Wednesday, May 7, 2008

ফুকো

ফুকো


“যা-ই হোক, আমার ব্যক্তিগত জীবন মোটেই চমকপ্রদ নয়। যদি কেউ ভেবে থাকেন যে আমার কোন কাজ আমার জীবনের এই এবং এই অংশ ছাড়া বোঝা যাবে না, আমি সেই প্রশ্ন ভেবে দেখতে সম্মত আছি। আমি উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত যদি আমি সম্মত হই। আর যেহেতু আমার ব্যক্তিগত জীবন আর্কষণীয় কিছু না, এটাকে একটি গোপন হিসাবে তৈরি করার কোন দরকার নাই। একইভাবে, এইটাকে পাবলিকাইজ করারও কোন দরকার নাই।”

মিশেল ফুকো, স্টিফেন রিগনিস এর সাথে কথা-বার্তা, টরেন্টো, ১৯৮২.

‘আমি চাইবো আমার বইগুলি হয়ে উঠুক এক ধরনের টুল-বাক্স যা অন্যরা তল্লাশি করতে পারে একটা যন্ত্র পাওয়ার জন্য যা তারা ব্যবহার করতে পারবে তাদের নিজেদের এলাকায় . . . আমি চাইবো [আমার কাজ] একজন প্রশিক্ষকের কাছে, একজন ওয়ার্ডেনের কাছে, একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে, একটি বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিবাদকারীর কাছে প্রয়োজনীয় হবে। আমি একটা পাঠক সমাজের জন্য লিখি না, আমি লিখি ব্যবহারকারীদের জন্য, পাঠকদের জন্য না।”

মিশেল ফুকো (১৯৭৪)

'Prisons et asiles dans le mécanisme du pouvoir' in Dits et Ecrits, t. II. Paris: Gallimard, 1994, pp. 523-4.



. . . . . . . . . . . .


দার্শনিক ধারায় ফুকোকে যতদূর পর্যন্ত ধরা যায়, তা হচ্ছে কান্টের সমালোচনামূলক ধারা এবং তার প্রকল্পটাকে বলা যায় চিন্তার সমালোচনামূলক ইতিহাস। এটাকে একটা ধারণার ইতিহাস বললে সঠিক হবে না যা হচ্ছে একই সময়ে ভুলগুলির পর্যালোচনা যা ঘটনার বিচারের পর মানদন্ড হিসাবে বেরিয়ে আসতে পারে; অথবা ভ্রান্ত ব্যাখ্যাগুলির অর্থোদ্ধার যা এদের সাথে জড়িত এবং যার উপর হয়তো নির্ভরশীল বলে আজকে আমরা মনে করছি। যদি ধরে নেয়া হয় চিন্তার মাধ্যমে যা বোঝানো হয় তা হচ্ছে একটা বিষয় (সাবজেক্ট) ও একটা বস্তু (অবজেক্ট), তাদের মধ্যেকার সম্ভাব্য সর্ম্পকগুলিসহ, তাহলে একটা চিন্তার সমালোচনামূলক ইতিহাস হবে শর্তগুলির একটা পর্যালোচনা যার ভিতর বিষয় এবং বস্তুর নিশ্চিত সর্ম্পক তৈরী হয় অথবা পরিবর্তিত হয়, যথাসম্ভব এই সর্ম্পকগুলির মাধ্যমে স্থাপন করে একটা সম্ভাব্য জ্ঞান [পরিত্রাতা হিসাবে]। এটা বস্তুর প্রতি সর্ম্পকের আনুষ্ঠানিক শর্তগুলি সংজ্ঞায়িত করার ব্যাপার নয়, অথবা ব্যাপারটা নয় বাস্তব শর্তগুলির পৃথিকীকরণ যা হতে পারে একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তে, যা সাধারণভাবে বিষয়টাকে সক্ষম করে প্রকাশিত হতে একটি বস্তুর মাধ্যমে, যা বাস্তবে রয়েছে। সমস্যাটা হচ্ছে স্থির করার কি হতে পারে বিষয়টা, কোন শর্তগুলির ভিত্তিতে তিনি বিষয়, কোন পদমর্যাদা তার থাকা প্রয়োজন, বাস্তবে অথবা কল্পনায় সে কোন অবস্থান দখল করবে, একটা যুক্তিসঙ্গত বিষয় হতে হলে এটার অথবা অন্য রকম একটা জ্ঞানের [সচেতনতা হিসাবে]। সংক্ষেপে, এটা হচ্ছে “বিষয়করণ” এর পদ্ধতিটিকে স্থির করার একটা ব্যাপার; পরবর্তীতে যা অবশ্যই একই নয়, জ্ঞান কি একটি ধর্মীয় পুস্তকের ব্যাখ্যার সাথে জড়িত, প্রাকৃতিক ইতিহাসের প্রত্যক্ষণ অথবা একটি মানসিক রোগীর আচরনের ব্যাখ্যা - তার ভিত্তিতে। কিন্তু একই সময়ে এটা স্থির করার প্রশ্ন যে, কোন শর্তগুলির ভিতর কোনকিছু বস্তু হয়ে উঠতে পারে একটা সম্ভাব্য জ্ঞানের [সচেতনতা হিসাবে], কিভাবে এটা সমস্যায়িত হতে পারে একটা বস্তু হিসাবে যাকে জানতে হবে, কোন নির্বাচিত প্রক্রিয়ায় এটা হতে পারে বিষয়কৃত, আর এর অংশকে যা বিবেচনা করা হবে প্রাসঙ্গিক বলে। সুতরাং ব্যাপারটা হচ্ছে বস্তুকরণ এর পদ্ধতিটাকে স্থির করার, যা একইরকম নয়, জ্ঞানের [পরিত্রাতা হিসাবে] প্রকারভেদে, যার সাথে এটা জড়িত।

এই বস্তুকরন [অবজেক্টিভাইজেশন] ও বিষয়করন [সাবজেক্টিভাইজেশন] একে অপরের দিক থেকে স্বাধীন নয়। তাদের পারস্পরিক উন্নয়নে এবং তাদের আন্তঃসর্ম্পক থেকে, যাকে বলা যেতে পারে “সত্যের খেলা” বেরিয়ে আসে - এটা সত্য জিনিসের আবিষ্কার নয় বরং নিয়মগুলি যার ভিত্তিতে একটি বিষয় বলতে পারে কিছু জিনিস সর্ম্পকে সত্য এবং মিথ্যা প্রশ্নের উপর নির্ভর করে। সংক্ষেপে, এই চিন্তার সমালোচনামূলক ইতিহাস সত্যের অর্জনগুলির ইতিহাস অথবা এর গুপ্তকরন এর ইতিহাস নয়, এটা হচ্ছে “যাচাইসমুহের” ইতিহাস, বোঝা যাবে রূপগুলির মধ্যে দিয়ে যে, কোন বয়ান (ডিসকোর্স) সত্য বা ভুল ঘোষণা করার জন্য সমর্থ, একটা এলাকার বিষয়াবলীর (থিংকনস) সর্ম্পকে গ্রন্থিবদ্ধতার ভিতর দিয়ে। এই উত্থানের শর্তাবলী কি ছিল, যে মূল্য দিতে হয়েছে, তাই বলার জন্য, বাস্তবতার উপর তার প্রভাব এবং যেভাবে সে সংযুক্ত করে একটা রকমের বস্তুকে বিষয়টার নির্দিষ্টরকমের ক্রিয়াপদ্ধতির সাথে, স্থাপন করে ঐতিহাসিক একটা পূর্ববর্তীতা একটা সম্ভাব্য অভিজ্ঞতার একটা নির্দিষ্ট পর্বের সময়ের জন্য, একটা এলাকা এবং প্রদত্ত ব্যক্তিবর্গের জন্য।

এখন মিশেল ফুকো কখনো এই প্রশ্নটা করেন নাই অথবা এইরকমের ধারাবাহিক প্রশ্নগুলি, যা একটা “জ্ঞানের প্রতœবিদ্যার” মধ্যে পড়ে - এবং যা কখনোই বসার ইচ্ছা করে না শুধুমাত্র কোন সত্যের খেলায়, কিন্তু সর্ম্পকযুক্ত করে শুধুমাত্র যেখানে বিষয়টা নিজেই অবস্থান করছে সম্ভাব্য জ্ঞানের একটা বস্তু হিসাবে: বিষয়ীকরণের এবং বস্তুকরণের প্রক্রিয়াগুলিই বা কি যা বিষয়ের ভিতর বিষয়ে সম্ভব করে তোলে একটা বস্তু হয়ে উঠার জন্য জ্ঞানের [সচেতনতা হিসাবে], একটা বিষয় হিসাবে? অবশ্যই এটা নির্ধারণ করার ব্যাপার না যে কিভাবে একটা “মানসিক জ্ঞান” গঠিত হয় ইতিহাসের ভিতর, বরং কিভাবে বিভিন্ন সত্য-খেলাগুলি রূপ নেয় প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেখানে কোন বিষয় জ্ঞানের একটি বস্তু হয়ে উঠে। মিশেল ফুকো চেষ্টা করছেন দুইভাবে তার বিশ্লেষণ পরিচালনা করতে। প্রথমত, দৃশ্যমান হওয়ার সংযোগ এর মাধ্যমে এবং প্রশ্নটা বলার সন্নিবেশ, পরিশ্রমগুলি এবং জীবিত বিষয় এর মাধ্যমে, এলাকাগুলিতে এবং একটা বৈজ্ঞানিকরকমের জ্ঞানের প্রথা অনুযায়ী। এটার সর্ম্পক আছে নির্দিষ্টরকমের “মানবিক বিজ্ঞান” এর গঠনের সাথে, যা অধ্যয়ন করা হয়েছে প্রায়োগিক বিজ্ঞানগুলির সূত্রের মাধমে, এবং তাদের চরিত্র সতেরোশ ও আঠারোশ শতকের বয়ানের (দ্য অর্ডার অফ থিংন্কস)। ফুকো আরো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন বিষয়ের গঠনকে যখন সে উপস্থিত হতে পারে অন্যদিক থেকে মাননির্ধারক পার্থক্যের মাধ্যমে, একটা জ্ঞানের বস্তু হয়ে উঠাতে - একজন পাগল-মানুষ হিসাবে, একজন রোগী হিসাবে অথবা একজন দুস্কৃতিকারী হিসাবে অনুশীলনগুলির মধ্যে দিয়ে, মনোচিকিৎসা, ক্লিনিক্যাল ঔষুধ এবং কারাব্যবস্থায় (ম্যাডনেস এন্ড সিভিলাইজেশন, বার্থ অফ ক্লিনিক, ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ)।

ফুকো এখন গ্রহণ করছেন, একই সাধারণ প্রকল্পের আওতায়, অধ্যয়ন করার জন্য বিষয়ের গঠনটাকে যেখানে সে নিজে একটা বস্তু হয়ে উঠে: কার্যপ্রণালীর গঠনটাকে যার মাধ্যমে বিষয় নিজেকে দেখতে পায়, নিজেকে বিশ্লেষণ করে, নিজেকে ব্যাখ্যা করে, নিজেকে চিনতে পারে সম্ভাব্য জ্ঞানের একটা এলাকায়। সংক্ষেপে, এটা “বিষয়ীকরণের” ইতিহাসের সাথে সর্ম্পকিত, যদি এটা এই টার্মটার মাধ্যমে বোঝায় যে, যার ভিতর বিষয় নিজেই অভিজ্ঞতা পায় একটা সত্যের খেলার যেখানে সে নিজের সাথে সর্ম্পকিত। ফুকোর দৃষ্টিভঙ্গিতে, যৌনক্রিয়া এবং যৌনতা, শুধুমাত্র একমাত্র সম্ভাব্য উদাহারণই না নিঃসন্দেহে, কিন্তু নিদেনপক্ষে একটা বিশেষ ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে, এটা ছিল এই সর্ম্পকের ভিতর দিয়ে পুরা ক্রিশ্চিয়ানিটি এবং হয়তো তারও পরে, ব্যক্তিদেরকে বলা হয়েছিল তাদের নিজেদেরকে চিনে নেবার জন্য আনন্দের বিষয় হিসাবে, বাসনার, লালসার, প্রলোভনের বিষয় হিসাবে এবং তাড়া দেয়া হয়েছিল ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে (স্ব-পরীক্ষা, আধ্যাত্মিক অনুশীলন, স্বীকারোক্তি, পাপ-স্বীকার), তাদের নিজেদের প্রেক্ষিতে সত্যের খেলা ও মিথ্যা এবং যা গঠন করে সবচেয়ে গোপনীয়, সবচেয়ে ব্যক্তিগত অংশ, তাদের বিষয়ীকরণের।

সংক্ষেপে যৌনতার ইতিহাস বোঝায় একটা তৃতীয় খন্ডের গঠনটাকে, বিষয় এবং সত্যের সর্ম্পকগুলির মধ্যেকার বিশ্লেষণে যোগ করে, অথবা যথার্থ হতে, কর্মপদ্ধতিগুলির অধ্যায়নে যার মাধ্যমে বিষয়টা সক্ষম হয় সত্যের খেলাগুলিতে একটা বস্তু হিসাবে প্রবিষ্ট হতে।

বিষয় এবং সত্য এর সর্ম্পকগুলিতে এই প্রশ্নটাকে এইসব বিশ্লেষণ এর একটা চালক সূত্র হিসাবে নিলে এটা ইঙ্গিত করে নির্দিষ্টরকমের পদ্ধতির। প্রথমত, একটা পদ্ধতিগত সংশয়বাদীতা সমস্ত নৃ-তাত্ত্বিক (এনথ্রোপলজিক্যাল) সার্বজনীনতার প্রতি - যা বোঝায় না যে তাদের সবকিছুকে একদম প্রথম থেকেই বাতিল করা, সন্দেহাতীতভাবে এবং একবার ও বারবারের জন্য; কিন্তু তার সেই ক্রমের কোনটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য না যা পুরাপুরি অপরিহার্য। এই প্রসঙ্গে মানুষের প্রবৃত্তি বা ক্যাটাগরিগুলি যা হয়তো এই বিষয়ের সাথে জড়িত, আমাদের জ্ঞানে যে সবকিছুকে বলা হয়েছে বৈশ্বিকভাবে সপ্রমাণিত বলে তার সবকিছুকে অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে এবং বিশ্লেষণ করতে হবে। “পাগলামি”, “দুস্কৃতি”, বা “যৌনতার” বৈশ্বিকতাটাকে প্রত্যাখান করাটা ইঙ্গিত করে না যে, এইসব অভিমতগুলির কোন অর্থ নাই, অথবা তাদেরকে বলা হচ্ছে শুধুমাত্র উদ্ভট আবিষ্কার হিসাবে একটা দ্ব্যর্থক কারণ এর জন্যে। যা-ই হোক, এইখানে আরো কিছু জড়িত আছে, সাদামাটা পর্যবেক্ষণ এর চাইতে যে তাদের আধেয় সময় এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ভিন্ন: এটা বোঝায় যে একজন অবশ্যই অনুসন্ধান করবে শর্তগুলিকে যা মানুষজনকে সক্ষম করে, সত্য এবং মিথ্যা বিবৃতির নিয়মগুলির প্রেক্ষিতে, চিহ্নিত করার একটা বিষয় মানসিকভাবে অসুস্থ অথবা স্থির করা যে একটা বিষয় কবুল করে যে তার মধ্যে সবচে মৌলিক অংশ হচ্ছে তার যৌন বাসনার ক্রিয়াপদ্ধতি। সুতরাং এই ধরনের কাজে পদ্ধতির প্রথম নিয়মটা হচ্ছে: যতদূর সম্ভব, বৈশ্বিক নৃতাত্ত্বিকতাকে পাশ কাটানো (এবং, অবশ্যই সেইধরণের একটি মানবতাকে যা ঘোষণা করে অধিকারগুলি, বিশেষাধিকারগুলি এবং একজন মানুষের প্রবৃত্তিকে বিষয়ের একটা তাৎক্ষণিক ও সময়হীন সত্য হিসাবে) তাদেরকে ঐতিহাসিক নির্মাণগুলি হিসাবে পরীক্ষা করার জন্য। একজন অবশ্যই আরো উল্টে দেবে সামনের দিকে আগানোর দার্শনিক পথকে বিষয়টির নির্মাণের সাথে যা চাওয়া হয় সাধারণভাবে জ্ঞানের প্রতিটি সম্ভাব্য বস্তুগত দিকের জন্যে। অন্যদিক দিয়ে, এটা হচ্ছে পিছনের দিকে যাওয়ার মতো একটা ব্যাপার সুনির্দিষ্ট অনুশীলনগুলিকে পাঠ করার জন্য যার মাধ্যমে বিষয়টি একটি জ্ঞানের ব্যাপ্ত এলাকায় গঠিত হয়েছে। এইখানেও, একজনকে অবশ্যই সাবধান হতে হবে: সেই দার্শনিকতার আশ্রয় নেওয়াটাকে অস্বীকার করতে হবে যা একটি গঠনকারী বিষয় নয় যা মনে করে যেন বিষয়টা বাস্তবে অবস্থান করতো না, তার একটা বিমূর্তায়ন তৈরী করা একটা শুদ্ধ বস্তুনিষ্ঠতার উপর ভর করে। এই অস্বীকার করাটার লক্ষ্য হচ্ছে প্রক্রিয়াগুলিকে টেনে বের করা একটা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে যা বিশিষ্ট, যার ভিতর বিষয়টা এবং বস্তুটা “তৈরি হয়েছে এবং পরিবর্তিত হয়েছে” তাদের সর্ম্পকে এবং তাদের পরস্পরের প্রেক্ষিতে। মানসিক অসুস্থতা, দুস্কৃতি বা যৌনতার ডিসকোর্সগুলিতে বলা যাক যা বিষয়, তা কি শুধুমাত্র একটা নিশ্চয়তা, সত্যের খেলার ভিতর যথেষ্ট নির্দিষ্ট; কিন্তু এই খেলাগুলি বিষয়টার উপর বাইরের থেকে চাপিয়ে দেয়া নয় যা একটা প্রয়োজনীয় কার্যকারণ অথবা গঠনতাত্ত্বিক স্থিরকরণ। তারা উন্মুক্ত করে অভিজ্ঞতার একটা জায়গা যার ভিতর বিষয়টা আর বস্তুটা উভয়েই তৈরি হয় শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটা আবশ্যিক যুগপৎ শর্তাবলীতে, কিন্তু যার ভিতর তারা সবসময় বদলাচ্ছে পরস্পরের সাপেক্ষে এবং তাই তারা বদলাচ্ছে অভিজ্ঞতার সেই ক্ষেত্রটাকেও, একইসাথে।

অদ্যাবধি পদ্ধতির একটা তৃতীয় সূত্র: “অনুশীলনগুলি"কে দেখেছে বিশ্লেষণ এর একটা এলাকা হিসাবে, কি “করা হয়েছে” এই দিক দিয়ে পঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। উদাহারণস্বরূপ, পাগল, দুস্কৃতি এবং অসুস্থ লোকদের প্রতি কি করা হয়েছে? একজন অবশ্যই চেষ্টা করতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনুমান করার যার ভিতর তারা স্থাপিত এবং যে আচরণগুলির প্রতি তারা বিষেশায়িত ধারণাগুলি থেকে যা মানুষজনের আছে তাদের সর্ম্পকে, অথবা জ্ঞান যা মানুষজন বিশ্বাস করে যে তাদের আছে তাদের সর্ম্পকে। একজন আরো দেখতে পারে গঠিত হওয়াটা “সত্যিকারের” মানসিক অসুস্থতাগুলি এবং বাস্তব দুস্কৃতির ক্রিয়াপদ্ধতিগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর ব্যাখ্যা করার জন্য যে তাদের সর্ম্পকে কি ভাবা হতো ঐ সময়ে। জিনিসগুলির প্রতি মিশেল ফুকোর প্রস্তাবনাগুলি একদমই ভিন্ন রকমের। তিনি প্রথমে পাঠ করেন কম বা বেশি নিয়ন্ত্রণের সামগ্রিকতাকে, কম বা বেশি বিবেচনাকে, কম বা বেশি চূড়ান্ত করা জিনিসগুলিকে করার পথগুলিকে, যার ভিতর দিয়ে উভয়েই দেখা যাবে যা বাস্তব হিসাবে তৈরি হয়েছে তাদের জন্য যারা অন্বেষণ করতে চায় এটাকে চিন্তা করার এবং নিয়ন্ত্রণ করা এবং যার ভিতর দিয়ে পরেরটা নিজেদেরকে তৈরি করে বিষয় হিসাবে সমর্থ করতে জানার, বিশ্লেষণ করার এবং শেষ পর্যন্ত পরিবর্তন করতে বাস্তবকে। এই হচ্ছে “অনুশীলনগুলি”, যাকে বোঝা যায় একইসাথে কাজ করার এবং চিন্তা করার মাধ্যমে, যা দেয় পরস্পর সর্ম্পকযুক্ত শাসনতন্ত্রের বিষয় এবং বস্তুর বোধগম্য চাবিটাকে।

এখন, যেহেতু ব্যাপারটা হচ্ছে বিষয়টার বিভিন্ন রকমের বস্তুকরণকে পাঠ করার যা দৃশ্যমান হয় এইসব অনুশীলনগুলির মাধ্যমে, একজন বুঝতে পারবে ক্ষমতা-সর্ম্পকগুলিকে বিশ্লেষণ করাটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু দরকার স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যে এই ধরণের বিশ্লেষণ কি হতে পারে এবং কি করার আশা করে। অবশ্যই এটা “ক্ষমতা"কে তার উৎস এর প্রেক্ষিতে, এর নীতিমালার সাপেক্ষে, বা তার আইনগত সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে পরীক্ষা করা না, বরং পর্যবেক্ষণ করা পদ্ধতিগুলি এবং কৌশলগুলি বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রেক্ষিতগুলিতে ব্যক্তিবিশেষের উপর তা কিভাবে ক্রিয়া করে আলাদাভাবে অথবা একটা গ্র“পে, সেইভাবে রূপ নেয়, চালিত হয়, বদলায় তাদের নিজেদের আচরণের উপায়গুলি, নিজেদের নিস্ক্রিয়তার উপর সমাপ্তিগুলি চাপিয়ে দেয় অথবা সার্বিক স্ট্রাটেজীগুলির সাথে মানানসই করে তোলে, যেইগুলি পর্যায়ক্রমে বহুবিধ হয়ে উঠে, তাদের রূপগুলির মধ্যে এবং তাদের অনুশীলনের জায়গায়; নানারকমও হয়ে উঠে, যে কার্যপ্রণালী এবং তারা নিয়ে আসে খেলার ভিতরে। এই ক্ষমতা সর্ম্পকগুলি বিশিষ্টতা প্রদান করে কোন পদ্ধতিতে মানুষ “শাসিত” হবে একজন আরেকজনের দ্বারা; এবং তাদের বিশ্লেষণ দেখায় কিভাবে, “শাসনক্ষমতা”র নির্দিষ্ট রূপগুলির মাধ্যমে, পাগলমানুষগুলি, অসুস্থ মানুষ, অপরাধীরা এবং এইরকমগুলির মাধ্যমে, পাগলটি, অসুস্থটি, দুস্কৃতিটি বিষয় হিসাবে বস্তুকৃত হয়। সুতরাং এই ধরণের একটি বিশ্লেষন বোঝায় না যে এইটা ক্ষমতার একটা অথবা অন্যটার অমর্যাদা যা সৃষ্টি করছে পাগলমানুষ, অসুস্থ মানুষ অথবা অপরাধীদের যেখানে কিছ্ইু নাই, বরং অনেকরকম এবং নির্র্দিষ্টরকম “শাসনতন্ত্র” এর রূপগুলি যেখানে ব্যক্তিবিশেষেরা নির্ধারক বিষয়ের বিভিন্নরকমের বস্তুকরণ এর পদ্ধতিগুলির।

একজন দেখতে পাবে কি করে “যৌনতার ইতিহাস” এর বিষয়বস্তুটা মিশেল ফুকো’র সাধারণ প্রকল্পের সাথে মিলে যায়। এইটা হচ্ছে “যৌনতা"কে একটা ঐতিহাসিক অনন্য অভিজ্ঞতার উপায় হিসাবে বিশ্লেষণ করা যেখানে বিষয়টা বস্তুকৃত হচ্ছে নিজের জন্যে এবং অন্যদের জন্য “শাসনতন্ত্র” এর নিশ্চিত সুনির্দিষ্ট ক্রিয়াপদ্ধতির ভিতর দিয়ে অন্যদের জন্যে ।



বাংলা অনুবাদের নোট:

প্রথমত, আমার ফুকো পড়ার অভিজ্ঞতা থিকা মনে হৈছে যে, ফুকো সর্ম্পকে জানতে হৈলে এইটা হচ্ছে সবচে সংক্ষিপ্ত এবং রিলেভেন্ট একটা লিখা। ফুকো’র একটা দার্শনিক জীবনী, যার ভিতর তার চিন্তার মূলধারণাগুলিকে তিনি নিজে বলার চেষ্টা করছেন। ফুকোর ব্যক্তিগত জীবন নিয়া যেমন বহু কথা চালু আছে, যেহেতু তিনি সমকামী ছিলেন এবং এইডসে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়; তেমনি তার কাজ-কর্ম নিয়া সবচে’ প্রচলিত যে ধারণাটা আছে, তা হৈতেছে, তার কথা-বার্তা বোঝা যায় না। সম্ভবত তার সবচাইতে দুর্ভাগ্য সম্ভবত এইটাই যে, তার কাজের উল্লেখযোগ্য কোন বিশ্লেষণ তার সময়ে দাঁড়ায় নাই।

বাংলাভাষায় ফুকোরে নিয়া বেশ কয়েকটা বই বের হৈছে। কিছু আলোচনাও হৈছে আর এইক্ষেত্রে বলা যায় পারভেজ হোসেন সম্পাদিত “ফুকো: পাঠ ও বিবেচনা” (২০০৭) বইটা বাংলাভাষায় এ যাবতকালে সমস্ত ফুকো-আলোচনার একটা সংকলন। কিন্তু আলোচনার তুলনায় ফুকোর লেখাপত্র বাংলাভাষাতে অনুবাদ-প্রচেষ্টা খুব একটা আমার চোখে পড়ে নাই। সম্প্রতি, ফুকোর ডিসিপ্লিন এন্ড পানিশ এর বাংলা অনুবাদ দেখতেছি। নিঃসন্দেহে এইগুলি একটা ভালো প্রচেষ্টা। কারণ, অনুবাদের মাধ্যমেই এই চিন্তাগুলিকে বাংলাভাষাতে নিয়া আসা সম্ভব। তারপর আসে তাকে গ্রহণ-বর্জন, আলোচনা-সমালোচনা’র প্রশ্নটা। অনুবাদ না কৈরা যে সেটা সম্ভব না, ঘটনাটা তা না, কিন্তু অনুবাদই এই বিষয়টাকে আরো বেশি করে সম্ভব করে তোলে। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, আমাদের কয়েকজন এক্সপার্ট লোকের দরকার নাই, যারা অন্যদের কথার ব্যাখ্যাগুলি আমাদের জন্য বলে দিবে, বরং দরকার একটা ব্যবহারকারী দল, যারা বিষয়গুলিকে চর্চা করবে।

এই লিখাটা ডেনিস হুইসম্যান সম্পাদিত ডিকশনারি ডি ফিলসফিস নামের একটি সংকলনে প্রথম ছাপা হয় । আশির দশকের প্রথমদিকে হুইসম্যান বইয়ের নতুন এডিশনের জন্য ‘ফুকো’ এন্ট্রিটা এডিট করে দেয়ার জন্য ফ্রান্কোস ইল্যুায়ড কে বলেন। ফ্রান্কোস ইল্যুায়ড তখন ছিলেন কলেজ ডি ফ্রান্স এ ফুকো’র সহকারী। শেষে হুইসম্যানকে যেটা পাঠানো হয়, তার পুরোটাই ছিল ফুকো’র নিজের লেখা এবং স্বাক্ষর করা হয় একটা ছদ্মনাম
Maurice Florence বলে। বলা হয়, তার হিস্ট্রি অফ সেক্সুয়ালিটির একটা ভূমিকা হিসাবে তিনি এটা লিখছিলেন।

বাংলা অনুবাদ নেয়া হৈছে, রবার্ট হার্লি’র ফরাসী থেকে করা ইংরেজী টেক্সট থেকে। পাওয়া যাবে, পেঙ্গুইন বুকস এর মিশেল ফুকো’র এসেনশিয়াল ওয়ার্কস অফ মিশেল ফুকো (১৯৫৪-১৯৮৪) দ্বিতীয় খন্ড; এসথেটিকস (মেথডোলজি এন্ড এপিস্টোমোলজি) এর পৃষ্টা: ৪৫৯-৪৬৩ তে।

লিখাটা এমনিতেই বেশ খটোমটো। ইংরেজীতে দীর্ঘ দীর্ঘ বাক্য ছিল। আমার যতটুক ক্ষমতা (অ-ক্ষমতাও একইসাথে) তা দিয়া চেষ্টা করছি।
আর ফুকোর উদ্ধৃতি দুইটা লিখার অংশ না, বাংলা-অনুবাদের উদ্দেশ্যের সাথে প্রাসঙ্গিক মনে কৈরা টুকে দেয়া হৈলো। এই বাংলা অনুবাদ এই বইয়ের আগে অন্য কোথাও প্রকাশিত বা প্রচারিত হয় নাই। বিষয়টা এইরকম না যে, এইখানে ভাষাটা খুব জটিল বা ধারণাগুলি খুব জটিল, বরং যে সমস্যাটার কথা বলা হচ্ছে, আমার ধারণা তার প্রকৃতিটাই জটিল, তাই তাকে এড়ানোটার মানে হচ্ছে সমস্যাটাকেই ভুলভাবে বলা।

No comments: