Wednesday, May 7, 2008

এন্টি-অডিপাস এর প্রস্তাবনা।।মিশেল ফুকো।।

এন্টি-অডিপাস এর প্রস্তাবনা
মিশেল ফুকো


১৯৪৫-৬৫ সালের দিকে (আমি ইউরোপের কথা বলছি), সঠিকভাবে চিন্তা করার একটা নির্দিষ্ট পথ ছিল, রাজনৈতিক ডিসকোর্সের একটা নির্দিষ্ট স্টাইল ছিল, বুদ্ধিচর্চার ছিল একটা নির্দিষ্ট ইথিকস। তখন একজনের মার্কস এর অভিধাগুলির সাথে খুব পরিচয় ছিল এবং তার স্বপ্নগুলি ফ্রয়েডের চাইতে খুব বেশি দূরের ছিল না। তাকে ব্যবহার করতে হতো চিহ্ন-ব্যবস্থাকে-চিহ্নিতকারীকে-সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে। এই তিনটা ছিল আবশ্যিক প্রয়োজন, সেই সময়ের সত্যের মাপকাঠি এবং সেই সময়ে গ্রহণযোগ্য হিসাবে, লেখালেখির এবং কথা-বার্তার অদ্ভুত কাজটাকে তা পূর্ণ করে রেখেছিল।

তখনই আসলো, সংক্ষিপ্ত, দুর্দান্ত আবেগের, বিজয়োল্লাসের, বিভ্রান্তিকর বছরগুলি। আমাদের পৃথিবীর প্রবেশদ্বারে, অবশ্যই, সেখানে ছিল ভিয়েতনাম এবং ক্ষমতার বিপক্ষে প্রথম মেজর ধাক্কা ছিল সেটা। কিন্তু এখানে, আমাদের দেয়ালগুলির ভিতর, তখন আসলে কী ঘটেছিল? বিপ্লবী এবং দমনবিরোধী রাজনীতির একটা ভরাট (
an amalgan)? একটা যুদ্ধ চলছিলো দুইটা ফ্রন্টে-সামাজিক শোষণ এবং মানসিক দমনের ক্ষেত্রে? লিবিডোর একটা উচ্ছ্বাস যা শ্রেণিসংগ্রামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছিল? হয়তো। যে কোনো মাত্রাতেই, এটা সেই পরিচিত, দ্বান্দ্বিক ব্যাখ্যা যা সেই বছরগুলির ঘটনাগুলির দাবি করছিলো। স্বপ্নটা, যা তার ব্যাপ্তিকালকে নিক্ষেপ করেছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ফ্যাসিজমের মধ্যে; ইউরোপের সবচেয়ে স্বাপ্নিক অংশে-উইলিয়াম রিখ-এর জার্মানিতে এবং ফ্রান্সের সুরিয়ালিস্টিকদের মধ্যে-যা ফিরে এসেছিলো এবং নিজের জন্য বাস্তবতার আলো জ্বেলেছিলো-মার্কস এবং ফ্রয়েড একই ভাস্বর আলোতে।

কিন্তু সত্যিই কি এটা ঘটেছিলো? ত্রিশের ইউটোপিয়ান প্রজেক্টটা কি আবারও শুরু হয়েছিল, এবার কি ঐতিহাসিক প্রয়োগের মাত্রার উপর? অথবা অন্যদিক থেকে, সেখানে কি রাজনৈতিক সংগ্রামের একটা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, মার্কসীয় ভাবধারা যা মনে করেছিলো বাইরের কিছু বলে? বাসনার একটা অভিজ্ঞতা এবং প্রকৌশলের দিক দিয়ে যা ফ্রয়েডিয়ান ছিল না? এটা সত্যি যে, পুরনো ব্যানারগুলি তুলে ধরা হচ্ছিল, কিন্তু সংগ্রামটা বদল হয়েছিলো এবং ছড়িয়ে পড়ছিলো নতুন ক্ষেত্রগুলিতে।

এন্টি-অডিপাস সর্বপ্রথম দেখিয়েছে যে, কতটুকু জায়গা বলা হয়েছে। কিন্তু এটা তার চেয়ে বেশি কিছু করেছে। এটা পুরনো আইডলগুলিকে অবমাননা করে সময় নষ্ট করে নাই, যদিও তা ফ্রয়েডকে নিয়ে প্রচুর মজা করেছে। সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, এটা আরো এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়।

এন্টি-অডিপাসকে একটা তাত্ত্বিক রেফারেন্স হিসাবে পড়লে ভুল হবে (আপনি জানেন যে, অতি-নকিব তত্ত্ব শেষ পর্যন্ত সবকিছুকেই ঘিরে রাখে, যা শেষ পর্যন্ত সামগ্রিকতা দেয় এবং পুনরায় আশ্বস্ত করে, যাকে বলা হয় যে আমাদের “খুব বেশি দরকার” আমাদের ছত্রভঙ্গের এবং স্পেশালাইজেশনের সময়টাতে যখন কোনো “আশা” আর থাকে না)। কারো এইখানে একটা “দর্শন”-এর খোঁজ করা উচিত না, যা পাওয়া যাবে ভুরি ভুরি অসাধারণ নতুন অভিমতগুলি এবং বিস্ময়কর ধারণাগুলির মধ্যে: এন্টি-অডিপাস একটা চটকদার হেগেল না। আমি মনে করি এন্টি-অডিপাসকে পড়া যেতে পারে একটা “শিল্প” হিসাবে, উদাহরণস্বরূপ, এই ধারণার মধ্যে যা এটা বহন করে “ইরোটিক শিল্প” টার্মটার মাধ্যমে। সংখ্যাধিক্যগুলির, প্রবহমানতাগুলির, সুবিন্যস্তকরণগুলির এবং সংযোগগুলির বিমূর্ত অভিমতগুলি দিয়ে জ্ঞাত হয়ে বাসনার সাথে বাস্তবতার এবং পুঁজিবাদী “মেশিন” সম্পর্কের বিশ্লেষণটা সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলির উত্তরগুলি দেয়। প্রশ্নগুলি খুব একটা উদ্বিগ্ন নয় এই বিষয়ে যে, এটা কেন অথবা তাহলে তারপর কীভাবে আগাব। কীভাবে একজন বাসনাকে সম্পর্কিত করে চিন্তা, ডিসকোর্স এবং কর্মের সাথে? কীভাবে বাসনা পারে এবং তার কর্তৃত্বগুলিকে প্রয়োগ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রটার মধ্যে এবং আরো তীব্র হয়ে উঠে বিন্যাসকে প্রতিষ্ঠা করার সময় বিপর্যস্ত করার প্রক্রিয়ায়? আরস ইরোটিকা, আরস থিওরিটিকা, আরস পলিটিকা।

যেখান থেকে আসে যে, এই তিনটা বিপক্ষ মুখোমুখি হয়েছে এন্টি-অডিপাস দ্বারা। তিনটা বিপক্ষেরই একইরকম শক্তিমত্তা না, যা বিপদের মাত্রাভেদে বিভিন্ন এবং এই বইটা এদের মোকাবিলা করেছে, ভিন্ন ভিন্ন পথে :

১. রাজনৈতিক সন্ন্যাসী, বিষণœ মিলিট্যান্ট, তত্ত্বের সন্ত্রাসীরা যারা সংরক্ষণ করে রাজনীতির খাঁটি বিন্যাস এবং রাজনৈতিক ডিসকোর্স। বিপ্লবের আমলারা এবং সত্যের সরকারী কর্মচারীরা।
২. বাসনার গরিব প্রকৌশলীরা-প্রত্যেকটা চিহ্ন এবং আলামতের মনোচিকিৎসকরা এবং সেমিওলোজিস্টরা-যারা হ্রাস করে বাসনার সংখ্যাধিক্যকে গঠনের এবং ঘাটতির বাইনারি নিয়মের মাধ্যমে।
৩. শেষ কিন্তু অ-গুরুত্বপূর্ণ নয়, সবচেয়ে বড় শত্র“, কৌশলগত শত্র“ হচ্ছে ফ্যাসিজম (যেখানে এন্টি-অডিপাস হচ্ছে অনান্যগুলির প্রতিপক্ষ, যা অনেকটাই কৌশলগত যুদ্ধ)। এবং শুধুমাত্র ঐতিহাসিক ফ্যাসিজমই নয়, হিটলার আর মুসোলিনির ফ্যাসিজম-যা নিজেকে স্থানান্তর করতে সক্ষম এবং জনসাধারণের বাসনাকে খুব কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে-কিন্তু আমাদের সবার মধ্যে যে ফ্যাসিজম আছে, আমাদের মাথার ভিতরে, আমাদের প্রতিদিনের আচার-আচরণের মধ্যে, যে ফ্যাসিজম আমাদের ক্ষমতাকে ভালবাসার কারণ, সেই জরুরি জিনিস যা কর্তৃত্ব করে এবং আমাদেরকে শোষণ করে।

আমি হয়ত বলবো যে এন্টি-অডিপাস (এর লেখকরা হয়তো আমাকে মাফ করবেন) হচ্ছে ইথিকস-এর একটা বই, ফ্রান্সে অনেকদিন পর লেখা ইথিকস-এর উপর লেখা প্রথম বই (হয়তো এটা ব্যাখ্যা করে যে, কেন এর সাফল্য একটা নির্দিষ্ট “পাঠকগোষ্ঠী”র মধ্যে সীমাবদ্ধ না : এন্টি-অডিপাস হয়ে উঠছে একটা জীবন-আচরণ, চিন্তা করার এবং বেঁচে থাকার একটা পথ)। কীভাবে একজন নিজেকে বাঁচাবে ফ্যাস্টিট হওয়া থেকে, যখন (বিশেষ করে) একজন বিশ্বাস করে যে সে একজন বিপ্লবী যোদ্ধা? কিভাবে আমরা রক্ষা পাবো আমাদের কথাগুলি আর আমাদের কাজগুলি থেকে, আমাদের হৃদয়গুলি আর আমাদের আনন্দগুলি থেকে, ফ্যাসিজমের? কী করে আমরা খুঁজে বের করবো ফ্যাসিজমকে যা আমাদের আচার-আচরণে বদ্ধমূল হয়ে আছে? খ্রিষ্টান নীতিবিদরা খুঁজে বের করে আত্মার গভীরে মাংসল কক্ষে যে চিহ্নগুলি আছে। দেল্যুজ এবং গুট্টেরী, তাদের দিক থেকে তাড়া করেছেন শরীরের ভিতর ফ্যাসিজমের সামান্যতম চিহ্ন খুঁজে পেতে।

সেইন্ট ফ্রাসোঁ ডি সেল১ এর প্রতি বিনয় ও শ্রদ্ধা রেখে একজন বলতে পারে যে, এন্টি-অডিপাস হচ্ছে একটা নন-ফ্যাসিস্ট জীবনের ভূমিকা।

এখন বর্তমান অথবা আসন্ন যে কোনো ধরনেরই হোক, ফ্যাসিজমের সব ধরনের রূপের বিরুদ্ধে, বেঁচে থাকার এই শিল্প, যা একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক দরকারী প্রিন্সিপালকে তুলে ধরে, তাকে যদি আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করতে চাই, যদি আমি এই মহান বইটাকে প্রতিদিনের জীবনের একটা ম্যানুয়াল বা গাইড হিসাবে তৈরি করতে চাই, তাহলে আমি তা বলবো এইভাবে :

  • স্বাধীন রাজনৈতিক কর্ম, যা সব ধরনের একত্ববাদী এবং সমগ্রতাবাদী ভ্রম থেকে মুক্ত।
  • কর্ম, চিন্তা এবং বাসনাগুলি তৈরি করা দ্রুত-বিস্তার, সন্নিধি ও বিয়োজকের উপর নির্ভর করে এবং বিভক্তি ও পিরামিড পুরোহিততন্ত্রের মাধ্যমে নয়।
  • নেতিবাচক (আইন, সীমা, নপুংসককরণ, অভাব, যুক্তির ফাঁক) এর সমস্ত পুরনো ক্যাটাগরিগুলি থেকে আনুগত্য প্রত্যাহার করা, যাকে পশ্চিমা চিন্তা-ধারা ক্ষমতার একটা রূপ হিসাবে এবং বাস্তবতাকে গ্রহণ করার জন্য অনেকদিন ধরে পবিত্র বলে গণ্য করেছে। পজিটিভ এবং বহুবিদকে শ্রেয় মনে করা, শ্রেয় মনে করা পার্থক্যকে সমরূপতার উপরে, প্রবাহগুলিকে একতাগুলির বিপরীতে, ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থাগুলিকে শৃংখলাগুলির বিপরীতে। বিশ্বাস করা যে, যা কিছু উৎপাদনক্ষম, তা আসনাশ্রয়ী নয়, বরং যাযাবর।
  • এটা মনে করবেন না যে একজনকে বিপ্লবী হতে হলে তাকে বিষণœ হতে হবে, এমন কি এই বিষয়ের মধ্যে যে, যুদ্ধ করা একটা জঘন্য ব্যাপার। এটা বাসনার সাথে বাস্তবতার সংযোগ (এবং এটা প্রতিনিধিত্বের রূপের মধ্যে ফিরে যাওয়া নয়) যা বিপ্লবী শক্তির অধিকারী।
  • চিন্তাকে ব্যবহার করো না সত্যের ক্ষেত্রে একটা রাজনৈতিক প্রয়োগের গ্রাউন্ড হিসাবে, অথবা রাজনৈতিক কর্ম থেকে অবিশ্বাসের দিকে, এমন কি একটা অনুমান হিসাবেও, চিন্তার একটা রেখা হিসাবেও না।
  • রাজনীতির কাছে এই দাবি করো না যে, সে ব্যক্তির “অধিকারগুলি”কে ফিরিয়ে দেবে, যেহেতু দর্শন তাদেরকে সংজ্ঞায়িত করেছে। ব্যক্তি ক্ষমতারই একটা ফলাফল। প্রয়োজন হচ্ছে “অ-ব্যক্তিকীকরণ”-এর, গুনন এবং স্থানচ্যুত করার মাধ্যমে, বিভিন্ন মিশ্রণের ভিতর দিয়ে। এই গ্র“পটা অর্গানিক অঙ্গীকার হবে না যা ব্যক্তিদেরকে এক করে একটা পুরহিততন্ত্রের ভিতর, বরং এটা হবে অ-ব্যক্তিককরণের একটা স্থির উৎপাদনযন্ত্র।
  • ক্রমে ক্ষমতার অনুরক্ত হয়ো না।

এটা হয়তো বলা যায় যে, দেল্যুজ এবং গুট্টেরী ক্ষমতার বিষয়ে খুব একটা সর্তক ছিলেন না, যা তারা চেষ্টা করেছেন তাদের নিজস্ব ডিসকোর্সের ভিতর ক্ষমতার প্রভাবগুলিকে নিরপেক্ষ করে তুলতে। যদিও, এই খেলাগুলি আর ফাঁদগুলি ছড়িয়ে আছে বইটার সর্বত্র, যার অনুবাদ করাটা একটা সত্যিকারের দক্ষতার কাজ হবে। কিন্তু এটা ভাষার পরিচিত ফাঁদগুলি নয়: পরবর্তী কাজগুলি পাঠককে আন্দোলিত করবে তাকে ম্যানিপুলেশন-এর বিষয়ে সচেতন না করে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে জয় করবে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এন্টি-অডিপাস এর ফাঁদগুলি হচ্ছে হাস্যরসের-এতগুলি আমন্ত্রণ আছে যে, একজন হয়তো বের হয়ে যাবে, টেক্সট থেকে বাইরে বের হয়ে আসবে এবং সজোরে দরজাটা বন্ধ করে দেবে। একজন হয়তো প্রায়ই মনে করতে পারে যে, এর সবকিছুই হাসি-তামাশা আর খেলা, যখন প্রয়োজনীয় একটা কিছু ঘটছে, চূড়ান্ত চিন্তাশীল একটা কিছু : ফ্যাসিজমের সমস্ত ধরনের বৈচিত্রের তালাশ করা, প্রচুর থেকে শুরু থেকে করে যা আমাদের চারপাশে আছে এবং আমাদেরকে নিংড়ে নিয়ে সাধারণ করে তোলে, যা স্থাপন করে আমাদের প্রতিদিনকার জীবনের নির্মম তিক্ততাগুলিকে।

১. তিনি সতেরোশ শতাব্দীর একজন পাদ্রী এবং জেনেভার বিশপ ছিলেন, যিনি তার র্ধামিক জীবনের ভূমিকা নামে বইটার জন্য পরিচিত।

_______________________________________________________
বাংলা অনুবাদের নোট:

এন্টি-অডিপাস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। রচয়িতা, গিলেজ দেল্যুজ ও ফেলিক্স গুট্টেরী। প্রথম পর্বের নাম রাখা হৈছিল, ক্যাপিটালিজম এন্ড সিজোফ্রেনিয়া। যার দ্বিতীয় খন্ডের নাম এ থাউজেন্ড পিটেলস, প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। ফুকোর এই রচনাটা প্রথম ফরাসী ভাষায় প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। পরে আলোচ্য গ্রন্থের আমেরিকান সংস্করণের ভূমিকা হিসাবে ইংরেজিতে আসে। বাংলা ভাষান্তরের ক্ষেত্রে, পল রেবিনিউ সম্পাদিত দি এসেনসিয়াল ওয়াকর্স অফ ফুকো’তে প্রকাশিত টেক্সটা ফলো করা হয়েছে।

ফুকো এন্টি-অডিপাসকে একটা তত্ত্ব হিসাবে আবিষ্কার করেন না, বরং আবিষ্কার করেন একটা বাস্তবতা হিসাবে । এই লিখাটাকে অনেকেই বলছেন একটা অ-ব্যক্তিকীকরণ অথবা অ-ফ্যাসিস্ট ম্যানিফেস্টো এবং সন্দেহ ছাড়াই ফুকো খুবই সরাসরিভাবে বলছেন, কথাগুলিকে। এন্টি-অডিপাস এর ভূমিকাটাকে তিনি আবিষ্কার করছেন নতুন একটা চিন্তার ভিত্তি হিসাবে, যেখানে একটা চিন্তার কাঠামো নিশ্চিতভাবেই নির্দিষ্ট কিছু ইথিকস দিয়া চালিত হৈতো, অ্যান্টি-অডিপাস তার ভিত্তিগুলিকে অগ্রাহ্য করে এবং বাস্তবতার নতুন বিবরণ উন্মোচন করে। এইটা শুধুমাত্র কোন তত্ত্বের কাজ করে না, এটা জড়িত করে বাস্তবকে।

এর উপর ভিত্তি করে ফুকো কিছু নীতিমালার কথা বলেন, যার উপলদ্ধিটা জরুরী বলে মনে হয়, বিশেষ কৈরা, শেষ যে পয়েন্টটা, ক্রমে ক্ষমতার অনুরক্ত হয়ো না। তবে ‘ক্ষমতা’র প্রশ্নটাকে এন্টি-অডিপাস মোকাবিলা করতে পারে না বলেই তার অভিমত।
এন্টি-অডিপাস যখন ফ্রয়েডের মনোবিশ্লেষণকে অস্বীকার করে তখন স্বাভাবিকভাবেই আমার কৌতুহল হৈছিল যে, লাঁকা’র প্রতিক্রিয়া কি ছিল তখন? খুঁজতে গিয়া দেখা গেলো ১৯৯৫ সালে, দেল্যুজ মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে, আরেক ফরাসী দার্শনিক
Didier Eribon তারে জিজ্ঞাসা করেন, লাঁকা’র সাথে তার সর্ম্পক বিষয়ে। জবাবে দেল্যুজ তারে একটা কাহিনি শোনান, যা ছিল, এইরকম: “লাঁকা আমাকে চিনেছিলেন যখন তিনি একটা সেশন আমার বই এর উপর আলোচনা করছিলেন (দেল্যুজের মাসোইজম: কোল্ডনেস এন্ড ক্রুয়েলিটি, ১৯৬৭)। আমাকে এটা নিয়ে বলা হয়েছিল, যদিও আমি এর চাইতে বেশি কিছু জানতাম না - যে, তিনি আমার বইয়ের পিছনে এক ঘন্টারও বেশি সময় ব্যয় করেছিলেন। এরপর তিনি লিয়েনে একটা সম্মেলনে এসেছিলেন, যেখানে আমি তখন পড়াতাম।
তিনি সেখানে একটা অবিশ্বাস্য বক্তৃতা করলেন . . . যেখানে তিনি তার বিখ্যাত ফর্র্মূলার কথা প্রকাশ করলেন, “সাইকোঅ্যানালাইসিস সবকিছুই করতে পারে, শুধুমাত্র একটা ইডিয়টকে বুদ্ধিমান বানানো ছাড়া।” এই সম্মেলনের পর তিনি আমাদের এখানে ডিনারে আসলেন। আর যেহেতু তিনি খুব দেরি করে ঘুমাতে যেতেন, তিনি অনেক লম্বা সময় ছিলেন। আমি মনে করতে পারি: তখন প্রায় মধ্যরাত পার হয়ে গেছে এবং তার তখন একটা বিশেষ ধরণের হুইস্কির খুবই প্রয়োজন দেখা দিলো। সত্যি কথা, সেটা একটা ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের রাত ছিল।
তার সাথে মুখোমুখি হওয়ার আসল ঘটনাটা ঘটেছিল এন্টি-অডিপাস বের হওয়ার পর। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, তিনি এটা ভালোভাবে নেন নাই। তিনি অবশ্যই এটা আমাদের বিপক্ষে নিয়েছিলেন, আমার এবং ফেলিক্স এর। কিন্তু অবশেষে, এর কয়েকমাস পরে, তিনি সমন পাঠালেন - এ নিয়ে আর অন্য কোন কথা ছিল না। তিনি আমাকে দেখতে চান। আর তাই আমিও গেলাম। তিনি আমাকে তার উপকক্ষে অপেক্ষা করালেন। ঘরটি মানুষজনে পরিপূর্ণ ছিল, আমি জানতাম না তারা কি রোগী, ভক্ত না সাংবাদিক ছিল . . . তিনি আমাকে অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করালেন - বেশ একটু বেশি সময়ই, একই তো ব্যাপার - এবং অবশেষে তিনি আমাকে গ্রহণ করলেন। তিনি তার সব ভক্তদের একটা লিস্ট তুলে ধরলেন এবং বললেন যে, তারা সবাই অকাজের (একমাত্র জেঁকুইস-এলান মিলারকে নিয়েই তিনি কোন বাজে কথা বলেন নাই)। আমার হাসি পেলো, কারণ ইরহংধিহমবৎ ও আমাকে এইরকম একটা দৃশ্যের কথা বলেছিলেন: ফ্রয়েড বাজে কথা বলছেন জোনস, আব্রাহাম, এদের সর্ম্পকে এবং ইরহংধিহমবৎ যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান ছিলেন বোঝার জন্য যে, ফ্রয়েড তার অনুপস্থিতিতেও তার সর্ম্পকে এইসব কথা বলবেন। তো লাঁকা কথা বলছিলেন, আর সবাইকে দোষী করছিলেন, মিলারকে ছাড়া। আর তারপর তিনি আমাকে বললেন “আমি এখন তোমার মতো কাউকে চাই।”

দেল্যুজের কাজই প্রমাণ করে যে, তিনি লাঁকার এই চাওয়াতে কতোটা সাড়া দিয়েছিলেন! অবশ্য দেল্যুজের লাঁকা বিশ্লেষণ নিয়াও সমালোচনা যে নাই, তাও না; বর্তমান কালের অনেক রথী-মহারথীরাই এতে আছেন। এমন কথাও আছে যে, দেল্যুজ/গুট্টেরী আসলে একই কাজ করছেন লাঁকাঁর প্রতি, যেটা কার্ল গুস্তাভ ইয়ং করছিলেন, ফ্রয়েডরে নিয়া। যদিও বইটাতে লাঁকা সর্ম্পকে কোন বাজে কথা বলা নাই, তারপরও লাঁকা-অনুসারী জিজেক একে চরমভাবে নিছেন এবং দেল্যুজের সবচে’ বাজে বই বলে রায় দিছেন, যদিও লাঁকা নিজে কোনসময়ই সেই কাজ করেন নাই। বরং লাঁকার পরবর্তী চিন্তায় বিষয়গুলিকে আরো মনোযোগের সাথে নিছিলেন।

বাংলা অনুবাদটা এর আগে ওয়েব গ্র“প কবিসভাতে প্রথম প্রচারিত হৈছিল, সম্ভবত ২০০৬ খ্রীষ্টাব্দের প্রথম দিকে।

পুরাটাই আবার এডিট করা লাগবো।

No comments: