্ছে, দি অর্ডার অফ থিন্কস, যা শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক চিন্তার সাথে জড়িত : আর অন্যটি, ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ, যা সামাজিক রীতি-নীতি এবং প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে জড়িত। বিজ্ঞানের ইতিহাস একইভাবে বিকশিত হয় নাই যেভাবে সামাজিক সংবেদনশীলতাগুলি তৈরি হয়েছে। একটা বৈজ্ঞানিক ডিসকোর্স হিসাবে চিহ্ণিত করতে গেলে চিন্তাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু মানদ- মেনে চলতে হবে। ডিসিপ্লিন এন্ড পানিশ এ টেক্সটগুলি, প্রয়োগগুলি এবং মানুষ একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমার বইগুলিতে আমি এই পরিবর্তনগুলি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি; বস্তুগত কারণগুলি আবিষ্কার করার জন্য নয় বরং সব উপাদানগুলি দেখানোর জন্য যা মানুষের মিথস্ক্রিয়ায় এবং প্রতিক্রিয়াগুলিতে এসেছে। আমি মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। একই পরিস্থিতিতে মানুষ সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

  • আপনি ডিসিপ্লিন এন্ড পানিশ এই বলে শেষ করেছেন যে, এটা “আধুনিক সমাজের বিভিন্ন অধ্যয়নের নিয়মানুগকরণ এবং জ্ঞানের ক্ষমতার মেরুদন্ড হিসাবে কাজ করবে”। এই নিয়মানুগ এবং জ্ঞানের কেন্দ্র হিসাবে মানুষ এর ধারণার মধ্যে সর্ম্পকটা কী?

মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রায়শ্চিত্তের বিধান, শিক্ষামূলক-এইসব বিভিন্ন কর্মগুলির মাধ্যমে মানবিকতা সর্ম্পকে একটা নির্দিষ্ট রকমের ধারণা বা রূপ তৈরি করা হয়েছে, আর এখন মানুষ সর্ম্পকে এই ধারণাটা অনেকটাই নিয়মাত্মক, স্বতঃসিদ্ধ এবং সার্বজনীন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। মানবতাবাদ সার্বজনীন নাও হতে পারে, কিন্তু নির্দিষ্ট একটা পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল হতে পারে। আমরা যাকে মানবতাবাদ বলছি, তা মার্কসবাদীদের দ্বারা, উদারপন্থীদের দ্বারা, নাজীদের দ্বারা, ক্যাথলিকদের দ্বারা ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এটা বোঝায় না যে, আমরা মানবিক অধিকার বা স্বাধীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছি, কিন্তু আবার আমরা স্বাধীনতা বা মানবিক অধিকারকে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রের ভিতর সীমাবদ্ধ করতে পারি না। উদাহারণস্বরূপ, আপনি যদি আশি বছর আগে প্রশ্ন করতেন যে, নারীর সতীত্ব সার্বজনীন মানবিকতার অংশ কিনা, সম্ভবত সবাই হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিতেন। আমি মানবতাবাদের যে দিকটা নিয়ে ভীত তা হচ্ছে এটা আমাদের নৈতিকতার নির্দিষ্ট একটা রূপকে প্রকাশ করে যা যে কোন ধরনের স্বাধীনতার জন্য একটা সার্বজনীন আদর্শ। আমার মনে হয় এখানে আরো অনেক গোপন আছে, আরো অনেক সম্ভাব্য স্বাধীনতা আছে, আরো অনেক উদ্ভাবন অপেক্ষা করছে আমাদের ভবিষ্যতে, যা মানবতাবাদের মধ্যে আমরা কল্পনা করি, যা গোঁড়ামিভাবে প্রকাশ করা হয় রাজনৈতিক রংধনুর প্রতিটা দিক থেকে: বাম, মধ্যপন্থী এবং ডানদের কাছ থেকে।

  • আর এটাই কী প্রস্তাব করা হয়েছে “টেকনোলজিস অফ দি সেলফ”-এ?

হ্যাঁ। আপনি এর আগে বলেছিলেন যে, আপনার এইরকম একটা ধারণা আছে যে, আমার সর্ম্পকে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। এটা সত্যি। কিন্তু আমি মাঝে মাঝে নিজেকে প্রকাশ করি অনেক সুশৃংখল এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে। আমি যা অধ্যয়ন করেছি তা আসলে তিনটি প্রথাগত সমস্যা: (১) বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের মধ্যে দিয়ে সত্যের সাথে আমাদের সর্ম্পকগুলি কী রকম, আর এই “সত্যের খেলাগুলি”র মধ্যে সভ্যতার জন্যে কোনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটাতে আমরা বিষয় এবং বিষয়ী উভয়ই? (২) এইসব অদ্ভুত কৌশলগুলি এবং ক্ষমতা-সর্ম্পকগুলির মধ্যে দিয়ে অন্যদের সাথে আমাদের কোন সর্ম্পকগুলি আছে? (৩) সত্য, ক্ষমতা এবং সত্তার মধ্যে কোন সর্ম্পকগুলি আছে? আমি একটা প্রশ্নের মাধ্যমে এই আলোচনাটা শেষ করতে চাই: এই প্রশ্নগুলির চাইতে ক্ল্যাসিক আর কী আছে এবং এর চাইতে সুশৃংখল যাচাইয়ের পথ আর কী আছে প্রশ্ন এক, দুই ও তিন এবং এর থেকে আবার এক এ ফিরে যাওয়ার পথটাতে? আর আমি এই জায়গাটাতেই দাঁড়িয়ে আছি।

২৫ শে অক্টোবর, ১৯৮২

মিশেল ফুকো; জন্ম: ১৫ই অক্টোবর ১৯২৬, মৃত্যু: ২৫শে জুন ১৯৮৪.

ইংরেজী টেক্সটা নিচের ওয়েব পেজ-এ আছে:

http://www.thefoucauldian.co.uk/techne.htm

Wednesday, May 7, 2008

বুদ্ধিচর্চাকারীগণ এবং ক্ষমতা: মিশেল ফুকো এবং গিলেজ দেল্যুজ-এর মধ্যে আলাপচারিতা

বুদ্ধিচর্চাকারীগণ এবং ক্ষমতা:
মিশেল ফুকো এবং গিলেজ দেল্যুজ-এর মধ্যে আলাপচারিতা


মিশেল ফুকো : একবার একজন মাওবাদী আমাকে বলেছিলেন যে, ‘আমি খুব সহজেই বুঝতে পারি সার্ত্রের আমাদের সাথে থাকার উদ্দেশ্যটা; আমি বুঝতে পারি তার লক্ষ্যগুলি এবং রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণটাকে; আমি আপনার অবস্থানটাও কিছুটা বুঝতে পারি, যেহেতু আপনি বন্দিত্বের সমস্যা নিয়া সবসময় চিন্তিত আছেন। কিন্তু দেল্যুজ আমার কাছে একটা বিভ্রান্তি।’ আমি তার এই মন্তব্যে হতভম্ব, কেননা আপনার অবস্থান আমার কাছে সবসময় বিশেষভাবে স্পষ্ট মনে হয়েছে।

গিলেজ দেল্যুজ : সম্ভবত আমরা তত্ত্ব এবং বাস্তব প্রয়োগের একটা নতুন সম্পর্কের যে প্রক্রিয়া, তার অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। একটা সময় মনে করা হতো যে, বাস্তব প্রয়োগ হচ্ছে তত্ত্বের একটা ব্যবহৃত রূপ, এরই একটা ফলাফল; আবার আরেকটা সময়ে, এর বিপরীত একটা ধারণা আছে এবং ভাবা হতো যে সেটা তত্ত্বকে উদীপ্ত করে, যা ভবিষ্যতের তত্ত্বের অবয়ব সৃষ্টি করার জন্য অপরিহার্য একটা বিষয়। যে কোনো ক্ষেত্রেই, তাদের সম্পর্ককে দেখা হতো একটা সামগ্রিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটাকে আমরা ভিন্নভাবে দেখছি। তত্ত্ব এবং বাস্তব প্রয়োগের বিষয়টা অনেক বেশি অসম্পূর্ণ এবং খন্ডিত। এক দিক দিয়ে, তত্ত্ব সবসময় স্থানীয় একটা ব্যাপার এবং সবসময় একটা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্র নিয়া থাকে, কিন্তু এটা প্রযোগ করা হয় অন্য আরেকটা ক্ষেত্রের উপর, যা কম বেশি এর থেকে ভিন্ন। একটা তত্ত্বের ব্যবহারের সাথে যে সম্পর্ক তা কখনোই সাদৃশ্যমূলক না। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে, যখন একটা তত্ত্ব তার সঠিক এলাকাতে প্রবেশ করে, তখন সে মুখোমুখি হয় বাধাগুলির, দেয়ালগুলির এবং অবরুদ্ধ-অবস্থাগুলির যার প্রয়োজন হয় অন্য ধরনের ডিসকোর্সগুলিতে রিলে করার জন্য (আর এটা অনান্য ডিসকোর্সে যাওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে অন্য আরেকটা এলাকায় প্রবেশ করে)। বাস্তব প্রয়োগ হচেছ একটা তত্ত্বীয় জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় যাওয়ার একটা রিলের ক্রম এবং তত্ত্ব হচ্ছে একটা প্রয়োগ থেকে আরেকটাতে যাওয়ার রিলে পথ। কোনো একটা দেয়ালের সম্মুখীন হওয়া ছাড়া কোনো তত্ত্ব তৈরি হতে পারে না আর বাস্তব প্রয়োগটা জরুরি সেই দেয়ালটাকে ছিদ্র করার জন্য। উদাহারণস্বরূপ, আপনার কাজ শুরু হয়েছিল বন্দিত্ব নিয়া তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে, বিশেষ করে উনবিংশ শতাব্দীর একটা পুঁজিবাদী সমাজে মানসিক হাসপাতালের কাজ-কর্মের প্রেক্ষিতে। তারপর আপনি সচেতন হয়ে উঠলেন সীমাবদ্ধ মানুষজনের তাদের নিজেদের নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে, একটা রিলে পথ তৈরি করার জন্য (আবার বিপরীতভাবে, এটাও সম্ভব যে, আপনার কাজ প্রথম থেকেই তাদের সম্পর্কে একটা রিলে হয়ে ছিল); আর সেই দলটা ছিল হাজতে-সেই মানুষগুলি ছিল কয়েদে। আর এই ভিত্তিতে আপনি সংগঠিত করলেন ইনফরমেশন গ্র“প অফ প্রিজনস (জি.আই.পি.)১, একটা জায়গা যেটা শর্তগুলি তৈরি করেেলা যাতে কয়েদীরা নিজেদের সর্ম্পকে কথা বলার অনুমতি পেলো। এটা বলা সম্পূর্ণ মিথ্যা হবে, যেমনটা মাওবাদী লোকটি বলেছেন যে, এই প্রাকটিসের মধ্যে দিয়ে আপনি আপনার তত্ত্ব প্রয়োগ করছেন। এটা একটা বাস্তব প্রয়োগ ছিল না কিংবা সংস্কারের জন্য বা সনাতন ভাবধারার প্রতি ইনকোয়ারির কোনো প্রজেক্ট ছিল না। এর গুরুত্বটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা বিষয় : একটা বিশাল বলয়ের মধ্যে রিলেগুলির একটা শৃঙ্খলা, অসংখ্য অংশগুলির মধ্যের একটা যারা একইসাথে তত্ত্বীয় এবং প্রায়োগিক। একজন তত্ত্বীয় বুদ্ধিচর্চাকারী, আমাদের জন্য, শুধুমাত্র একটা বিষয় নন, সজ্ঞানতার একটা প্রতীক অথবা একজন প্রতিনিধিত্বকারী। যে কাজ করে এবং সংগ্রাম করে সে আর প্রতিনিধিত্বকারী নয়, কোনো একটার মাধ্যমেও না, একটা গ্র“প অথবা একটা ইউনিয়ন যারা তাদের বিবেকের পক্ষে দাঁড়ানোটারে যথোপযুক্ত মনে করে। আর যে বলে আর কাজ করে? এটা সবসময় অসংখ্য একটা ব্যাপার, এমনকি একটা মানুষের মধ্যেও যে কথা বলে এবং কাজ করে। আমরা সবাই হচ্ছি ‘গ্র“পসকোলস’ (
groupuscules)২। প্রতিনিধিত্বতা কখনোই বিরাজ করে না; এইখানে শুধুমাত্র ক্রিয়া আছে-তত্ত্বীয়-ক্রিয়া এবং প্রায়োগিক-ক্রিয়া, যা রিলেগুলি হিসাবে কাজ করে এবং নেটওর্য়াক তৈরি করে।

ফুকো : আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, একজন বুদ্ধিচর্চাকারীর রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ঐতিহ্যগতভাবে দেখা হয়েছে তার কাজ-কর্মের দুইটা ভিন্নরূপের ফলাফল হিসাবে : বুর্জোয়া সমাজে একজন বুদ্ধিচর্চাকারী হিসাবে তার অবস্থান হিসাবে, অর্থাৎ পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা এবং যে ভাবাদর্শ এটা তৈরি করে বা চাপিয়ে দেয় (তার সুযোগ গ্রহণ, দারিদ্র, প্রত্যাখ্যান, যন্ত্রণা-ভোগ, নাশকতামূলক কাজ-কর্মের অভিযোগগুলি, দুষ্কর্ম ইত্যাদি) তার উপর; এবং তার যথোচিত ডিসকোর্স যদ্দুর পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট সত্যকে উন্মোচন করে, রাজনৈতিক সর্ম্পকগুলিকে অনাবৃত করে, যেখানে তারা অশঙ্কিত (
unsuspected) ছিল। এই দুই ধরনের রাজনৈতিকীকরণ একটা আরেকটাকে বাদ দিয়া চলে না, সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের হওয়ার কারণে, তারা আবার সামঞ্জস্যপূর্ণও হয় না। কাউকে বলা হয় “বাদাইম্মা” (outcasts), আবার অন্যদের বলা হয় “সমাজতান্ত্রিক” (socialists)। কর্তৃত্বের অংশগুলির বিপক্ষে ভয়ংকর প্রতিক্রিয়ার সময়গুলিতে এই দুই ধরনের অবস্থানগুলি স্পষ্টভাবে বের হয়ে আসে : ১৮৪৮ সালের পরে, কমিউনের পরে, আবার ১৯৪০-এ। বুদ্ধিচর্চাকারীদের বাতিল করা হয় এবং যন্ত্রণা দেয়া হয় সেই যথার্থ সময়ে, যখন ঘটনাগুলি অখন্ডনীয় ছিল, যখন এটা নিষিদ্ধ ছিল বলা যে, রাজার গায়ে কোনো কাপড় নাই। বুদ্ধিচর্চাকারীরা তাদেরকে এই কথা বলত যারা তখনও তা দেখে নাই, তাদের নামে বলত, যাদের জন্য সত্য বলা নিষিদ্ধ ছিল : সে ছিল বিবেক, সচেতনতা এবং বাগ্মী। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় অভ্যুত্থানের পর৩ বুদ্ধিচর্চাকারীরা আবিষ্কার করলো যে, জনসাধারণের পক্ষে জ্ঞান অর্জনের জন্য আর তাদের প্রয়োজন নাই : কোনোরকম বিভ্রম ছাড়াই তারা খুব ভালোভাবে জানে, তার চাইতে এবং তারা অনেক বেশি জানে এবং তারা নিজেদেরকে প্রকাশ করতে যথেষ্ঠই সক্ষম। কিন্তু এইখানে ক্ষমতার একটা শৃঙ্খল আছে, যা বাধা দেয়, নিষেধ করে, অকার্যকর করে এই ডিসকোর্সকে এবং এই ক্ষমতাকে, একটা ক্ষমতা যা শুধুমাত্র সেন্সরশিপের কর্তৃত্বের স্পষ্ট ধারাতেই পাওয়া যায় না, বরং একজন গভীরভাবে ও সূক্ষভাবে দেখতে পাবে সমগ্র সামাজিক নেটওর্য়াকের ভিতর। বুদ্ধিচর্চাকারীরা নিজেরাই এই ক্ষমতা শৃংখলার এক একজন এজেন্ট-তাদের “বিবেক”-এর প্রতি দায়িত্ববোধের ধারণাটা এবং ডিসকোর্স এই শৃঙ্খলার অংশ তৈরি করে। একজন বুদ্ধিচর্চাকারীর ভূমিকা আর তাকে এই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে না যে, “একটু এগিয়ে থাকে আর পক্ষে থাকে” জনগণের দমন করা সত্যকে প্রকাশ করার জন্যে; বরং তার সংগ্রাম হচ্ছে ক্ষমতার রূপগুলির বিপক্ষে যা তাকে তার (ক্ষমতার) অবজেক্ট হিসাবে পরিবর্তিত করে এবং বিভিন্ন বলয়ের, যেমন “জ্ঞান”, “সত্য”, “বিবেক” এবং “ডিসকোর্স”-এর উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে।৪

এইভাবে দেখতে গেলে, তত্ত্ব কখনোই প্রকাশ করতে, অনুবাদ করতে বা সেবা দিতে পারে না বাস্তব প্রয়োগকে ব্যবহার করার জন্যে : এটা হচ্ছে বাস্তব প্রয়োগ। কিন্তু এটা স্থানীয় এবং আঞ্চলিক, যেমনটা আপনি বলছেন, কোনো সামগ্রিক বিষয় না। এটা ক্ষমতার বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ, একটা যুদ্ধ যা উন্মোচন করতে চায় এবং দুর্বল করতে চায় ক্ষমতার ভিত্তিটাকে, যেখানে তাদের অবস্থান সবচেয়ে বেশি অনির্ণেয় এবং কুচক্রী। আমরা যেখানে যুদ্ধ করছি সেটা “বিবেক জাগিয়ে” তোলার কার্যক্রম না (জনগণ অনেক সময় বুঝতে পারে যে, সচেতনতা জ্ঞানেরই একটা রূপ; এবং আত্মনিষ্ঠতার দিক থেকে সচেতনতা বুর্জোয়াদেরই একটা বিশেষাধিকার), কিন্তু ক্ষমতাকে দুর্বল করার জন্যে, ক্ষমতা দখল করার জন্যে; এটা এমন একটা কার্যক্রম যা পরিচালনা করা হয় তাদের পাশাপাশি, যারা ক্ষমতার জন্যে লড়াই করে এবং একটা দূরত্বে থেকে তাদের অলংকার হিসাবে কাজ করে না। একটা “তত্ত্ব” এই সংগ্রামের একটা আঞ্চলিক শৃঙ্খলা।

দেল্যুজ : সংক্ষেপে, এইটা তা-ই। একটা তত্ত্ব হচ্ছে একটা বাক্সভর্তি যন্ত্রপাতি। এটা কী অর্থ বহন করে তা দিয়ে কিছু করার নাই। তাকে ব্যবহারযোগ্য হতে হবে। তার অবশ্যই কার্যক্ষমতা থাকতে হবে। সে শুধুমাত্র তার নিজের জন্যে না। কেউ যদি এটা ব্যবহার না করে, এর আবিষ্কর্তা থেকে শুরু করে যে কেউ (কে আর তখন তাত্ত্বিক হতে চাইবে!), তাহলে এই তত্ত্ব কোনো কিছুই না অথবা সময়টা তার জন্যে অনুপযুক্ত। আমরা একটা তত্ত্বকে পুনরায় লিখি না বরং নতুন করে তৈরি করি; আমাদের নতুন একটা তৈরি করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না। এটা খুব আশ্চর্যজনক যে, প্র“স্ত, একজন লেখক, যিনি একজন খাঁটি বুদ্ধিচর্চাকারী হওয়ার কথা, খুব স্পষ্টভাবে এটা বলেছিলেন: আমার বইটাকে তুমি ধরে নাও একজোড়া চশমার মতো, যা দিয়ে তুমি বাইরেটাকে দেখবে; যদি এটা তোমার ভালো না লাগে আরেক জোড়া খুঁজে নাও; আমি এটা তোমার উপর ছেড়ে দিচ্ছি, তুমি নিজের মতো করে হাতিয়ার খুঁজে নাও, যেটা জরুরি তা হচ্ছে সংগ্রাম করার জন্য বিনিয়োগ করা। একটা তত্ত্ব কখনো সম্পূর্ণতা দান করে না; এইটা গুণনের (
multiplication) একটা হাতিয়ার এবং এটা নিজেকেও মাল্টিপাই করে। ক্ষমতার প্রকৃতি সামগ্রিকতা আনতে চায় এবং এটা হচ্ছে আপনার অবস্থান। আর আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত যে, তত্ত্ব প্রকৃতিগতভাবে ক্ষমতার বিপক্ষে। একটা তত্ত্ব যখন নিজেকে একটা নির্দিষ্ট পয়েন্টে জড়িয়ে ফেলে তখন তার সামান্যতম কোনো বাস্তবিক গুরুত্ব থাকে না যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা অন্য আরেকটা ভিন্ন জায়গা দিয়ে বের হতে পারে। এইজন্যেই সংস্কারের ধারণা এতোটাই মূঢ় এবং ভন্ডামিপূর্ণ। সংস্কার প্রস্তাব করা হয় দুইটাভাবে, এটা তারা করে যারা এর প্রতিনিধিত্বকারী হতে চায়, যারা অন্যদের জন্যে কথা বলার একটা পেশা বেছে নেয়, তারা ক্ষমতার একটা ক্ষেত্ররে নেতৃত্ব দেয়, এই নতুন ক্ষমতার বিপণন করে যা অবদমনের মাত্রারে দিগুণ করে; অথবা তারা এটা করে তাদের সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ বা দাবি থেকে। এই পরবর্তী কারণটা একটা সংস্কার না বরং বিপ্লবী কাজ যা ক্ষমতার টোটালিটিটাকে এবং এর ক্ষমতা পরম্পরাটাকে প্রশ্ন করে (তার আংশিকতার পুরা রূপটাকে প্রকাশ করে)। এটা অবশ্যই হাজতে দেখা যায় : সবচেয়ে ক্ষুদ্র এবং গুরুত্বহীন হাজতীদের দাবিগুলিও প্লেভেনএর (Pleven's) সংস্কারকে পাংচার করে দিতে পারে।৫ যদি কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের প্রতিবাদগুলি শোনা যেতো, তাদের প্রশ্নগুলিতে যদি মনোযোগ দেয়া হতো, সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য তা যথেষ্ঠ ছিল। অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় কোনো ধরনের সহনশীলতা নাই; এটা সবদিক দিয়েই এর চূড়ান্ত ভঙ্গুরতাকে প্রমাণ করে এবং তার প্রয়োজনে অবদমনের একটা বৈশ্বিক রূপায়ণকে প্রকাশ করে। আমার ধারণায়, আপনি-ই প্রথম, যিনি তার বইগুলিতে দেখিয়েছেন এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিখিয়েছেন যা সম্পূর্ণভাবে মৌলিক : অন্যদের জন্যে বলাটা অবমাননাকর (the indignity of speaking for others)। আমরা প্রতিনিধিত্ব করাটাকে কৌতুক করতাম এবং বলতাম যে, এটা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা এই “তাত্ত্বিক” জিনিসটার রূপান্তরের একটা পরিণতি টানতে ব্যর্থ হয়েছি-সেই তাত্ত্বিক ঘটনাকে উপলব্ধি করতে যে, যারা সরাসরিভাবে জড়িত তারাই প্রাকটিক্যালি তাদের পক্ষ নিয়ে বলতে সক্ষম।

ফুকো : এবং যখন হাজতীরা বলতে শুরু করলো, হাজত সম্পর্কে, পেনাল সিস্টেম সম্পর্কে তখন তারা বিচার সম্পর্কে একটা ব্যক্তিগত তত্ত্ব হাজির করলো। এটা এমন একটা ডিসকোর্স, যার একটা চরম মূল্য আছে, হাজতীদের এই কাউন্টার ডিসকোর্সটা হচ্ছে ক্ষমতার বিপক্ষে একটা ডিসকোর্স, যাদেরকে আমরা দুষ্কৃতিকারী বলি-আর এটা দুষ্কৃতি সম্পর্কে কোনো তত্ত্ব না। হাজতের সমস্যাটা হচ্ছে স্থানীয় এবং প্রান্তিক সমস্যা : প্রতি বছর ১০০,০০০ লোকের বেশি হাজতে যায় না। ফ্রান্সে বর্তমানে ৩০০,০০০ থেকে ৪০০,০০০ লোক হাজতে আছে। কিন্তু এই প্রান্তিক সমস্যাটাই সবাইকে বিরক্ত করতেছে। আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি যে, অনেক লোক যারা এর সাথে জড়িত না এই সমস্যাটার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন, আরো আশ্চর্য হয়েছি যে, যারা এই ডিসকোর্সের ব্যাপারে কোনোদিন কিছু শোনে নাই তারাও এইটা খুব সহজেই বুঝতে পারছে। আপনি এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? এটা কি এই কারণে না যে, পেনাল সিস্টেম হচেছ সেই রূপ যার মাধ্যমে ক্ষমতাকে সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়? একজনকে হাজতে রাখা, তাকে খাদ্য এবং উত্তাপের ব্যাপারে সীমিত করা, বাইরে যাইতে বাধা দেয়া, ভালবাসাবাসি করতে না দেয়া, ইত্যাদি-এইসবই হচ্ছে ক্ষমতা সর্ম্পকে কল্পনার সবচাইতে ক্ষিপ্ত এবং স্পষ্ট প্রকাশ। আরেকদিন আমি এক মহিলার সাথে কথা বলছিলাম, যে একসময় হাজতে ছিল আর শে বলছিল : “চিন্তা করো, আমি চল্লিশ বছর বয়সের একজন মহিলা, আর আমারে একদিন শুকনা রুটি খাওয়ার শাস্তি দিল।” এই গল্পের সবচে স্ট্রাইকিং বিষয় ক্ষমতার শিশুসুলভ প্রয়োগটা না বরং ক্ষমতাকে ক্ষমতা হিসাবে ব্যবহার করার হতাশাবাদ, সবচেয়ে প্রাচীন, তুচ্ছ, বালসুলভভাবে প্রয়োগ করার দিকটা। একটা বাচ্চা হিসাবে আমরা বুঝতে পারি, রুটি আর পানি কমিয়ে দেওয়া কী বোঝায়। হাজত হচ্ছে একমাত্র জায়গা, যেখানে ক্ষমতা তার নগ্ন রূপটাকে প্রকাশ করে, সবচেয়ে অপরিমিতভাবে করে আর সেইখানে ন্যায্যতা দেওয়া হয় নৈতিকতার ভিত্তিতে। “আমার অধিকার আছে তোমাকে শাস্তি দেওয়ার কারণ তুমি জান যে, কাউকে খুন করা বা ডাকাতি করা অপরাধ. . .” হাজতের ব্যাপারে সবচেয়ে মজার বিষয়টা হচ্ছে যে, ক্ষমতা এখানে নিজেরে আড়াল করে না বা কোনো মুখোশ পড়ে না; ক্ষমতা নিপীড়নের জন্য নিজেকে উন্মোচন করতে একদম পুঁচকে ঘটনাগুলিকেও ব্যবহার করে; এটা নৈরাশ্যবাদী আচরণ এবং একইসাথে শুদ্ধ এবং সম্পূর্ণভাবে “ন্যায্য”, কারণ এর প্রয়োগ পুরাপুরিভাবে নৈতিকতার ঘোরটোপের মধ্যে তৈরি করা। এর নিষ্ঠুর নিপীড়ন ক্রমাগতভাবে দেখানো হয় প্রশান্তভাবে খারাপের উপর ভালো’র এবং বিশৃঙ্খলার উপর শৃঙ্খলার বিজয় হিসাবে।

দেল্যুজ : হ্যাঁ এবং এর বিপরীতটাও একইভাবে সত্যি। শুধুমাত্র কয়েদীদেরকেই শিশু হিসাবে দেখা হয় না, আবার শিশুদেরকেও কয়েদী হিসাবে দেখা হয়। শিশুদেরকে একটা অপ্রাপ্তবয়স্কতার (
infantilization) মধ্যে ঢুকানো হয়, যা তাদের কাছে অপরিচিত। এর ভিত্তিতে এটা অস্বীকার করা সম্ভব না যে, স্কুলগুলি হাজতের মতোই এবং কারখানাগুলি হচ্ছে এর কাছাকাছি একটা ব্যাপার। রেনাল প্ল্যান্ট (Renault plant) এ ঢোকার দিকটা একবার দেখেন অথবা এইরকম যে কোনো জায়গাতেই: দিনে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য তিনটা টিকিট দেয়া হয়। আপনি আঠারোশ শতকে জেরেমি বেন্থামের (Jeremy Bentham) একটা লেখা পাবেন, হাজত-ব্যবস্থা সংস্কারের উপর; এই পদমর্যাদাসম্পন্ন সংস্কারের নামে প্রস্তাব করা হয় একটা বৃত্তাকার ব্যবস্থার, যেখানে পরিবর্তিত হাজতগুলি একটা মডেল হিসাবে কাজ করবে এবং যেখানে একজন আনুক্রমিকভাবে স্কুল থেকে কারখানায় যাবে, আবার কারখানা থেকে হাজতে যাবে, মানে এইভাবে চলতে থাকবে। এটা হচ্ছে সংস্কারের প্রণোদনা, প্রতিনিধিত্বের সংস্কারক । অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে, যখন মানুষ নিজের জন্যে কথা বলা এবং কাজ করা শুরু করে, তখন তারা তাদের প্রতিনিধিত্বটা অস্বীকার করে না (যদি তার বিপরীতও হয়) অন্যের কাছে; তারা একটা নতুন প্রতিনিধিত্বের বিরোধিতা করে না, ক্ষমতার একটা ভুয়া প্রতিনিধিত্ব করার চাইতে। উদাহারণস্বরূপ, আমি আপনার একটা কথা মনে করতে পারছি যে, বিচারের বিপরীতে কোনো জনপ্রিয় বিচার নাই (there is no popular justice against justice), এখানে বোঝাপড়াটা অন্য একটা লেভেলে।

ফুকো : আমি মনে করি না এই ধারণাটা এতোটা সরল যে, মানুষ আরো ভালো এবং ন্যায়সঙ্গত বিচারের রূপ প্রত্যাশা করে বিচারব্যাবস্থা, বিচারক, আদালত এবং হাজতে; বরং বাইরে থেকে এবং এসব কিছুর আগে, একটামাত্র উপলব্ধি আছে যে, ক্ষমতা সবসময় জনগণের মূল্যে ব্যবহার করা হয়। বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম তা হচ্ছে ক্ষমতার বিরুদ্ধে একটা সংগ্রাম এবং আমি মনে করি না যে, এটা বিচার ব্যবস্থার অন্যায়ের বিরুদ্ধে বা এই সংস্থাগুলির কর্মদক্ষতা বাড়ানোর কোনো সংগ্রাম। বিশেষ করে, এটা খুব স্ট্রাইকিং যে, দাঙ্গা-হাঙ্গামার এবং বিপ্লবের সময় বা রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনগুলির সময় ক্ষমতার অনান্য সংস্থাগুলি যেমন অর্থনৈতিক সংগঠন বা সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থাকেও টার্গেট করা হয়। আমার হাইপোথিসিস-কিন্তু এটা একটা হাইপোথিসিস-ই-যে জনপ্রিয় আদালতগুলি, বিপ্লবের সময়গুলাতে যেটা দেখা যায়, নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণীদের একটা উপায়, যারা জনগণের মিত্র হিসাবে থাকে, যারা উদ্ধার করে এবং পুনরায় দখল করে বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রচেষ্টাকে। এটা অর্জন করার জন্যে, তারা প্রস্তাব করে একটা আদালত ব্যবস্থার যেখানে ন্যায় বিচারের একটা সম্ভাবনা থাকে, যেখানে হয়ত রায় প্রদান করার একটা অভিনয় করা হয়। আদালতের আইনি ব্যবস্থার চিহ্নিত রূপটা আসলে বুর্জোয়া ভাবধারার ন্যায়ের মধ্যেই বিরাজ করে।

দেল্যুজ : আমাদের এই বাস্তব অবস্থার উপর ভিত্তি করে, ক্ষমতা প্রবলভাবে তৈরি করতে চায় একটা সম্পূর্ণ বা বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। তার মানে, বর্তমান সময়ের সমস্ত ধরনের অবদমন (অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি জাতিগত অবদমন, কারখানাগুলিতে অবদমন, শিক্ষা ব্যবস্থাগুলিতে এবং তরুণদের প্রতি সাধারণ অবদমন) খুব সহজেই সাধারণীকরণ করা সম্ভব ক্ষমতার দৃষ্টিকোণ থেকে। আমাদের শুধুমাত্র ’৬৮ সালের মে’র প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে এই রূপগুলির ঐক্য খুঁজতে যাওয়াটা ঠিক হবে না, বরং এটা আরো মানানসই হবে নিকট ভবিষ্যতের পূর্ণপ্রস্তুতি নিতে এবং তা সংগঠিত করতে, ফরাসী পুঁজিবাদ এখন নির্ভর করতেছে “প্রান্তিক” বেকারত্বের উপর এবং লিবারাল ধারণাটা ত্যাগ করছে এবং পুরা কাজ দেয়ার জন্য ভালো স্বৈরাচারের মুখোশ পরছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা সমস্ত ধরনের অবদমনের ঐক্যটা দেখা শুরু করতে পারি : অভিবাসীদের উপর বাধা-নিষেধ, যখন এটা স্বীকার করা হলো যে, সবচেয়ে কঠিন আর থ্যাংকলেস কজিগুলি করানো হয় অভিবাসী শ্রমিকদের দিয়ে-যা দিয়ে চলে কারখানাগুলির অবদমন, কারণ তা না হলে ফরাসীদের আবার শিখতে হবে, “স্বাদ” নিতে হবে ক্রমাগত কঠিন পরিশ্রম করার; তরুণদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় অবদমন চলে, কারণ পুলিশী ব্যবস্থায় অবদমন অনেক বেশি কার্যকর থাকে যখন সেইখানে নতুন লোকের দরকার কম পড়ে। একটা বিশাল সারির পেশাজীবীদের (শিক্ষক, মানসিক চিকিৎসক, সব ধরনের শিক্ষাবিদ, ইত্যাদি) বলা হয় সেই কাজগুলি করার জন্য যা সনাতনভাবে পুলিশদের করার কথা। এ কথা আপনি অনেকদিন আগে অনুমান করতে পারছিলেন, এবং সেই সময়ে এটা অসম্ভব বলে ভাবা হয়েছিল : কাঠামোর ভিতর সমস্ত রকমের অবরোধগুলিকে কাজে লাগানো। ক্ষমতার বৈশ্বিক নীতির বিপরীতে আমরা চালু করছি প্রতি-উত্তর, বিচ্ছিন্ন লড়াই, সক্রিয় এবং সময়ে সময়ে নিবৃত্তিমূলক প্রতিরক্ষা। আমাদের এমন সামগ্রিকতা তৈরি করার কোনো দরকার নাই যা ক্ষমতার দিক থেকে অপরিবর্তনীয়ভাবে সামগ্রিক করা আছে; আমাদের যদি একই পথে যেতে হয়, তাহলে তা কেন্দ্রিকতার রূপের মতোই হবে এবং সেই একই পুরোহিত ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করবে। আমাদের অবশ্যই পার্শ্বিক সম্বন্ধ তৈরি করতে হবে এবং নেটওয়ার্কের একটা সম্পূর্ণ শৃঙ্খলা দাঁড় করাতে হবে এবং তা জনপ্রিয় ভিতগুলির উপর; আর এটা বিশেষভাবে কঠিন। কোনোভাবেই আমরা আর বাস্তবতাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারি না প্রতিযোগিতার প্রথাগত ধারণার ভিতর একটা অবিরাম রাজনৈতিক ঘটনা হিসাবে এবং কমিউনিস্ট পার্টি বা জেনারেল ওর্য়াকার্স ইউনিয়ন(৬) এর প্রতিনিধিত্বকারীদের ক্ষমতার বিপনেন ভিতর। বাস্তবতা হচ্ছে যা সত্যিকারের অর্থে ঘটছে কারখানাগুলিতে, স্কুলগুলিতে, ব্যারাকগুলিতে, হাজতখানাতে আর পুলিশ ফাঁড়িগুলিতে। এই কাজগুলি অন্য ধরনের তথ্য নিয়া আসে সংবাদপত্রগুলিতে যা পাওয়া যায় না, তার চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু (এটা ব্যাখ্যা করে
Agence de Press Liberation (৭) কী ধরণের তথ্য বহন করে)।

ফুকো: সংগ্রাম করার জন্য প্রয়োজনীয় পথগুলি আবিষ্কার করাটা কি কঠিন না, এই কারণে যে, আমরা ক্রমাগতভাবে এড়িয়ে চলছি ক্ষমতার সমস্যাটাকে? শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়েছে উনিশ শতক পর্যন্ত, শোষণের প্রকৃতি বোঝার আগ পর্যন্ত, এবং আজ পর্যন্ত আমাদের এখনো বোঝার বাকি আছে ক্ষমতার সব মিত্রশক্তিগুলিকে। হয়তো মার্কস এবং ফ্রয়েড আমাদের বোঝার ইচ্ছাটাকে পুরাপুরি সন্তুষ্ট করতে পারেন নাই, যেই বিভ্রান্তিকর জিনিসটাকে আমরা ক্ষমতা বলি, যা একইসাথে দৃশ্যমান আবার অদৃশ্য, চোখের সামনে আবার আড়ালে লুকানো, সর্বব্যাপী। সরকার সম্পর্কে তথ্যগুলি এবং তাদের নির্মাণকৌশলগুলির সনাতন বিশ্লেষণগুলি অবশ্যই সবক্ষেত্রগুলির কথা বলতে পারে না যে, কোথায় ক্ষমতার ব্যবহার করা হয় এবং কোথায় এটা কাজ করে? ক্ষমতার প্রশ্নটা থাকে একটা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তি হিসাবে। কে ক্ষমতার ব্যবহার করে? এবং কোন ক্ষেত্রে তা করে? আমরা এখন অবশ্যই যুক্তিপূর্ণভাবে জানি কে অন্যদেরকে শোষণ করে, কে মুনাফাগুলি পায়, কোন কোন লোক এর সাথে জড়িত এবং আমরা জানি কীভাবে এইসব ফান্ডগুলি পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু ক্ষমতার ক্ষেত্রে . . . আমরা জানি যে, এটা তারা না যারা শাসন করে। কিন্তু, অবশ্যই “শাসকশ্রেণী”র ধারণাটা কখনোই যথেষ্ঠভাবে সূত্রবদ্ধ করা হয় নাই এবং অনান্য টার্মগুলিও, যেমন “কর্তৃত্ব খাটানো” . . . “বিচার করা” . . . “শাসন করা”, ইত্যাদি। এই ধারণাগুলি খুবই তরল এবং এদের বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আমাদের আরো তদন্ত করা প্রয়োজন ক্ষমতার ব্যবহারের আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলি-যে রিলে পথের মধ্যে দিয়া সে ক্রিয়াশীল থাকে এবং মাঝে মাঝে তার প্রভাবের সীমানা ক্ষমতাক্রমের খুব অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর মধ্যেও এবং নিয়ন্ত্রণ, নজরদারী, নিষিদ্ধকরণ এবং বাধাগুলির রূপের মধ্যে। সবখানে, যেখানে ক্ষমতা বিরাজ করে, তার ব্যবহার করা হয়। কঠোরভাবে বলতে গেলে, ক্ষমতার অফিসিয়াল অধিকার কারোরই নাই; তারপরও এটাকে সবসময় সক্রিয় করা হয় একটা নির্দিষ্ট দিকে; কিছু লোককে একদিকে রেখে আবার কিছু লোককে অন্যদিকে রেখে। মাঝে মাঝে এটা যথাযথভাবে বলা মুশকিল যে, কে ক্ষমতাবান, কিন্তু এটা দেখা সহজ যে, কার ক্ষমতা নাই। যদি আপনার বইটা পড়া আমার জন্য প্রয়োজনীয় মনে হয় (অ্যান্টি-অডিপাস৮) সেটা এই কারণে যে, তারা এই সমস্যাটাকে অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পারে : প্রাচীন অর্থের মানের ভিতর, চিহ্নিতকারী এবং চিহ্নিতের ভিতর, ইত্যাদি; আপনি ক্ষমতার প্রশ্নটাকে ক্ষমতার অসাম্যতাটাকে এবং তাদের সংগ্রামগুলিকে তৈরি করেছেন। প্রত্যেকটা সংগ্রাম একটা বিশেষ ধরনের উৎসকে ভরাট করছে (অসংখ্যের মধ্যে যে কোনো একটাকে, ছোট্ট উৎসগুলি-স্বল্প সময়ের বস, “এইচ.এল.এম.” এর ম্যানেজার, একজন কারারক্ষক, একজন বিচারক, একজন ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্বকারী, সংবাদপত্রের এডিটর-ইন-চিফ)। আর উৎসগুলিকে নির্দিষ্ট করা-অভিযুক্ত করা এবং বলা-যদি সংগ্রামের একটা অংশ হয়ে থাকে, এর কারণ এটা না যে আগে কেউ জানতো না। বরং এই বিষয়ে এটা বলার কারণ, তথ্যের নেটওর্য়াকের সংস্থাগুলিকে শুনতে বাধ্য করা, নামগুলি বলা, দোষীদের দিকে আঙুল তোলা, টার্গেটগুলিকে খুঁজে বের করা; ক্ষমতার বিপরীতে প্রথম পদক্ষেপ এবং ক্ষমতার বর্তমান রূপগুলির বিরুদ্ধে সংগ্রামের দীক্ষা। যদি কারাগারে বসবাসকারীরা বা হাজতীদের ডাক্তারদের ডিসকোর্স নতুন ধরনের সংগ্রামের সূচনা করে, এর কারণ তারা বাজেয়াপ্ত করে, খুব অস্থায়ীভাবে হলেও তারা ক্ষমতাবান হাজতের পরিস্থিতি সর্ম্পকে বলার জন্য-বর্তমানে হাজতের প্রশাসনিক ব্যবস্থাগুলির একচেটিয়া সম্পত্তির উপর এবং সংস্কার গ্র“পগুলির ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে। সংগ্রামের ডিসকোর্সটা অজ্ঞানতার বিপক্ষে না, বরং গোপনীয়তার বিরুদ্ধে। এটাকে একইরকম মনে হতে পারে; কিন্তু আমরা যা ধারণা করি, যদি তার চাইতে বেশি কিছু হয়? ভুলবোঝাবুঝির একটা পুরা ক্রম এই বিষয়গুলার সাথে জড়িত, যারা “সুযোগ-সন্ধানী” “অবদমিত” এবং “বলতে-না-পারা” এবং তার অনুমতি দেয় সস্তা “মনোসমীক্ষণ”কে সংগ্রামের সঠিক অবজেক্টগুলিকে ব্যাখ্যা করার জন্য। সম্ভবত এটা অপেক্ষাকৃত কঠিন, একটা অচেতন বিষয়ের চাইতে একটা গোপনীয় বিষয়কে উদঘাটন করা। সম্প্রতি দুইটা বিষয়ই ক্রমাগতভাবে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে যে, “লেখালেখি অবদমিত বিষয়গুলাকে তুলে ধরে” এবং আরেকটা বিষয় হচ্ছে “লেখালেখি অবশ্যই একটা নাশকতা মূলক কাজ” যা মনে হচ্ছে প্রতারণামূলক যা অনেক ক্রিয়ার ভিতর অনেকবারই অভিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতা পাচ্ছে।

দেল্যুজ : আপনি যে সমস্যাটা উত্থাপন করলেন, তার প্রতি সম্মান রেখে বলছি : এটা খুব স্পষ্ট যে, কে শোষণ করে, কে মুনাফা বানায়, এবং কে শাসন করে, কিন্তু এইসব কিছুর পরেও ক্ষমতা এমন একটা কিছু যা সবদিকে ছড়িয়ে আছে। আমি একটা হাইপোথিসিস বলার ঝুঁকি নিবো : মার্কসিজম-এর প্রচেষ্টাটা ছিল স্বার্থের দিক দিয়ে আবশ্যিকভাবে বিবেচনা করে সমস্যাটাকে সংজ্ঞায়িত করা (শাসকশ্রেণী নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখে)। যে প্রশ্নটা সাথে সাথে আসে : যাদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে না তারা কীভাবে বিরাজমান ক্ষমতা-ব্যবস্থাটাকে সমর্থন করবে, তাদের অংশের একটা কাজের দাবির মাধ্যমে? সম্ভবত এর কারণ বিনিয়োগের দিক থেকে, অর্থনৈতিক বা অচেতন যে কোনোভাবেই, স্বার্থটাই শেষ উত্তর না; এখানে বাসনার বিনিয়োগও আছে, যার ভূমিকা আরো বেশি গভীর এবং পরিব্যাপ্ত, আমাদের স্বার্থ যা নির্দেশ করে, তার চাইতে। কিন্তু অবশ্যই, আমরা ইচ্ছাকে স্বার্থের বিপরীতে দাঁড় করাই না, কারণ স্বার্থ সবসময় অনুসরণ করে এবং নিজেকে খুঁজে পায় যেখানে তার বাসনা আছে। আমরা চিৎকার করে রাইখ (
Reich) বন্ধ করে দিতে পারি না: জনগণ বিভ্রান্ত না; একটা নির্দিষ্ট সময়ে তারা ফ্যাস্টিট শাসন চাইছিলো! ইচ্ছার একটা ভূমিকা আছে যা ক্ষমতার ছাঁচ তৈরি করে এবং তার বিপনন করে, এটাকে একজন পুলিশের জন্য যেমন সম্পত্তিতে পরিণত করে যেমন করে একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্যেও; এই প্রেক্ষিতে, পুলিশের বা প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহৃত ক্ষমতার মধ্যে কোনো গুণগত পার্থক্য নাই। একটা সামাজিক গ্র“পের ভিতর বাসনার এইসব প্রকৃতিগত বিনিয়োগগুলি ব্যাখ্যা করতে পারে শ্রেণীস্বার্থের কারণে রাজনৈতিক দলগুলি বা ইউনিয়নগুলি কী কারণে বিপ্লবী বিনিয়োগগুলি করে বা করতে পারে, যা বেশিরভাগ সময়ই সংস্কারমুখী বা পুরাপুরি প্রতিক্রিয়াশীল ইচ্ছার দিক থেকে।

ফুকো : আপনি যেমনটা বলেছেন যে, বাসনা, ক্ষমতা এবং স্বার্থের সম্পর্কটা অনেক বেশি জটিল আমরা স্বাভাবিকভাবে যা চিন্তা করি তার চাইতে, কিন্তু আবশ্যিকভাবে তাদের জন্য না যারা ক্ষমতার ব্যবহার করে, যাদের এটা সম্পাদন করার স্বার্থ থাকে; কিংবা তাদের জন্য যারা ক্ষমতা ব্যবহার করার জন্য স্বার্থ দান করে। তাছাড়া, ক্ষমতার ইচ্ছা, ক্ষমতা এবং স্বার্থের মধ্যে একটা অনন্য সর্ম্পক স্থাপন করে। ফ্যাস্টিট পিরিয়ডের সময় এটা হতে পারে যে, জনগণ চাইছিলো কিছু লোকের কাছে ক্ষমতা যাক, সেই লোকগুলিকে তারা চিনতে পারে নাই, যারা জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রয়োগ করেছিলো এবং তাদেরকে নিজেদের বিনিময়ে এর মূল্য দিতে হয়েছে, তাদের মৃত্যুর বিনিময়ে, তাদের বিসর্জনের মাধ্যমে, তাদের গণহত্যার মাধ্যমে। তা সত্ত্বেও, তারা এই বিশেষ ক্ষমতাটা চাইছিলো; তারা চাইছিলো যে, এটা ব্যবহৃত হোক। বাসনা (
desire) , ক্ষমতা এবং স্বার্থ-এর এই খেলাটা খুব একটা মনোযোগ পায় নাই। শোষণের বিষয়টা বুঝতে আমাদের অনেক সময় লেগেছিল; এবং ইচ্ছার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার এবং এরও দীর্ঘ একটা ইতিহাস আছে। এটা সম্ভব যে সংগ্রামগুলি চলছে এবং স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বিচ্ছিন্ন তত্ত্বগুলি এই সংগ্রামগুলি থেকে উদ্ভূত হচ্ছে, এবং যা তাদের অবস্থানের থেকে অবিচ্ছিন্ন এবং আমাদের আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছে যার ভিতর ক্ষমতার চর্চা হয়।

দেল্যুজ : এই জায়গাটাতে এসে আমি আবার সেই প্রশ্নটাতে ফেরত যেতে চাই : বর্তমান সময়ের বিপ্লবী আন্দোলনগুলি বহুবিধ কেন্দ্র সৃষ্টি করছে এবং দুর্বলতা বা অপর্যাপ্ততার জন্যে না, যেহেতু একটা বিশেষ ধরনের সামগ্রিকতার ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে এবং প্রতিক্রিয়ার জন্যে বাধ্য করছে। (দৃষ্টান্তস্বরূপ, স্থানীয় প্রতি-কৌশল হিসাবে ভিয়েতনাম একটা ভালো উদাহরণ)। কিন্তু আমরা কী করে নেটওর্য়াকগুলিকে সংজ্ঞায়িত করব, এইসব সক্রিয় এবং বিচ্ছিন্ন জায়গাগুলাকে, একটা দেশ থেকে আরেকটা দেশে অথবা একটা দেশের ভিতর?

ফুকো : আপনি ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতার যে প্রশ্নটা তুলছেন, তা হয়তো এই অর্থটা বোঝায় : যখন আমরা শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করি, প্রলেতারিয়েতরা শুধুমাত্র সংগ্রামের নেতৃত্বই দেয় না বরং টার্গেটগুলিকেও ঠিক করে, তার পদ্ধতিগুলিকেও, জায়গাগুলিকে এবং সংঘর্ষের হাতিয়ারগুলিকে; এবং নিজেকে প্রলেতারিয়েতদের সাথে যুক্ত করার মানে তার অবস্থানগুলিকে, তাদের আদর্শকে এবং যুদ্ধ করার প্রবৃত্তিগুলিকে স্বীকার করা। তার মানে সম্পূর্ণ একটা চিহ্নিতকরণ। কিন্তু এই যুদ্ধটা যখন ক্ষমতার বিরুদ্ধে চালিত করা হয়, তখন যাদের উপর ক্ষমতার প্রয়োগ করা হয়েছিল তাদের ক্ষতির জন্যে, যারা এটাকে দুর্বিষহ মনে করবে, তারা নিজেদের ভূখন্ডে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করতে পারে, তাদের নিজস্ব কাজ-কর্মের মাধ্যমে (অথবা তাদের নিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমে)। একটা সংগ্রামে জড়িত হওয়া যেখানে তাদের নিজস্ব স্বার্থ জড়িত, যার উদ্দেশ্যগুলি স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে এবং যার পদ্ধতিগুলি তারা নিজেরা ঠিক করতে পারছে, তখন তারা একটা বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করছে। তারা স্বাভাবিকভাবেই নিজেরা প্রলেতারিয়েতদের মিত্র হয়ে যাচ্ছে; কেননা ক্ষমতা ব্যবহার করা হয় এমন একটা ভাবে যেখানে পুঁজিবাদী শোষণ বজায় রাখা হয়। তারা সত্যিকারভাবে প্রলেতারিয়েতদের কারণকে সমর্থন করে এসব জায়গাগুলিতে যুদ্ধ করার মাধ্যমে, যেখানে তারা নিজেদেরকে শোষিত হিসাবে দেখতে পায়। নারী, হাজতীরা, জোর করে সেনাবাহিনীতে নেয়া সৈন্যরা, হাসপাতালের রোগীরা এবং সমকামীরা এখন একটা বিশেষ ধরণের সংগ্রাম শুরু করছে ক্ষমতার বিশেষায়িত দিকটার বিপরীতে, যে বাধাগুলি এবং নিয়ন্ত্রণগুলি তাদের উপর চাপানো হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। এই ধরনের সংগ্রামগুলি আসলে বিপ্লবী আন্দোলনগুলির সাথে জড়িত, যেদিক থেকে তারা মৌলিক, আপোসহীন এবং অ-সংস্কারমুখী, এবং একই ক্ষমতার নতুন কোনো বিন্যাসের চেষ্টাকে তারা অস্বীকার করে, অন্তত, প্রভুর পরিবর্তনকেও। আর এই আন্দোলনগুলি প্রলেতারিয়েতদের বিপ্লবী আন্দোলনগুলির সাথে সম্পর্কিত যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিয়ন্ত্রণগুলির এবং সীমাবদ্ধতাগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যা ক্ষমতার একই ব্যবস্থাকে সেবা করে।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে, সংগ্রামটার যে পুরা চিত্র আমরা পাই, সেটা আপনি প্রথমে যে টোটালাইজেশন-এর কথা বলেছিলেন তা না, এই তাত্ত্বিক টোটালাইজেশনটা তৈরি হচ্ছে একটা “সত্য”-এর ভানের ভিতর। সংগ্রামটার সাধারণ রূপটা বিশেষভাবে বের হয়ে আসছে ক্ষমতা ব্যবস্থার নিজের ভিতর থেকে, ক্ষমতা যেখানে ব্যবহার করা হয় এবং প্রয়োগ করা হয় তার সমস্ত রূপ থেকে।

দেল্যুজ : আর এখানে এসে আমরা কোনো ধরনের প্রয়োগই করতে পারি না তার বিস্তৃত চরিত্রটাকে উন্মোচন না করে, যাতে আমরা অপরিহার্যভাবে নেতৃত্ব দিতে পারি-সবচেয়ে তাৎপর্যহীন দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতেও - তার ইচ্ছাটাকে সম্পূর্ণভাবে উপড়ে ফেলতে পারি। প্রত্যেকটা বিপ্লবী আক্রমণ অথবা প্রতিরক্ষা, আংশিকভাবে হলেও, এইভাবে, শ্রমিকদের সংগ্রামের সাথে যুক্ত।




পাদটীকা:

১.
"Groupe d'information de prisons": ফুকোর সাম্প্রতিক সময়ের দুইটা পাবলিকেশন (I, Pierre Riviere and Surveiller et Punir) এই সঙ্গ থেকে এসেছে।
২. উপরের বইয়ের-ই কথা; পৃষ্টা ১৮৫.
৩. মে ১৯৬৮, “মে মাসের ঘটনাবলী” হিসাবে খ্যাত।
৪.
L'Ordre du discours তে দেখুন, পৃষ্টা. ৪৭-৫৩.
৫. রেনে প্লেভেন (
Rene Pleven) ১৯৫০ এর প্রথম দিকে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
৬.
"Confederation Generale de Travailleurs."
৭. লিবারেশন নিউজ এজেন্সী ।
৮.
Nietzsche et la Philosophie (Paris: P.U.F., ১৯৬২) and Capitalisme et schizophrenie, ভলিউম.১, অ্যান্টি-অডিপাস ফেলিক্স গুট্টেরীর সাথে সহলেখক হিসাবে প্রকাশিত (Paris: Editions de Minuit, ১৯১২).
৯.
à Loyer Modéré এর বাসস্থান - মোটামুটি দামের ভাড়া বাসা।

________________________________________________________

বাংলা অনুবাদের নোট:


ইংরেজী ‘ইন্টেলেকচুয়াল’ শব্দটার বাংলা ‘বুদ্ধিজীবি’ বলতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না, বলা যায় সঠিক বলেও মনে হয় না। কারণ এতে পেশার একটা ব্যাপার আবিশ্যিকভাবে ধরে নেয়া হয়, শব্দটার ভিতর, যা সবসময় একই ঘটনা বলে আমার মনে হয় না, বরং এর সাথে চর্চার একটা ব্যাপার বেশি জড়িত বলে আমার ধারণা। এইক্ষেত্রে ‘বুদ্ধিজীবি’ শব্দটাকে এড়াতে গিয়াই বুদ্ধিচর্চাকারী, তবে ‘ইন্টেলেক’ বিষয়টাকে শুধুমাত্র ‘বুদ্ধি’ দিয়া সীমিত করা হৈছে কিনা, সেই প্রশ্নটাও আছে। আমার ধারণা, ‘বুদ্ধিচর্চাকারী’র চাইতেও ভালো বাংলা হওয়া সম্ভব।

যখনই তত্ত্ব এর প্রসঙ্গ আসে, তখনই প্রশ্ন আসে যে, কে তত্ত্ব প্রণয়ন করেন আর যিনি করেন তিনি কি একজন বুদ্ধিচর্চাকারী? একজন বুদ্ধিচর্চাকারীর দায়িত্বটা কি? সে কি জনগণের পক্ষে সত্য কথা প্রচার বা জানাবে যে, ‘সত্য’ কি? ফুকো এবং দেল্যুজ দুইজনেই একমত যে, বুদ্ধিচর্চাকারীর সেই ভূমিকাটা নিবার কোন দরকার নাই, কারণ তারা নিজেরাই হয়া উঠতে পারেন বা হয়া উঠছেন ‘ক্ষমতার এক একজন এজেন্ট’। বরং একজন বুদ্ধিচর্চাকারীর ভূমিকা হচ্ছে ক্ষমতার গোপন জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করা, যেখানে সে অপারেট করে এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামোকে প্রতিষ্ঠা করে। সেইক্ষেত্রে একা তত্ত্ব কোন অর্থই তৈরি করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা, বাস্তবে ব্যবহারযোগ্য হিসাবে আর্বিভুত হচ্ছে।

তাদের চিন্তার মিল যেমন আছে, তেমনি অমিলটাও অস্পষ্ট না। দেল্যুজ যারে বলতে চাইতেছেন ডিজায়ার বা বাসনা, ফুকো তারে বলতে চান, প্লেজার বা আনন্দ বলে। যেমন, ক্ষমতার একটা আনন্দ আছে। আবার দেল্যুজ এর ডিজায়ার কোন রেটরিক জিনিস না। লাঁকা এবং দেল্যুজের ‘ডিজায়ার’ও একই জিনিস না। লাঁকা যেখানে ডিজায়ারকে আবিষ্কার করেন, একটা ঘাটতি হিসাবে সেখানে দেল্যুজ তারে দেখতে চান একটা প্রক্রিয়া হিসাবে। ফুকো’র কথামতো মনে হয় যে, তিনি আসলে দেল্যুজের ‘ডিজায়ার’কে ‘প্লেজার’ দিয়া পরিবর্তিত করতে চান। কিন্তু ফুকোর বিশ্লেষণে ক্ষমতা যেমন একটা কেন্দ্রীয় মনোযোগ একইভাবে দেল্যুজের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টা সম্ভবত মানুষ একটা ডিজায়ার মেশিন হিসাবে। মানে, এই নিয়া আসলে আরো অনেক আলাপ আছে!

আমার ধারণা, আমাদের দেশে অনেকেই ফরাসী দার্শনিকদেরকে চিন্তার কোট করেন; কিন্তু তাদের লেখাপত্র সাধারণের আওতায় নিয়া আসার কোন কোশিশ করেন না, কেন করেন না সেইটা আমার কাছে মাঝে মাঝে আজবই লাগে। কারো মতো কৈরা কথা বলার চাইতে বা কারো কথা কোট করার চাইতে তার কথাটারে বৈলা দেয়াই তো ভালো; বরং এর থিকা নতুন কোনো চিন্তা-ভাবনার সূত্রপাত হৈতে পারে। আর ফুকো এবং দেল্যুজ এর এই কথা-বার্তা সেই নতুন চিন্তা-ভাবনার জন্য একটা ভালো উপাদান।

ফুকো এবং দেল্যুজ এর মধ্যে এই কথা-বার্তাগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হৈছে আমার কাছে, এই কারণে যে, এই কথা-বার্তাটা কিছু বিষয়কে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে এবং প্রেক্ষাপটকে বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়া সামনে আগানোর পথগুলিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন; যেখানে, তত্ত্বচিন্তা ও প্রায়োগিকতার সর্ম্পকটাকে তার ব্যাখ্যা করেন এবং তাদের স্বরূপ ও সর্ম্পকটাকে নতুন জায়গায় নিয়া আসেন।

এই আলাপচারিতা সম্পর্কে বলা যায়, ফুকো এবং দেল্যুজ দুইজনে ঘনিষ্ঠ লোক ছিলেন, একসাথে বেশ কিছু কাজও করছেন। দ্জুনেই বলা যায় ছিলেন, অ্যাকাডেমিক গুরু। দেল্যুজের একটা বইয়ের উপর আলোচনা লিখতে গিয়া ফুকো বলছিলেন যে, ‘হয়তো একদিন এই শতাব্দীকে বলা হবে দেল্যুজিয়ান শতাব্দী।’ এই সার্টিফিকেট এর উল্লেখ মোটামুটি দেল্যুজের সব বইয়ের পিছনেই দেয়া থাকে। আর ১৯৮৪ সালে ফুকো মারা যাওয়ার পর দেল্যুজ তার উপর একটা বই লেখেন এবং দেল্যুজ বিভিন্ন জায়গায় ফুকোর বিষয়গুলিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন।

এই আলাপটা রেকর্ড করা হয় ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ; এবং এটা ছাপা হয় লার্ক-এর (খ'অৎপ) ৪৯ নম্বর সংখ্যায়, পৃষ্ঠা ৩-১০; যে সংখ্যটা করা হৈছিল দেল্যুজের উপর। লিখাটা লার্ক-এর পারমিশন নিয়া রিপ্রিন্ট করা হয় ইন্টারঅ্যাক্টিভিস্ট নামে একটা ওয়েব সাইটে (যঃঃঢ়://রহভড়.রহঃবৎধপঃরারংঃ.হবঃ/ধহধষুংরং/০৩/০১/১৩/০০৫৬২০০.ংযঃসষ)। বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে সেই ইংরেজীটাই নেয়া হৈছে। এর ফুটনোটগুলি লার্ক-এর সম্পাদকের দেয়া।

বাংলা অনুবাদটা প্রথম প্রচারিত হয় কবিসভা নামে একটা ওয়েব গ্র“পে, সম্ভবত ২০০৬ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসে এবং দৈনিক সমকালের সাহিত্য পাতা কালের খেয়াতে ছাপা হয় ২০০৭ খ্রীষ্টাব্দের প্রথম দিকে।

এন্টি-অডিপাস এর প্রস্তাবনা।।মিশেল ফুকো।।

এন্টি-অডিপাস এর প্রস্তাবনা
মিশেল ফুকো


১৯৪৫-৬৫ সালের দিকে (আমি ইউরোপের কথা বলছি), সঠিকভাবে চিন্তা করার একটা নির্দিষ্ট পথ ছিল, রাজনৈতিক ডিসকোর্সের একটা নির্দিষ্ট স্টাইল ছিল, বুদ্ধিচর্চার ছিল একটা নির্দিষ্ট ইথিকস। তখন একজনের মার্কস এর অভিধাগুলির সাথে খুব পরিচয় ছিল এবং তার স্বপ্নগুলি ফ্রয়েডের চাইতে খুব বেশি দূরের ছিল না। তাকে ব্যবহার করতে হতো চিহ্ন-ব্যবস্থাকে-চিহ্নিতকারীকে-সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে। এই তিনটা ছিল আবশ্যিক প্রয়োজন, সেই সময়ের সত্যের মাপকাঠি এবং সেই সময়ে গ্রহণযোগ্য হিসাবে, লেখালেখির এবং কথা-বার্তার অদ্ভুত কাজটাকে তা পূর্ণ করে রেখেছিল।

তখনই আসলো, সংক্ষিপ্ত, দুর্দান্ত আবেগের, বিজয়োল্লাসের, বিভ্রান্তিকর বছরগুলি। আমাদের পৃথিবীর প্রবেশদ্বারে, অবশ্যই, সেখানে ছিল ভিয়েতনাম এবং ক্ষমতার বিপক্ষে প্রথম মেজর ধাক্কা ছিল সেটা। কিন্তু এখানে, আমাদের দেয়ালগুলির ভিতর, তখন আসলে কী ঘটেছিল? বিপ্লবী এবং দমনবিরোধী রাজনীতির একটা ভরাট (
an amalgan)? একটা যুদ্ধ চলছিলো দুইটা ফ্রন্টে-সামাজিক শোষণ এবং মানসিক দমনের ক্ষেত্রে? লিবিডোর একটা উচ্ছ্বাস যা শ্রেণিসংগ্রামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছিল? হয়তো। যে কোনো মাত্রাতেই, এটা সেই পরিচিত, দ্বান্দ্বিক ব্যাখ্যা যা সেই বছরগুলির ঘটনাগুলির দাবি করছিলো। স্বপ্নটা, যা তার ব্যাপ্তিকালকে নিক্ষেপ করেছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ফ্যাসিজমের মধ্যে; ইউরোপের সবচেয়ে স্বাপ্নিক অংশে-উইলিয়াম রিখ-এর জার্মানিতে এবং ফ্রান্সের সুরিয়ালিস্টিকদের মধ্যে-যা ফিরে এসেছিলো এবং নিজের জন্য বাস্তবতার আলো জ্বেলেছিলো-মার্কস এবং ফ্রয়েড একই ভাস্বর আলোতে।

কিন্তু সত্যিই কি এটা ঘটেছিলো? ত্রিশের ইউটোপিয়ান প্রজেক্টটা কি আবারও শুরু হয়েছিল, এবার কি ঐতিহাসিক প্রয়োগের মাত্রার উপর? অথবা অন্যদিক থেকে, সেখানে কি রাজনৈতিক সংগ্রামের একটা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, মার্কসীয় ভাবধারা যা মনে করেছিলো বাইরের কিছু বলে? বাসনার একটা অভিজ্ঞতা এবং প্রকৌশলের দিক দিয়ে যা ফ্রয়েডিয়ান ছিল না? এটা সত্যি যে, পুরনো ব্যানারগুলি তুলে ধরা হচ্ছিল, কিন্তু সংগ্রামটা বদল হয়েছিলো এবং ছড়িয়ে পড়ছিলো নতুন ক্ষেত্রগুলিতে।

এন্টি-অডিপাস সর্বপ্রথম দেখিয়েছে যে, কতটুকু জায়গা বলা হয়েছে। কিন্তু এটা তার চেয়ে বেশি কিছু করেছে। এটা পুরনো আইডলগুলিকে অবমাননা করে সময় নষ্ট করে নাই, যদিও তা ফ্রয়েডকে নিয়ে প্রচুর মজা করেছে। সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, এটা আরো এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়।

এন্টি-অডিপাসকে একটা তাত্ত্বিক রেফারেন্স হিসাবে পড়লে ভুল হবে (আপনি জানেন যে, অতি-নকিব তত্ত্ব শেষ পর্যন্ত সবকিছুকেই ঘিরে রাখে, যা শেষ পর্যন্ত সামগ্রিকতা দেয় এবং পুনরায় আশ্বস্ত করে, যাকে বলা হয় যে আমাদের “খুব বেশি দরকার” আমাদের ছত্রভঙ্গের এবং স্পেশালাইজেশনের সময়টাতে যখন কোনো “আশা” আর থাকে না)। কারো এইখানে একটা “দর্শন”-এর খোঁজ করা উচিত না, যা পাওয়া যাবে ভুরি ভুরি অসাধারণ নতুন অভিমতগুলি এবং বিস্ময়কর ধারণাগুলির মধ্যে: এন্টি-অডিপাস একটা চটকদার হেগেল না। আমি মনে করি এন্টি-অডিপাসকে পড়া যেতে পারে একটা “শিল্প” হিসাবে, উদাহরণস্বরূপ, এই ধারণার মধ্যে যা এটা বহন করে “ইরোটিক শিল্প” টার্মটার মাধ্যমে। সংখ্যাধিক্যগুলির, প্রবহমানতাগুলির, সুবিন্যস্তকরণগুলির এবং সংযোগগুলির বিমূর্ত অভিমতগুলি দিয়ে জ্ঞাত হয়ে বাসনার সাথে বাস্তবতার এবং পুঁজিবাদী “মেশিন” সম্পর্কের বিশ্লেষণটা সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলির উত্তরগুলি দেয়। প্রশ্নগুলি খুব একটা উদ্বিগ্ন নয় এই বিষয়ে যে, এটা কেন অথবা তাহলে তারপর কীভাবে আগাব। কীভাবে একজন বাসনাকে সম্পর্কিত করে চিন্তা, ডিসকোর্স এবং কর্মের সাথে? কীভাবে বাসনা পারে এবং তার কর্তৃত্বগুলিকে প্রয়োগ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রটার মধ্যে এবং আরো তীব্র হয়ে উঠে বিন্যাসকে প্রতিষ্ঠা করার সময় বিপর্যস্ত করার প্রক্রিয়ায়? আরস ইরোটিকা, আরস থিওরিটিকা, আরস পলিটিকা।

যেখান থেকে আসে যে, এই তিনটা বিপক্ষ মুখোমুখি হয়েছে এন্টি-অডিপাস দ্বারা। তিনটা বিপক্ষেরই একইরকম শক্তিমত্তা না, যা বিপদের মাত্রাভেদে বিভিন্ন এবং এই বইটা এদের মোকাবিলা করেছে, ভিন্ন ভিন্ন পথে :

১. রাজনৈতিক সন্ন্যাসী, বিষণœ মিলিট্যান্ট, তত্ত্বের সন্ত্রাসীরা যারা সংরক্ষণ করে রাজনীতির খাঁটি বিন্যাস এবং রাজনৈতিক ডিসকোর্স। বিপ্লবের আমলারা এবং সত্যের সরকারী কর্মচারীরা।
২. বাসনার গরিব প্রকৌশলীরা-প্রত্যেকটা চিহ্ন এবং আলামতের মনোচিকিৎসকরা এবং সেমিওলোজিস্টরা-যারা হ্রাস করে বাসনার সংখ্যাধিক্যকে গঠনের এবং ঘাটতির বাইনারি নিয়মের মাধ্যমে।
৩. শেষ কিন্তু অ-গুরুত্বপূর্ণ নয়, সবচেয়ে বড় শত্র“, কৌশলগত শত্র“ হচ্ছে ফ্যাসিজম (যেখানে এন্টি-অডিপাস হচ্ছে অনান্যগুলির প্রতিপক্ষ, যা অনেকটাই কৌশলগত যুদ্ধ)। এবং শুধুমাত্র ঐতিহাসিক ফ্যাসিজমই নয়, হিটলার আর মুসোলিনির ফ্যাসিজম-যা নিজেকে স্থানান্তর করতে সক্ষম এবং জনসাধারণের বাসনাকে খুব কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে-কিন্তু আমাদের সবার মধ্যে যে ফ্যাসিজম আছে, আমাদের মাথার ভিতরে, আমাদের প্রতিদিনের আচার-আচরণের মধ্যে, যে ফ্যাসিজম আমাদের ক্ষমতাকে ভালবাসার কারণ, সেই জরুরি জিনিস যা কর্তৃত্ব করে এবং আমাদেরকে শোষণ করে।

আমি হয়ত বলবো যে এন্টি-অডিপাস (এর লেখকরা হয়তো আমাকে মাফ করবেন) হচ্ছে ইথিকস-এর একটা বই, ফ্রান্সে অনেকদিন পর লেখা ইথিকস-এর উপর লেখা প্রথম বই (হয়তো এটা ব্যাখ্যা করে যে, কেন এর সাফল্য একটা নির্দিষ্ট “পাঠকগোষ্ঠী”র মধ্যে সীমাবদ্ধ না : এন্টি-অডিপাস হয়ে উঠছে একটা জীবন-আচরণ, চিন্তা করার এবং বেঁচে থাকার একটা পথ)। কীভাবে একজন নিজেকে বাঁচাবে ফ্যাস্টিট হওয়া থেকে, যখন (বিশেষ করে) একজন বিশ্বাস করে যে সে একজন বিপ্লবী যোদ্ধা? কিভাবে আমরা রক্ষা পাবো আমাদের কথাগুলি আর আমাদের কাজগুলি থেকে, আমাদের হৃদয়গুলি আর আমাদের আনন্দগুলি থেকে, ফ্যাসিজমের? কী করে আমরা খুঁজে বের করবো ফ্যাসিজমকে যা আমাদের আচার-আচরণে বদ্ধমূল হয়ে আছে? খ্রিষ্টান নীতিবিদরা খুঁজে বের করে আত্মার গভীরে মাংসল কক্ষে যে চিহ্নগুলি আছে। দেল্যুজ এবং গুট্টেরী, তাদের দিক থেকে তাড়া করেছেন শরীরের ভিতর ফ্যাসিজমের সামান্যতম চিহ্ন খুঁজে পেতে।

সেইন্ট ফ্রাসোঁ ডি সেল১ এর প্রতি বিনয় ও শ্রদ্ধা রেখে একজন বলতে পারে যে, এন্টি-অডিপাস হচ্ছে একটা নন-ফ্যাসিস্ট জীবনের ভূমিকা।

এখন বর্তমান অথবা আসন্ন যে কোনো ধরনেরই হোক, ফ্যাসিজমের সব ধরনের রূপের বিরুদ্ধে, বেঁচে থাকার এই শিল্প, যা একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক দরকারী প্রিন্সিপালকে তুলে ধরে, তাকে যদি আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করতে চাই, যদি আমি এই মহান বইটাকে প্রতিদিনের জীবনের একটা ম্যানুয়াল বা গাইড হিসাবে তৈরি করতে চাই, তাহলে আমি তা বলবো এইভাবে :

  • স্বাধীন রাজনৈতিক কর্ম, যা সব ধরনের একত্ববাদী এবং সমগ্রতাবাদী ভ্রম থেকে মুক্ত।
  • কর্ম, চিন্তা এবং বাসনাগুলি তৈরি করা দ্রুত-বিস্তার, সন্নিধি ও বিয়োজকের উপর নির্ভর করে এবং বিভক্তি ও পিরামিড পুরোহিততন্ত্রের মাধ্যমে নয়।
  • নেতিবাচক (আইন, সীমা, নপুংসককরণ, অভাব, যুক্তির ফাঁক) এর সমস্ত পুরনো ক্যাটাগরিগুলি থেকে আনুগত্য প্রত্যাহার করা, যাকে পশ্চিমা চিন্তা-ধারা ক্ষমতার একটা রূপ হিসাবে এবং বাস্তবতাকে গ্রহণ করার জন্য অনেকদিন ধরে পবিত্র বলে গণ্য করেছে। পজিটিভ এবং বহুবিদকে শ্রেয় মনে করা, শ্রেয় মনে করা পার্থক্যকে সমরূপতার উপরে, প্রবাহগুলিকে একতাগুলির বিপরীতে, ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থাগুলিকে শৃংখলাগুলির বিপরীতে। বিশ্বাস করা যে, যা কিছু উৎপাদনক্ষম, তা আসনাশ্রয়ী নয়, বরং যাযাবর।
  • এটা মনে করবেন না যে একজনকে বিপ্লবী হতে হলে তাকে বিষণœ হতে হবে, এমন কি এই বিষয়ের মধ্যে যে, যুদ্ধ করা একটা জঘন্য ব্যাপার। এটা বাসনার সাথে বাস্তবতার সংযোগ (এবং এটা প্রতিনিধিত্বের রূপের মধ্যে ফিরে যাওয়া নয়) যা বিপ্লবী শক্তির অধিকারী।
  • চিন্তাকে ব্যবহার করো না সত্যের ক্ষেত্রে একটা রাজনৈতিক প্রয়োগের গ্রাউন্ড হিসাবে, অথবা রাজনৈতিক কর্ম থেকে অবিশ্বাসের দিকে, এমন কি একটা অনুমান হিসাবেও, চিন্তার একটা রেখা হিসাবেও না।
  • রাজনীতির কাছে এই দাবি করো না যে, সে ব্যক্তির “অধিকারগুলি”কে ফিরিয়ে দেবে, যেহেতু দর্শন তাদেরকে সংজ্ঞায়িত করেছে। ব্যক্তি ক্ষমতারই একটা ফলাফল। প্রয়োজন হচ্ছে “অ-ব্যক্তিকীকরণ”-এর, গুনন এবং স্থানচ্যুত করার মাধ্যমে, বিভিন্ন মিশ্রণের ভিতর দিয়ে। এই গ্র“পটা অর্গানিক অঙ্গীকার হবে না যা ব্যক্তিদেরকে এক করে একটা পুরহিততন্ত্রের ভিতর, বরং এটা হবে অ-ব্যক্তিককরণের একটা স্থির উৎপাদনযন্ত্র।
  • ক্রমে ক্ষমতার অনুরক্ত হয়ো না।

এটা হয়তো বলা যায় যে, দেল্যুজ এবং গুট্টেরী ক্ষমতার বিষয়ে খুব একটা সর্তক ছিলেন না, যা তারা চেষ্টা করেছেন তাদের নিজস্ব ডিসকোর্সের ভিতর ক্ষমতার প্রভাবগুলিকে নিরপেক্ষ করে তুলতে। যদিও, এই খেলাগুলি আর ফাঁদগুলি ছড়িয়ে আছে বইটার সর্বত্র, যার অনুবাদ করাটা একটা সত্যিকারের দক্ষতার কাজ হবে। কিন্তু এটা ভাষার পরিচিত ফাঁদগুলি নয়: পরবর্তী কাজগুলি পাঠককে আন্দোলিত করবে তাকে ম্যানিপুলেশন-এর বিষয়ে সচেতন না করে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে জয় করবে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এন্টি-অডিপাস এর ফাঁদগুলি হচ্ছে হাস্যরসের-এতগুলি আমন্ত্রণ আছে যে, একজন হয়তো বের হয়ে যাবে, টেক্সট থেকে বাইরে বের হয়ে আসবে এবং সজোরে দরজাটা বন্ধ করে দেবে। একজন হয়তো প্রায়ই মনে করতে পারে যে, এর সবকিছুই হাসি-তামাশা আর খেলা, যখন প্রয়োজনীয় একটা কিছু ঘটছে, চূড়ান্ত চিন্তাশীল একটা কিছু : ফ্যাসিজমের সমস্ত ধরনের বৈচিত্রের তালাশ করা, প্রচুর থেকে শুরু থেকে করে যা আমাদের চারপাশে আছে এবং আমাদেরকে নিংড়ে নিয়ে সাধারণ করে তোলে, যা স্থাপন করে আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের নির্মম তিক্ততাগুলিকে।

১. তিনি সতেরোশ শতাব্দীর একজন পাদ্রী এবং জেনেভার বিশপ ছিলেন, যিনি তার র্ধামিক জীবনের ভূমিকা নামে বইটার জন্য পরিচিত।

_______________________________________________________
বাংলা অনুবাদের নোট:

এন্টি-অডিপাস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। রচয়িতা, গিলেজ দেল্যুজ ও ফেলিক্স গুট্টেরী। প্রথম পর্বের নাম রাখা হৈছিল, ক্যাপিটালিজম এন্ড সিজোফ্রেনিয়া। যার দ্বিতীয় খন্ডের নাম এ থাউজেন্ড পিটেলস, প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। ফুকোর এই রচনাটা প্রথম ফরাসী ভাষায় প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। পরে আলোচ্য গ্রন্থের আমেরিকান সংস্করণের ভূমিকা হিসাবে ইংরেজিতে আসে। বাংলা ভাষান্তরের ক্ষেত্রে, পল রেবিনিউ সম্পাদিত দি এসেনসিয়াল ওয়াকর্স অফ ফুকো’তে প্রকাশিত টেক্সটা ফলো করা হয়েছে।

ফুকো এন্টি-অডিপাসকে একটা তত্ত্ব হিসাবে আবিষ্কার করেন না, বরং আবিষ্কার করেন একটা বাস্তবতা হিসাবে । এই লিখাটাকে অনেকেই বলছেন একটা অ-ব্যক্তিকীকরণ অথবা অ-ফ্যাসিস্ট ম্যানিফেস্টো এবং সন্দেহ ছাড়াই ফুকো খুবই সরাসরিভাবে বলছেন, কথাগুলিকে। এন্টি-অডিপাস এর ভূমিকাটাকে তিনি আবিষ্কার করছেন নতুন একটা চিন্তার ভিত্তি হিসাবে, যেখানে একটা চিন্তার কাঠামো নিশ্চিতভাবেই নির্দিষ্ট কিছু ইথিকস দিয়া চালিত হৈতো, অ্যান্টি-অডিপাস তার ভিত্তিগুলিকে অগ্রাহ্য করে এবং বাস্তবতার নতুন বিবরণ উন্মোচন করে। এইটা শুধুমাত্র কোন তত্ত্বের কাজ করে না, এটা জড়িত করে বাস্তবকে।

এর উপর ভিত্তি করে ফুকো কিছু নীতিমালার কথা বলেন, যার উপলদ্ধিটা জরুরী বলে মনে হয়, বিশেষ কৈরা, শেষ যে পয়েন্টটা, ক্রমে ক্ষমতার অনুরক্ত হয়ো না। তবে ‘ক্ষমতা’র প্রশ্নটাকে এন্টি-অডিপাস মোকাবিলা করতে পারে না বলেই তার অভিমত।
এন্টি-অডিপাস যখন ফ্রয়েডের মনোবিশ্লেষণকে অস্বীকার করে তখন স্বাভাবিকভাবেই আমার কৌতুহল হৈছিল যে, লাঁকা’র প্রতিক্রিয়া কি ছিল তখন? খুঁজতে গিয়া দেখা গেলো ১৯৯৫ সালে, দেল্যুজ মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে, আরেক ফরাসী দার্শনিক
Didier Eribon তারে জিজ্ঞাসা করেন, লাঁকা’র সাথে তার সর্ম্পক বিষয়ে। জবাবে দেল্যুজ তারে একটা কাহিনি শোনান, যা ছিল, এইরকম: “লাঁকা আমাকে চিনেছিলেন যখন তিনি একটা সেশন আমার বই এর উপর আলোচনা করছিলেন (দেল্যুজের মাসোইজম: কোল্ডনেস এন্ড ক্রুয়েলিটি, ১৯৬৭)। আমাকে এটা নিয়ে বলা হয়েছিল, যদিও আমি এর চাইতে বেশি কিছু জানতাম না - যে, তিনি আমার বইয়ের পিছনে এক ঘন্টারও বেশি সময় ব্যয় করেছিলেন। এরপর তিনি লিয়েনে একটা সম্মেলনে এসেছিলেন, যেখানে আমি তখন পড়াতাম।
তিনি সেখানে একটা অবিশ্বাস্য বক্তৃতা করলেন . . . যেখানে তিনি তার বিখ্যাত ফর্র্মূলার কথা প্রকাশ করলেন, “সাইকোঅ্যানালাইসিস সবকিছুই করতে পারে, শুধুমাত্র একটা ইডিয়টকে বুদ্ধিমান বানানো ছাড়া।” এই সম্মেলনের পর তিনি আমাদের এখানে ডিনারে আসলেন। আর যেহেতু তিনি খুব দেরি করে ঘুমাতে যেতেন, তিনি অনেক লম্বা সময় ছিলেন। আমি মনে করতে পারি: তখন প্রায় মধ্যরাত পার হয়ে গেছে এবং তার তখন একটা বিশেষ ধরণের হুইস্কির খুবই প্রয়োজন দেখা দিলো। সত্যি কথা, সেটা একটা ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের রাত ছিল।
তার সাথে মুখোমুখি হওয়ার আসল ঘটনাটা ঘটেছিল এন্টি-অডিপাস বের হওয়ার পর। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, তিনি এটা ভালোভাবে নেন নাই। তিনি অবশ্যই এটা আমাদের বিপক্ষে নিয়েছিলেন, আমার এবং ফেলিক্স এর। কিন্তু অবশেষে, এর কয়েকমাস পরে, তিনি সমন পাঠালেন - এ নিয়ে আর অন্য কোন কথা ছিল না। তিনি আমাকে দেখতে চান। আর তাই আমিও গেলাম। তিনি আমাকে তার উপকক্ষে অপেক্ষা করালেন। ঘরটি মানুষজনে পরিপূর্ণ ছিল, আমি জানতাম না তারা কি রোগী, ভক্ত না সাংবাদিক ছিল . . . তিনি আমাকে অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করালেন - বেশ একটু বেশি সময়ই, একই তো ব্যাপার - এবং অবশেষে তিনি আমাকে গ্রহণ করলেন। তিনি তার সব ভক্তদের একটা লিস্ট তুলে ধরলেন এবং বললেন যে, তারা সবাই অকাজের (একমাত্র জেঁকুইস-এলান মিলারকে নিয়েই তিনি কোন বাজে কথা বলেন নাই)। আমার হাসি পেলো, কারণ ইরহংধিহমবৎ ও আমাকে এইরকম একটা দৃশ্যের কথা বলেছিলেন: ফ্রয়েড বাজে কথা বলছেন জোনস, আব্রাহাম, এদের সর্ম্পকে এবং ইরহংধিহমবৎ যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান ছিলেন বোঝার জন্য যে, ফ্রয়েড তার অনুপস্থিতিতেও তার সর্ম্পকে এইসব কথা বলবেন। তো লাঁকা কথা বলছিলেন, আর সবাইকে দোষী করছিলেন, মিলারকে ছাড়া। আর তারপর তিনি আমাকে বললেন “আমি এখন তোমার মতো কাউকে চাই।”

দেল্যুজের কাজই প্রমাণ করে যে, তিনি লাঁকার এই চাওয়াতে কতোটা সাড়া দিয়েছিলেন! অবশ্য দেল্যুজের লাঁকা বিশ্লেষণ নিয়াও সমালোচনা যে নাই, তাও না; বর্তমান কালের অনেক রথী-মহারথীরাই এতে আছেন। এমন কথাও আছে যে, দেল্যুজ/গুট্টেরী আসলে একই কাজ করছেন লাঁকাঁর প্রতি, যেটা কার্ল গুস্তাভ ইয়ং করছিলেন, ফ্রয়েডরে নিয়া। যদিও বইটাতে লাঁকা সর্ম্পকে কোন বাজে কথা বলা নাই, তারপরও লাঁকা-অনুসারী জিজেক একে চরমভাবে নিছেন এবং দেল্যুজের সবচে’ বাজে বই বলে রায় দিছেন, যদিও লাঁকা নিজে কোনসময়ই সেই কাজ করেন নাই। বরং লাঁকার পরবর্তী চিন্তায় বিষয়গুলিকে আরো মনোযোগের সাথে নিছিলেন।

বাংলা অনুবাদটা এর আগে ওয়েব গ্র“প কবিসভাতে প্রথম প্রচারিত হৈছিল, সম্ভবত ২০০৬ খ্রীষ্টাব্দের প্রথম দিকে।

পুরাটাই আবার এডিট করা লাগবো।

ফুকো

ফুকো


“যা-ই হোক, আমার ব্যক্তিগত জীবন মোটেই চমকপ্রদ নয়। যদি কেউ ভেবে থাকেন যে আমার কোন কাজ আমার জীবনের এই এবং এই অংশ ছাড়া বোঝা যাবে না, আমি সেই প্রশ্ন ভেবে দেখতে সম্মত আছি। আমি উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত যদি আমি সম্মত হই। আর যেহেতু আমার ব্যক্তিগত জীবন আর্কষণীয় কিছু না, এটাকে একটি গোপন হিসাবে তৈরি করার কোন দরকার নাই। একইভাবে, এইটাকে পাবলিকাইজ করারও কোন দরকার নাই।”

মিশেল ফুকো, স্টিফেন রিগনিস এর সাথে কথা-বার্তা, টরেন্টো, ১৯৮২.

‘আমি চাইবো আমার বইগুলি হয়ে উঠুক এক ধরনের টুল-বাক্স যা অন্যরা তল্লাশি করতে পারে একটা যন্ত্র পাওয়ার জন্য যা তারা ব্যবহার করতে পারবে তাদের নিজেদের এলাকায় . . . আমি চাইবো [আমার কাজ] একজন প্রশিক্ষকের কাছে, একজন ওয়ার্ডেনের কাছে, একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে, একটি বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিবাদকারীর কাছে প্রয়োজনীয় হবে। আমি একটা পাঠক সমাজের জন্য লিখি না, আমি লিখি ব্যবহারকারীদের জন্য, পাঠকদের জন্য না।”

মিশেল ফুকো (১৯৭৪)

'Prisons et asiles dans le mécanisme du pouvoir' in Dits et Ecrits, t. II. Paris: Gallimard, 1994, pp. 523-4.



. . . . . . . . . . . .


দার্শনিক ধারায় ফুকোকে যতদূর পর্যন্ত ধরা যায়, তা হচ্ছে কান্টের সমালোচনামূলক ধারা এবং তার প্রকল্পটাকে বলা যায় চিন্তার সমালোচনামূলক ইতিহাস। এটাকে একটা ধারণার ইতিহাস বললে সঠিক হবে না যা হচ্ছে একই সময়ে ভুলগুলির পর্যালোচনা যা ঘটনার বিচারের পর মানদন্ড হিসাবে বেরিয়ে আসতে পারে; অথবা ভ্রান্ত ব্যাখ্যাগুলির অর্থোদ্ধার যা এদের সাথে জড়িত এবং যার উপর হয়তো নির্ভরশীল বলে আজকে আমরা মনে করছি। যদি ধরে নেয়া হয় চিন্তার মাধ্যমে যা বোঝানো হয় তা হচ্ছে একটা বিষয় (সাবজেক্ট) ও একটা বস্তু (অবজেক্ট), তাদের মধ্যেকার সম্ভাব্য সর্ম্পকগুলিসহ, তাহলে একটা চিন্তার সমালোচনামূলক ইতিহাস হবে শর্তগুলির একটা পর্যালোচনা যার ভিতর বিষয় এবং বস্তুর নিশ্চিত সর্ম্পক তৈরী হয় অথবা পরিবর্তিত হয়, যথাসম্ভব এই সর্ম্পকগুলির মাধ্যমে স্থাপন করে একটা সম্ভাব্য জ্ঞান [পরিত্রাতা হিসাবে]। এটা বস্তুর প্রতি সর্ম্পকের আনুষ্ঠানিক শর্তগুলি সংজ্ঞায়িত করার ব্যাপার নয়, অথবা ব্যাপারটা নয় বাস্তব শর্তগুলির পৃথিকীকরণ যা হতে পারে একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তে, যা সাধারণভাবে বিষয়টাকে সক্ষম করে প্রকাশিত হতে একটি বস্তুর মাধ্যমে, যা বাস্তবে রয়েছে। সমস্যাটা হচ্ছে স্থির করার কি হতে পারে বিষয়টা, কোন শর্তগুলির ভিত্তিতে তিনি বিষয়, কোন পদমর্যাদা তার থাকা প্রয়োজন, বাস্তবে অথবা কল্পনায় সে কোন অবস্থান দখল করবে, একটা যুক্তিসঙ্গত বিষয় হতে হলে এটার অথবা অন্য রকম একটা জ্ঞানের [সচেতনতা হিসাবে]। সংক্ষেপে, এটা হচ্ছে “বিষয়করণ” এর পদ্ধতিটিকে স্থির করার একটা ব্যাপার; পরবর্তীতে যা অবশ্যই একই নয়, জ্ঞান কি একটি ধর্মীয় পুস্তকের ব্যাখ্যার সাথে জড়িত, প্রাকৃতিক ইতিহাসের প্রত্যক্ষণ অথবা একটি মানসিক রোগীর আচরনের ব্যাখ্যা - তার ভিত্তিতে। কিন্তু একই সময়ে এটা স্থির করার প্রশ্ন যে, কোন শর্তগুলির ভিতর কোনকিছু বস্তু হয়ে উঠতে পারে একটা সম্ভাব্য জ্ঞানের [সচেতনতা হিসাবে], কিভাবে এটা সমস্যায়িত হতে পারে একটা বস্তু হিসাবে যাকে জানতে হবে, কোন নির্বাচিত প্রক্রিয়ায় এটা হতে পারে বিষয়কৃত, আর এর অংশকে যা বিবেচনা করা হবে প্রাসঙ্গিক বলে। সুতরাং ব্যাপারটা হচ্ছে বস্তুকরণ এর পদ্ধতিটাকে স্থির করার, যা একইরকম নয়, জ্ঞানের [পরিত্রাতা হিসাবে] প্রকারভেদে, যার সাথে এটা জড়িত।

এই বস্তুকরন [অবজেক্টিভাইজেশন] ও বিষয়করন [সাবজেক্টিভাইজেশন] একে অপরের দিক থেকে স্বাধীন নয়। তাদের পারস্পরিক উন্নয়নে এবং তাদের আন্তঃসর্ম্পক থেকে, যাকে বলা যেতে পারে “সত্যের খেলা” বেরিয়ে আসে - এটা সত্য জিনিসের আবিষ্কার নয় বরং নিয়মগুলি যার ভিত্তিতে একটি বিষয় বলতে পারে কিছু জিনিস সর্ম্পকে সত্য এবং মিথ্যা প্রশ্নের উপর নির্ভর করে। সংক্ষেপে, এই চিন্তার সমালোচনামূলক ইতিহাস সত্যের অর্জনগুলির ইতিহাস অথবা এর গুপ্তকরন এর ইতিহাস নয়, এটা হচ্ছে “যাচাইসমুহের” ইতিহাস, বোঝা যাবে রূপগুলির মধ্যে দিয়ে যে, কোন বয়ান (ডিসকোর্স) সত্য বা ভুল ঘোষণা করার জন্য সমর্থ, একটা এলাকার বিষয়াবলীর (থিংকনস) সর্ম্পকে গ্রন্থিবদ্ধতার ভিতর দিয়ে। এই উত্থানের শর্তাবলী কি ছিল, যে মূল্য দিতে হয়েছে, তাই বলার জন্য, বাস্তবতার উপর তার প্রভাব এবং যেভাবে সে সংযুক্ত করে একটা রকমের বস্তুকে বিষয়টার নির্দিষ্টরকমের ক্রিয়াপদ্ধতির সাথে, স্থাপন করে ঐতিহাসিক একটা পূর্ববর্তীতা একটা সম্ভাব্য অভিজ্ঞতার একটা নির্দিষ্ট পর্বের সময়ের জন্য, একটা এলাকা এবং প্রদত্ত ব্যক্তিবর্গের জন্য।

এখন মিশেল ফুকো কখনো এই প্রশ্নটা করেন নাই অথবা এইরকমের ধারাবাহিক প্রশ্নগুলি, যা একটা “জ্ঞানের প্রতœবিদ্যার” মধ্যে পড়ে - এবং যা কখনোই বসার ইচ্ছা করে না শুধুমাত্র কোন সত্যের খেলায়, কিন্তু সর্ম্পকযুক্ত করে শুধুমাত্র যেখানে বিষয়টা নিজেই অবস্থান করছে সম্ভাব্য জ্ঞানের একটা বস্তু হিসাবে: বিষয়ীকরণের এবং বস্তুকরণের প্রক্রিয়াগুলিই বা কি যা বিষয়ের ভিতর বিষয়ে সম্ভব করে তোলে একটা বস্তু হয়ে উঠার জন্য জ্ঞানের [সচেতনতা হিসাবে], একটা বিষয় হিসাবে? অবশ্যই এটা নির্ধারণ করার ব্যাপার না যে কিভাবে একটা “মানসিক জ্ঞান” গঠিত হয় ইতিহাসের ভিতর, বরং কিভাবে বিভিন্ন সত্য-খেলাগুলি রূপ নেয় প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেখানে কোন বিষয় জ্ঞানের একটি বস্তু হয়ে উঠে। মিশেল ফুকো চেষ্টা করছেন দুইভাবে তার বিশ্লেষণ পরিচালনা করতে। প্রথমত, দৃশ্যমান হওয়ার সংযোগ এর মাধ্যমে এবং প্রশ্নটা বলার সন্নিবেশ, পরিশ্রমগুলি এবং জীবিত বিষয় এর মাধ্যমে, এলাকাগুলিতে এবং একটা বৈজ্ঞানিকরকমের জ্ঞানের প্রথা অনুযায়ী। এটার সর্ম্পক আছে নির্দিষ্টরকমের “মানবিক বিজ্ঞান” এর গঠনের সাথে, যা অধ্যয়ন করা হয়েছে প্রায়োগিক বিজ্ঞানগুলির সূত্রের মাধমে, এবং তাদের চরিত্র সতেরোশ ও আঠারোশ শতকের বয়ানের (দ্য অর্ডার অফ থিংন্কস)। ফুকো আরো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন বিষয়ের গঠনকে যখন সে উপস্থিত হতে পারে অন্যদিক থেকে মাননির্ধারক পার্থক্যের মাধ্যমে, একটা জ্ঞানের বস্তু হয়ে উঠাতে - একজন পাগল-মানুষ হিসাবে, একজন রোগী হিসাবে অথবা একজন দুস্কৃতিকারী হিসাবে অনুশীলনগুলির মধ্যে দিয়ে, মনোচিকিৎসা, ক্লিনিক্যাল ঔষুধ এবং কারাব্যবস্থায় (ম্যাডনেস এন্ড সিভিলাইজেশন, বার্থ অফ ক্লিনিক, ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ)।

ফুকো এখন গ্রহণ করছেন, একই সাধারণ প্রকল্পের আওতায়, অধ্যয়ন করার জন্য বিষয়ের গঠনটাকে যেখানে সে নিজে একটা বস্তু হয়ে উঠে: কার্যপ্রণালীর গঠনটাকে যার মাধ্যমে বিষয় নিজেকে দেখতে পায়, নিজেকে বিশ্লেষণ করে, নিজেকে ব্যাখ্যা করে, নিজেকে চিনতে পারে সম্ভাব্য জ্ঞানের একটা এলাকায়। সংক্ষেপে, এটা “বিষয়ীকরণের” ইতিহাসের সাথে সর্ম্পকিত, যদি এটা এই টার্মটার মাধ্যমে বোঝায় যে, যার ভিতর বিষয় নিজেই অভিজ্ঞতা পায় একটা সত্যের খেলার যেখানে সে নিজের সাথে সর্ম্পকিত। ফুকোর দৃষ্টিভঙ্গিতে, যৌনক্রিয়া এবং যৌনতা, শুধুমাত্র একমাত্র সম্ভাব্য উদাহারণই না নিঃসন্দেহে, কিন্তু নিদেনপক্ষে একটা বিশেষ ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে, এটা ছিল এই সর্ম্পকের ভিতর দিয়ে পুরা ক্রিশ্চিয়ানিটি এবং হয়তো তারও পরে, ব্যক্তিদেরকে বলা হয়েছিল তাদের নিজেদেরকে চিনে নেবার জন্য আনন্দের বিষয় হিসাবে, বাসনার, লালসার, প্রলোভনের বিষয় হিসাবে এবং তাড়া দেয়া হয়েছিল ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে (স্ব-পরীক্ষা, আধ্যাত্মিক অনুশীলন, স্বীকারোক্তি, পাপ-স্বীকার), তাদের নিজেদের প্রেক্ষিতে সত্যের খেলা ও মিথ্যা এবং যা গঠন করে সবচেয়ে গোপনীয়, সবচেয়ে ব্যক্তিগত অংশ, তাদের বিষয়ীকরণের।

সংক্ষেপে যৌনতার ইতিহাস বোঝায় একটা তৃতীয় খন্ডের গঠনটাকে, বিষয় এবং সত্যের সর্ম্পকগুলির মধ্যেকার বিশ্লেষণে যোগ করে, অথবা যথার্থ হতে, কর্মপদ্ধতিগুলির অধ্যায়নে যার মাধ্যমে বিষয়টা সক্ষম হয় সত্যের খেলাগুলিতে একটা বস্তু হিসাবে প্রবিষ্ট হতে।

বিষয় এবং সত্য এর সর্ম্পকগুলিতে এই প্রশ্নটাকে এইসব বিশ্লেষণ এর একটা চালক সূত্র হিসাবে নিলে এটা ইঙ্গিত করে নির্দিষ্টরকমের পদ্ধতির। প্রথমত, একটা পদ্ধতিগত সংশয়বাদীতা সমস্ত নৃ-তাত্ত্বিক (এনথ্রোপলজিক্যাল) সার্বজনীনতার প্রতি - যা বোঝায় না যে তাদের সবকিছুকে একদম প্রথম থেকেই বাতিল করা, সন্দেহাতীতভাবে এবং একবার ও বারবারের জন্য; কিন্তু তার সেই ক্রমের কোনটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য না যা পুরাপুরি অপরিহার্য। এই প্রসঙ্গে মানুষের প্রবৃত্তি বা ক্যাটাগরিগুলি যা হয়তো এই বিষয়ের সাথে জড়িত, আমাদের জ্ঞানে যে সবকিছুকে বলা হয়েছে বৈশ্বিকভাবে সপ্রমাণিত বলে তার সবকিছুকে অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে এবং বিশ্লেষণ করতে হবে। “পাগলামি”, “দুস্কৃতি”, বা “যৌনতার” বৈশ্বিকতাটাকে প্রত্যাখান করাটা ইঙ্গিত করে না যে, এইসব অভিমতগুলির কোন অর্থ নাই, অথবা তাদেরকে বলা হচ্ছে শুধুমাত্র উদ্ভট আবিষ্কার হিসাবে একটা দ্ব্যর্থক কারণ এর জন্যে। যা-ই হোক, এইখানে আরো কিছু জড়িত আছে, সাদামাটা পর্যবেক্ষণ এর চাইতে যে তাদের আধেয় সময় এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভিন্ন: এটা বোঝায় যে একজন অবশ্যই অনুসন্ধান করবে শর্তগুলিকে যা মানুষজনকে সক্ষম করে, সত্য এবং মিথ্যা বিবৃতির নিয়মগুলির প্রেক্ষিতে, চিহ্নিত করার একটা বিষয় মানসিকভাবে অসুস্থ অথবা স্থির করা যে একটা বিষয় কবুল করে যে তার মধ্যে সবচে মৌলিক অংশ হচ্ছে তার যৌন বাসনার ক্রিয়াপদ্ধতি। সুতরাং এই ধরনের কাজে পদ্ধতির প্রথম নিয়মটা হচ্ছে: যতদূর সম্ভব, বৈশ্বিক নৃতাত্ত্বিকতাকে পাশ কাটানো (এবং, অবশ্যই সেইধরণের একটি মানবতাকে যা ঘোষণা করে অধিকারগুলি, বিশেষাধিকারগুলি এবং একজন মানুষের প্রবৃত্তিকে বিষয়ের একটা তাৎক্ষণিক ও সময়হীন সত্য হিসাবে) তাদেরকে ঐতিহাসিক নির্মাণগুলি হিসাবে পরীক্ষা করার জন্য। একজন অবশ্যই আরো উল্টে দেবে সামনের দিকে আগানোর দার্শনিক পথকে বিষয়টির নির্মাণের সাথে যা চাওয়া হয় সাধারণভাবে জ্ঞানের প্রতিটি সম্ভাব্য বস্তুগত দিকের জন্যে। অন্যদিক দিয়ে, এটা হচ্ছে পিছনের দিকে যাওয়ার মতো একটা ব্যাপার সুনির্দিষ্ট অনুশীলনগুলিকে পাঠ করার জন্য যার মাধ্যমে বিষয়টি একটি জ্ঞানের ব্যাপ্ত এলাকায় গঠিত হয়েছে। এইখানেও, একজনকে অবশ্যই সাবধান হতে হবে: সেই দার্শনিকতার আশ্রয় নেওয়াটাকে অস্বীকার করতে হবে যা একটি গঠনকারী বিষয় নয় যা মনে করে যেন বিষয়টা বাস্তবে অবস্থান করতো না, তার একটা বিমূর্তায়ন তৈরী করা একটা শুদ্ধ বস্তুনিষ্ঠতার উপর ভর করে। এই অস্বীকার করাটার লক্ষ্য হচ্ছে প্রক্রিয়াগুলিকে টেনে বের করা একটা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে যা বিশিষ্ট, যার ভিতর বিষয়টা এবং বস্তুটা “তৈরি হয়েছে এবং পরিবর্তিত হয়েছে” তাদের সর্ম্পকে এবং তাদের পরস্পরের প্রেক্ষিতে। মানসিক অসুস্থতা, দুস্কৃতি বা যৌনতার ডিসকোর্সগুলিতে বলা যাক যা বিষয়, তা কি শুধুমাত্র একটা নিশ্চয়তা, সত্যের খেলার ভিতর যথেষ্ট নির্দিষ্ট; কিন্তু এই খেলাগুলি বিষয়টার উপর বাইরের থেকে চাপিয়ে দেয়া নয় যা একটা প্রয়োজনীয় কার্যকারণ অথবা গঠনতাত্ত্বিক স্থিরকরণ। তারা উন্মুক্ত করে অভিজ্ঞতার একটা জায়গা যার ভিতর বিষয়টা আর বস্তুটা উভয়েই তৈরি হয় শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটা আবশ্যিক যুগপৎ শর্তাবলীতে, কিন্তু যার ভিতর তারা সবসময় বদলাচ্ছে পরস্পরের সাপেক্ষে এবং তাই তারা বদলাচ্ছে অভিজ্ঞতার সেই ক্ষেত্রটাকেও, একইসাথে।

অদ্যাবধি পদ্ধতির একটা তৃতীয় সূত্র: “অনুশীলনগুলি"কে দেখেছে বিশ্লেষণ এর একটা এলাকা হিসাবে, কি “করা হয়েছে” এই দিক দিয়ে পঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। উদাহারণস্বরূপ, পাগল, দুস্কৃতি এবং অসুস্থ লোকদের প্রতি কি করা হয়েছে? একজন অবশ্যই চেষ্টা করতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনুমান করার যার ভিতর তারা স্থাপিত এবং যে আচরণগুলির প্রতি তারা বিষেশায়িত ধারণাগুলি থেকে যা মানুষজনের আছে তাদের সর্ম্পকে, অথবা জ্ঞান যা মানুষজন বিশ্বাস করে যে তাদের আছে তাদের সর্ম্পকে। একজন আরো দেখতে পারে গঠিত হওয়াটা “সত্যিকারের” মানসিক অসুস্থতাগুলি এবং বাস্তব দুস্কৃতির ক্রিয়াপদ্ধতিগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর ব্যাখ্যা করার জন্য যে তাদের সর্ম্পকে কি ভাবা হতো ঐ সময়ে। জিনিসগুলির প্রতি মিশেল ফুকোর প্রস্তাবনাগুলি একদমই ভিন্ন রকমের। তিনি প্রথমে পাঠ করেন কম বা বেশি নিয়ন্ত্রণের সামগ্রিকতাকে, কম বা বেশি বিবেচনাকে, কম বা বেশি চূড়ান্ত করা জিনিসগুলিকে করার পথগুলিকে, যার ভিতর দিয়ে উভয়েই দেখা যাবে যা বাস্তব হিসাবে তৈরি হয়েছে তাদের জন্য যারা অন্বেষণ করতে চায় এটাকে চিন্তা করার এবং নিয়ন্ত্রণ করা এবং যার ভিতর দিয়ে পরেরটা নিজেদেরকে তৈরি করে বিষয় হিসাবে সমর্থ করতে জানার, বিশ্লেষণ করার এবং শেষ পর্যন্ত পরিবর্তন করতে বাস্তবকে। এই হচ্ছে “অনুশীলনগুলি”, যাকে বোঝা যায় একইসাথে কাজ করার এবং চিন্তা করার মাধ্যমে, যা দেয় পরস্পর সর্ম্পকযুক্ত শাসনতন্ত্রের বিষয় এবং বস্তুর বোধগম্য চাবিটাকে।

এখন, যেহেতু ব্যাপারটা হচ্ছে বিষয়টার বিভিন্ন রকমের বস্তুকরণকে পাঠ করার যা দৃশ্যমান হয় এইসব অনুশীলনগুলির মাধ্যমে, একজন বুঝতে পারবে ক্ষমতা-সর্ম্পকগুলিকে বিশ্লেষণ করাটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু দরকার স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যে এই ধরণের বিশ্লেষণ কি হতে পারে এবং কি করার আশা করে। অবশ্যই এটা “ক্ষমতা"কে তার উৎস এর প্রেক্ষিতে, এর নীতিমালার সাপেক্ষে, বা তার আইনগত সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে পরীক্ষা করা না, বরং পর্যবেক্ষণ করা পদ্ধতিগুলি এবং কৌশলগুলি বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রেক্ষিতগুলিতে ব্যক্তিবিশেষের উপর তা কিভাবে ক্রিয়া করে আলাদাভাবে অথবা একটা গ্র“পে, সেইভাবে রূপ নেয়, চালিত হয়, বদলায় তাদের নিজেদের আচরণের উপায়গুলি, নিজেদের নিস্ক্রিয়তার উপর সমাপ্তিগুলি চাপিয়ে দেয় অথবা সার্বিক স্ট্রাটেজীগুলির সাথে মানানসই করে তোলে, যেইগুলি পর্যায়ক্রমে বহুবিধ হয়ে উঠে, তাদের রূপগুলির মধ্যে এবং তাদের অনুশীলনের জায়গায়; নানারকমও হয়ে উঠে, যে কার্যপ্রণালী এবং তারা নিয়ে আসে খেলার ভিতরে। এই ক্ষমতা সর্ম্পকগুলি বিশিষ্টতা প্রদান করে কোন পদ্ধতিতে মানুষ “শাসিত” হবে একজন আরেকজনের দ্বারা; এবং তাদের বিশ্লেষণ দেখায় কিভাবে, “শাসনক্ষমতা”র নির্দিষ্ট রূপগুলির মাধ্যমে, পাগলমানুষগুলি, অসুস্থ মানুষ, অপরাধীরা এবং এইরকমগুলির মাধ্যমে, পাগলটি, অসুস্থটি, দুস্কৃতিটি বিষয় হিসাবে বস্তুকৃত হয়। সুতরাং এই ধরণের একটি বিশ্লেষন বোঝায় না যে এইটা ক্ষমতার একটা অথবা অন্যটার অমর্যাদা যা সৃষ্টি করছে পাগলমানুষ, অসুস্থ মানুষ অথবা অপরাধীদের যেখানে কিছ্ইু নাই, বরং অনেকরকম এবং নির্র্দিষ্টরকম “শাসনতন্ত্র” এর রূপগুলি যেখানে ব্যক্তিবিশেষেরা নির্ধারক বিষয়ের বিভিন্নরকমের বস্তুকরণ এর পদ্ধতিগুলির।

একজন দেখতে পাবে কি করে “যৌনতার ইতিহাস” এর বিষয়বস্তুটা মিশেল ফুকো’র সাধারণ প্রকল্পের সাথে মিলে যায়। এইটা হচ্ছে “যৌনতা"কে একটা ঐতিহাসিক অনন্য অভিজ্ঞতার উপায় হিসাবে বিশ্লেষণ করা যেখানে বিষয়টা বস্তুকৃত হচ্ছে নিজের জন্যে এবং অন্যদের জন্য “শাসনতন্ত্র” এর নিশ্চিত সুনির্দিষ্ট ক্রিয়াপদ্ধতির ভিতর দিয়ে অন্যদের জন্যে ।



বাংলা অনুবাদের নোট:

প্রথমত, আমার ফুকো পড়ার অভিজ্ঞতা থিকা মনে হৈছে যে, ফুকো সর্ম্পকে জানতে হৈলে এইটা হচ্ছে সবচে সংক্ষিপ্ত এবং রিলেভেন্ট একটা লিখা। ফুকো’র একটা দার্শনিক জীবনী, যার ভিতর তার চিন্তার মূলধারণাগুলিকে তিনি নিজে বলার চেষ্টা করছেন। ফুকোর ব্যক্তিগত জীবন নিয়া যেমন বহু কথা চালু আছে, যেহেতু তিনি সমকামী ছিলেন এবং এইডসে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়; তেমনি তার কাজ-কর্ম নিয়া সবচে’ প্রচলিত যে ধারণাটা আছে, তা হৈতেছে, তার কথা-বার্তা বোঝা যায় না। সম্ভবত তার সবচাইতে দুর্ভাগ্য সম্ভবত এইটাই যে, তার কাজের উল্লেখযোগ্য কোন বিশ্লেষণ তার সময়ে দাঁড়ায় নাই।

বাংলাভাষায় ফুকোরে নিয়া বেশ কয়েকটা বই বের হৈছে। কিছু আলোচনাও হৈছে আর এইক্ষেত্রে বলা যায় পারভেজ হোসেন সম্পাদিত “ফুকো: পাঠ ও বিবেচনা” (২০০৭) বইটা বাংলাভাষায় এ যাবতকালে সমস্ত ফুকো-আলোচনার একটা সংকলন। কিন্তু আলোচনার তুলনায় ফুকোর লেখাপত্র বাংলাভাষাতে অনুবাদ-প্রচেষ্টা খুব একটা আমার চোখে পড়ে নাই। সম্প্রতি, ফুকোর ডিসিপ্লিন এন্ড পানিশ এর বাংলা অনুবাদ দেখতেছি। নিঃসন্দেহে এইগুলি একটা ভালো প্রচেষ্টা। কারণ, অনুবাদের মাধ্যমেই এই চিন্তাগুলিকে বাংলাভাষাতে নিয়া আসা সম্ভব। তারপর আসে তাকে গ্রহণ-বর্জন, আলোচনা-সমালোচনা’র প্রশ্নটা। অনুবাদ না কৈরা যে সেটা সম্ভব না, ঘটনাটা তা না, কিন্তু অনুবাদই এই বিষয়টাকে আরো বেশি করে সম্ভব করে তোলে। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, আমাদের কয়েকজন এক্সপার্ট লোকের দরকার নাই, যারা অন্যদের কথার ব্যাখ্যাগুলি আমাদের জন্য বলে দিবে, বরং দরকার একটা ব্যবহারকারী দল, যারা বিষয়গুলিকে চর্চা করবে।

এই লিখাটা ডেনিস হুইসম্যান সম্পাদিত ডিকশনারি ডি ফিলসফিস নামের একটি সংকলনে প্রথম ছাপা হয় । আশির দশকের প্রথমদিকে হুইসম্যান বইয়ের নতুন এডিশনের জন্য ‘ফুকো’ এন্ট্রিটা এডিট করে দেয়ার জন্য ফ্রান্কোস ইল্যুায়ড কে বলেন। ফ্রান্কোস ইল্যুায়ড তখন ছিলেন কলেজ ডি ফ্রান্স এ ফুকো’র সহকারী। শেষে হুইসম্যানকে যেটা পাঠানো হয়, তার পুরোটাই ছিল ফুকো’র নিজের লেখা এবং স্বাক্ষর করা হয় একটা ছদ্মনাম
Maurice Florence বলে। বলা হয়, তার হিস্ট্রি অফ সেক্সুয়ালিটির একটা ভূমিকা হিসাবে তিনি এটা লিখছিলেন।

বাংলা অনুবাদ নেয়া হৈছে, রবার্ট হার্লি’র ফরাসী থেকে করা ইংরেজী টেক্সট থেকে। পাওয়া যাবে, পেঙ্গুইন বুকস এর মিশেল ফুকো’র এসেনশিয়াল ওয়ার্কস অফ মিশেল ফুকো (১৯৫৪-১৯৮৪) দ্বিতীয় খন্ড; এসথেটিকস (মেথডোলজি এন্ড এপিস্টোমোলজি) এর পৃষ্টা: ৪৫৯-৪৬৩ তে।

লিখাটা এমনিতেই বেশ খটোমটো। ইংরেজীতে দীর্ঘ দীর্ঘ বাক্য ছিল। আমার যতটুক ক্ষমতা (অ-ক্ষমতাও একইসাথে) তা দিয়া চেষ্টা করছি।
আর ফুকোর উদ্ধৃতি দুইটা লিখার অংশ না, বাংলা-অনুবাদের উদ্দেশ্যের সাথে প্রাসঙ্গিক মনে কৈরা টুকে দেয়া হৈলো। এই বাংলা অনুবাদ এই বইয়ের আগে অন্য কোথাও প্রকাশিত বা প্রচারিত হয় নাই। বিষয়টা এইরকম না যে, এইখানে ভাষাটা খুব জটিল বা ধারণাগুলি খুব জটিল, বরং যে সমস্যাটার কথা বলা হচ্ছে, আমার ধারণা তার প্রকৃতিটাই জটিল, তাই তাকে এড়ানোটার মানে হচ্ছে সমস্যাটাকেই ভুলভাবে বলা।