Friday, May 16, 2008

বিচার সম্পর্কে ।ওরহান পামুক।

বিচার সম্পর্কে
[মন্তব্য]
ওরহান পামুক

ইস্তাম্বুলে এই শনিবারে - সিসলিতে, যেই জেলাতে আমি আমার সমস্ত জীবন পার করেছি, তার কোর্টভবনে, যা আমার দাদীমার তিনতলা বাড়িটার উল্টোদিকে, যেখানে তিনি চল্লিশ বছর যাবত একাকী বেঁচে ছিলেন - সেখানে আমি একজন বিচারকের সামনে দাঁড়াবো। আমার অপরাধ হচ্ছে “প্রকাশ্যে তুর্কি আইডেন্টিটিতে কালিমালেপন করা”। প্রসিকিউটর আমাকে তিন বছরের জেল দেয়ার জন্য বলবেন। আমার হয়তো দুশ্চিন্তা হওয়া উচিত এই ভেবে যে, তুর্কি-আমেরিকান সাংবাদিক র্হান্ট ডিন্ক এই একই কোর্টে অভিযুক্ত হয়েছিলেন একই অপরাধে, আর্টিকেল ৩০১ এর একই সংবিধিতে এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল; কিন্তু আমি আশাবাদী। কারণ আমার আইনজীবির মতো, আমিও বিশ্বাস করি আমার বিরুদ্ধে এই কেসটি সংকীর্ণ; আমি মনে করি না শেষ পর্যন্ত আমাকে জেলে যেতে হবে।

যেকোনভাবেই আমি খুবই অস্তিত্ববোধ করছি যে, আমার বিচারটাকে অতিনাটকীয় করা হয়েছে দেখে। আমি শুধুমাত্র সচেতন যে, আমার ইস্তাম্বুলের অনেক বন্ধুরা, যাদের কাছে আমি অনেক সময় উপদেশ চেয়েছি, একই সময়ে তাদেরকেও অনেক কর্কশ ইন্টারোগেশন-এর মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে এবং কোর্টের কেইসগুলিতে অনেক বছর নষ্ট করতে হয়েছে এবং জেল হয়েছে শুধুমাত্র একটা বই-এর কারণে, শুধুমাত্র এই কারণে যে, তারা লিখেছে। এমন একটা দেশে আমি বসবাস করি যা তার পাহাসদের, সেইন্টদের এবং পুলিশঅফিসারদের প্রতিটি সুযোগে সম্মানিত করে কিন্তু তার লেখকদেরকে সম্মান করতে অস্বীকার করে যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা কোর্টে এবং হাজতে কয়েকটা বছর না কাটায়, সেখানে আমি বলতে পারি না যে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম যখন আমাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। আমি বুঝতে পারি যখন আমার বন্ধুরা হাসে আর বলে যে, শেষ পর্যন্ত আমি “একজন সত্যিকারের তার্কিশ লেখক” হতে পেরেছি। কিন্তু যখন আমি যে শব্দগুলি বলেছি যার জন্য আমাকে এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তা থেকে আমি এই ধরনের সম্মানের খোঁজ করিনি।

গত ফেব্র“য়ারীতে, একটা সুইস দৈনিক পত্রিকায় আমার একটা ইন্টারভিউ ছাপা হয়, সেখানে আমি বলেছিলাম যে, “তুরস্কে এক মিলিয়ন আর্মেনিয়ান এবং তিরিশ হাজার কুর্দিদের হত্যা করা হয়েছে”; আমি অভিযোগ করেছিলাম যে, আমার দেশে এইসব নিয়ে আলোচনা না করাটা একটা ট্যাবু। বিশ্বের সিরিয়াস ঐতিহাসিকদের মধ্যে, এটা খুবই সাধারন জ্ঞান যে, একটা বিশাল সংখ্যার অটোমান আমেরিকানদের নির্বাসিত করা হয়েছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটেমান সাম্রাজ্যের বিরোধিতার অভিযোগে এবং তাদের অনেককে গণহত্যা করা হয় পালিয়ে যাওয়ার পথে। তুরস্কের মুখপাত্ররা, যাদের বেশিরভাগ-ই কূটনীতিবিদ, তারা এখনো বলেন যে, এই মৃত্যুর সংখ্যা ছিল অনেক কম, যা গণহত্যা হিসেবে অভিহিত হওয়ার যোগ্য না, কারণ এইটা কোন সুশৃংখল ঘটনা ছিল না, তাছাড়া এই যুদ্ধে আর্মেনীয়রাও প্রচুর মুসলমান হত্যা করেছিল। এই গত সেপ্টেম্বর-এ, যেভাবেই হোক, রাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও, ইস্তাম্বুলের তিনটি প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তভাবে স্কলারদের একটি একাডেমিক কনফারেন্স-এর আয়োজন করে, তার্কিশ অফিসিয়ালদের এই মনোভাব সহ্য না করার ধারার ব্যাপারে। তখন থেকে, গত নব্বই বছরের মধ্যে প্রথম এই বিষয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হয়-আর্টিকেল ৩০১ এর ধারা সত্ত্বেও।

যদি রাষ্ট্র এতদূর পর্যন্ত যেতে চায় যা তার্কিশ জনগণকে জানা থেকে বিরত করে যে, অটোমান আর্মেনীয়দের ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, তা ট্যাবু হওয়ার যোগ্য। আর আমার কথা একটা ট্যাবুতে উন্মাদনা সৃষ্টি করে: অনেকগুলি দৈনিক পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা কর্মসূচী ঘোষণা করে, কয়েকজন ডান-পন্থী (আবশ্যিকভাবে ইসলামিক নয়) কলামিস্ট এত দূর পর্যন্তও বলেন যে, আমাকে চিরতরে “নিস্তব্ধ” করে দেয়া উচিত। উগ্র জাতীয়তাবাদী গ্র“পগুলি আমার প্রতারণাকে মোকাবিলা করার জন্য মিটিং-মিছিলের আয়োজন করে; প্রকাশ্যে আমার বইগুলি পোড়ানো হয়েছিল। আমার উপন্যাস “স্নো”-এর নায়ক কে-এর মতো, আমিও আবিষ্কার করি এটা কিরকম লাগে একজনের একটা সময়ের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলির জন্য নিজের প্রিয় শহর ছেড়ে যেতে। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না এই বির্তকে আরো যোগ করতে, এমনকি এই সর্ম্পকে কিছু শুনতে চাচ্ছিলাম না, একদম প্রথমে আমি চুপচাপ ছিলাম, এক ধরনের অদ্ভুত লজ্জায় সিক্ত হয়েছিলাম, পাবলিক থেকে লুকাচ্ছিলাম, এমনকি আমার নিজের শব্দগুলির কাছ থেকেও। তখন একজন প্রাদেশিক গভর্নর আমার বইগুলি পোড়ানোর আদেশ দিলেন, এবং, ইস্তাম্বুলে আমার ফিরে আসার পর, সিসলি’র পাবলিক প্রসিকিউটর আমার বিরুদ্ধে একটা কেস ঠুঁকে দেন, এবং আমি নিজেকে আবিষ্কার করি আর্ন্তজাতিক কনসার্নের একটা অবজেক্ট হিসাবে।

আমার নিন্দুকেরা শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত শত্র“তা নিয়ে উৎসাহী ছিলেন না বা তারা শুধুমাত্র আমার প্রতি বৈরিতা দেখাচ্ছিলেন না; আমি এরমধ্যে জানি যে আমার কেইসটা তুরস্কে এবং বাইরের পৃথিবীতে আলোচনাযোগ্য একটা বিষয়। এটা অংশত এই কারণে যে, আমি বিশ্বাস করি একটা দেশের “সম্মান” বির্বণ হয় তার ইতিহাসের কালো অধ্যায়গুলি নিয়ে আলোচনা করাতে না, বরং কোনরকম আলোচনা করতে না দেয়ার অসম্ভাব্যতার মধ্যে। কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, আজকের তুরস্কে অটোমান আর্মেনীয়দের নিয়ে আলোচনা করার নিষিদ্ধকরণটা বাক স্বাধীনতারও একটি নিষিদ্ধকরণ এবং এই দুইটি বিষয় ব্যাখ্যাতীতভাবে যুক্ত। আমার দুর্দশার এই উদ্দেশ্যের মধ্যে বা সাহায্যের সাধারণ ভঙ্গিগুলির মধ্যে আমি আরামেই ছিলাম, আর সেখানে এমন সময়ও ছিল আমি অস্বস্তিবোধ করতাম যখন আমার দেশ এবং বাকি পৃথিবীর মাঝখানে আমি নিজেকে আবিষ্কার করতাম।

সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার ছিল এটা ব্যাখ্যা করা যে, একটি দেশ যা অফিসিয়ালি অঙ্গীকার করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার জন্য, কেন সে তার একজন লেখককে জেলে দিতে চায়, যে ইউরোপে খুব ভালোভাবে পরিচিত, এবং কেন সে এই নাটক করতে বাধ্য করে (হয়তো কর্নারড বলতেন) “পশ্চিমা চোখের ভিতর”। এই প্যারাডক্সটা শুধুমাত্র একটা সরল মূর্খতা, বা ঈর্ষা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না, এবং এটা-ই শুধু একমাত্র প্যারাডক্স না। আমি একটা দেশ সর্ম্পকে কী বোঝাতে চাই যে তুর্কিদেরকে, তার অনান্য পশ্চিমা প্রতিবেশীদের মতো একটি করুণাময় জনগণ হতে জোর করে, যারা গণহত্যার দায়ভার নিতে অক্ষম, যেখানে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক গ্র“পগুলি প্রবলভাবে আমাকে মৃত্যুর হুমকি দিতে থাকে? একটা রাষ্ট্রের এর পিছনে যুক্তিগুলি কী যখন সে অভিযোগ করতে থাকে যে, তার শত্র“রা মিথ্যা রির্পোটগুলি ছড়াচ্ছে অট্যোমান লিগ্যাসি সর্ম্পকে সারা পৃথিবীতে, যখন সে তার একজন থেকে আরেকজন লেখক-এর বিরুদ্ধে মামলা করে, জেলে পোরে, আর এইভাবে একটা ভয়াবহ তুর্কির ইমেজ তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী? যখন আমি ভাবি সেই অধ্যাপকের কথা যাকে রাষ্ট্র বলেছিল তুরস্কের মাইনরিটি সর্ম্পকে তার ধারণা জানানোর জন্য, এবং যে, একটা রির্পোট দিয়েছিল, যা তাদেরকে খুশি করতে ব্যর্থ হয়েছিল, যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, অথবা এই সময়টার মধ্যে, এই খবরটা এবং যখন আমি লেখাটা লিখতে শুরু করি এবং এই বাক্যগুলি আপনারা যখন পড়ছেন, তার মধ্যে পাঁচজনেরও বেশি লেখক এবং সাংবাদিককে আর্টিকেল ৩০১-এর ধারায় চার্জ করা হয়েছে, আমি কল্পনা করতে পারি ফ্লবেয়ার এবং নার্ভেল, অরিয়েন্টালিজম-এর এই দুইজন গডফাদার হয়তো এই ঘটনাগুলিকে বলতেন উদ্ভট হিসাবে, এবং তা সঠিকই করতেন।

এটা বলে যে, যে নাটকটা আমরা দেখছি তা উন্মোচিত করে না, আমি মনে করি, পারম্পর্যহীন এবং অনিশ্চিত নাটক, যা তুরস্কের জন্য বিচিত্র; বরং, এটা একটা নতুন গ্লোবাল প্রেক্ষাপটের একটা প্রকাশ আমরা যেটা মাত্র স্বীকার করতে শুরু করেছি এবং এটা তা যা আমাদের শুরু করা প্রয়োজন, যত আস্তে আস্তে-ই হোক, তাকে এড্রেস করা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ভারত এবং চীন এর বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উত্থান দেখেছি, এবং উভয় দেশেই দেখছি মধ্যবিত্তদের দ্রুত বিস্তার, যদিও আমি মনে করি না, আমরা সত্যিকারভাবে বুঝতে পারবো এই লোকদের যারা এই পরিবর্তনের অংশ, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের দৈনন্দিন জীবন উপন্যাসগুলিতে প্রতিফলিত দেখতে পাবো। আপনি এই নতুন এলিটদেরকে যাই বলেন-এই নতুন অ-পশ্চিমা বুর্জোয়া অথবা সমৃদ্ধ আমলাতন্ত্র-তারা, আমার দেশের পশ্চিমাকৃত এলিটদের মতো, দুইটা পৃথক এবং আপাতদৃষ্টিতে সঙ্গতিহীন কাজের পথ অনুসরণ করতে বাধ্য হবে তাদের নতুন অর্জিত সম্পদ এবং ক্ষমতা বৈধ করার জন্যে। প্রথমত, তারা অবশ্যই তাদের উন্নতিকে তাদের ভাগ্যের ভিতর জাস্টিফাই করবে পশ্চিমের বাগধারা আর দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে; এই ধরনের জ্ঞানের একটা চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে, তারপর তারা তাদের দেশের লোকজনকে শিখানোর জন্য তা হাতে নেবে। যখন লোকজন তাদেরকে তীব্রভাবে ভৎর্সনা করবে ঐতিহ্যকে ইগনোর করার জন্য, তখন তারা একটা মারাত্মক এবং অসহিষ্ণু জাতীয়তাবাদের ঝান্ডা ঘোরাবে। এই বির্তকগুলিকে যাকে ফ্লবেয়ারের মতো একজন বাইরের দর্শক হয়তো উদ্ভট বলবেন, হয়তো এইসব রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রোগ্রামগুলির মধ্যেকার সংঘর্ষগুলি এবং সাংস্কৃতিক উচ্চাকাঙ্খাগুলি, যা তারা ধারণ করে। অন্যদিক দিয়ে, এখানে গ্লোবাল অর্থনীতিতে যোগ দেয়ার তাড়া আছে, অন্যদিক দিয়ে রাগী জাতীয়তাবাদীরা যারা খাঁটি গণতন্ত্র এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে দেখে পশ্চিমা আবিষ্কার হিসাবে।

ভি.এস. নাইপল হচ্ছেন প্রথমদিককার লেখকদের মধ্যে একজন যিনি পোস্ট-কলোনিয়াল যুগের এইসব শেকড়হীন, জিঘাংসু অ-পশ্চিমা শাসক এলিটদের প্রাত্যহিক জীবন বর্ণনা করেছেন। গত মে মাসে, কোরিয়াতে, যখন আমি মহান জাপানি লেখক কেনজাবুরো ওয়ে’র সাথে দেখা করি, আমি শুনেছিলাম যে, তিনিও, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছিলেন, তার দেশের মিলিটারীরা কোরিয়া এবং চীন দখলের সময় যে কুৎসিত অন্যায়গুলি করেছিল, সেইকথা টোকিওতে খোলাখুলিভাবে আলোচনার কথা বলে। চেচেন এবং অনান্য সংখ্যালঘু এবং সিভিল-রাইটস গ্র“পগুলির প্রতি রাশিয়া রাষ্ট্র, ভারতে চিন্তার স্বাধীনতার উপর হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা যে অসহিষ্ণুতা দেখাচ্ছে এবং চীন যে সর্তকভাবে উগ্রিস (টরমযঁৎং) এথনিকদের নিশ্চিহ্ন করছে-এর সবগুলিই একই ধরনের বিরোধিতা দিয়ে বৃদ্ধি লাভ করছে।

যখন আগামীর উপন্যাসিকরা এই নতুন এলিটদের ব্যক্তিগত জীবন বর্ণনা করার প্রস্তুতি নিবে, তখন তাদের কোন সন্দেহ থাকবে না যে, পশ্চিম তাদের রাষ্ট্রের ভিতরে চিন্তার প্রকাশের এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে সমালোচনা করতে পারবে না। কিন্তু এখনকার দিকে ইরাক নিয়ে এবং সি.আই.এ.র বন্দিশালাগুলিতে গোপন রির্পোটগুলি নিয়ে তুরস্কে এবং অনান্য জাতিদের কাছে পশ্চিমের গ্রহণযোগ্যতা এতোটাই ক্ষতিগ্রস্থ যে, আমার মতো লোকের কাছে এটা আরো বেশি কঠিন সত্যিকারের পশ্চিমা গণতন্ত্রকে আমার পৃথিবীর অংশ বলে তৈরী করা।


ছাপা হয়:১৯.১২.২০০৫.
পোস্ট করা হয়: ১২.১২.২০০৫.
টাইম ম্যাগাজিন

(তুর্কি থেকে অনুবাদ করেছেন গধঁৎববহ ঋৎববষু)

ওরহান পামুক তুর্কির ঔপন্যাসিক। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ২০০৬ সালে। তার এই পুরস্কার পাওয়ার কিছুদিন আগে ও পরে তার বিভিন্ন লেখা অনুবাদ করা হয়, বাংলা ভাষায়। লেখাগুলি পড়ে তার সর্ম্পকে আমি আগ্রহী বোধ করি। তার লেখা পড়ার ও তার সর্ম্পকে জানার চেষ্টা করি, ইন্টারনেটে র্সাচ করে।

এখানে যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে সেইটা রাজনৈতিক। তিনি তার দেশের, মানে তুরস্কের একটা পুরানো ঘটনা নিয়া প্রকাশ্যে বলেন, যা তাকে বির্তকিত করে তোলে। সম্ভবত তিনি বলেছিলেন, অটোমান সাম্রাজ্যের সময় যে একটা গণহত্যা হয়েছিল, তাকে স্বীকার করা উচিত এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে সে সর্ম্পকে সত্য কথা জানানো প্রয়োজন। কেননা জাতি হিসাবে যেসব কুর্কীতি আছে তাকে অস্বীকার করে বা ধামাচাপা দিয়ে নিজেদেরই ছোট করা হচ্ছে বলে তার অভিমত। কিন্তু এই নিয়ে কথা বলা সম্ভবত তুরস্কে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ। আর এখানে যে রাজনীতি, তা প্রকৃতগতভাবে একটু জটিল।

ওরহান পামুকের কিন্তু সচেতনভাবেই এটা বলছেন এবং তার এই বক্তব্য আঘাত করছে উগ্র জাতীয়তাবাদীদেরকে এবং খুশি হচ্ছে পশ্চিমা গণতন্ত্রবাদীরা। দেশে তিনি নিগৃহীত হচ্ছেন, মামলা করা হচ্ছে এবং বিদেশে তাকে নিয়ে মাতামাতি করা হচ্ছে, তিনি আর্ন্তজাতিক ব্যক্তিতে পরিণত হচ্ছেন। নোবেলও পেয়ে গেলেন এর ধারাবাহিকতায়। তার এই অবস্থান কিন্তু তথাকথিত পশ্চিম কে একটা রিলিফ দিচ্ছে, এইভাবে যে, গণহত্যা তো শুধুমাত্র ইরাকেই হচ্ছে না, আফগাস্তিানেই হচ্ছে না, অটোম্যানও করেছে এক সময়। এই রাজনীতি সর্ম্পকে ওরহান পামুক অসচেতন নন। তার রাজনৈতিক অবস্থানও এখানে স্পষ্ট।

---------------------------------------------------------------------------------------------------

No comments: